১০টি বিমান সংস্থার রাজস্ব ফাঁকির খোঁজে ভ্যাট গোয়েন্দা

১০টি বিমান সংস্থার রাজস্ব ফাঁকির খোঁজে ভ্যাট গোয়েন্দা।

সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় ও পরিশোধে ফাঁকি দিচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ে প্রায় ১২০টি বড় প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির নির্দেশে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এসব প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করতে প্রায় ২০টি টিম গঠন করেছে। নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া নিরীক্ষা করা হবে।
সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের তালিকা এনবিআরে পাঠিয়েছে। এছাড়া আনোয়ার গ্রুপ ও ইফাদ গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠান, ৩৫টি শীর্ষ আবাসন কোম্পানি, আটটি শীর্ষ ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি, মিনিস্টার, র‌্যাংগসসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
তথ্যমতে, নিরীক্ষা তালিকায় রয়েছে ১০টি এয়ারওয়েজ। এগুলো হলো-এমিরেটস এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া, টার্কিশ এয়ারলাইনস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, সৌদিয়া এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস, জেট এয়ারওয়েজ, টাইগার এয়ার ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। পিএইচপি গ্রুপের পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস লিমিটেড, পিএইচপি ফ্লোট অ্যান্ড ল্যামিনেশন লিমিটেড, পিএইচপি পেট্রো রিফ লিমিটেড ও পিএইচপি নোফ কন্টি গ্যালভানাইজিং মিলস লিমিটেড।
নিরীক্ষা তালিকায় থাকা ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়া ইফাদ গ্রুপের ইফাদ এন্টারপ্রাইজ, ইফাদ অটোস লিমিটেড, ইফাদ আইটি ও ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড, প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেডের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়ার তিনটি প্রতিষ্ঠানও নিরীক্ষা করা হবে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রংপুর ফাউন্ড্রি, প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, প্রাণ ফুডস, বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের বিভিন্ন ইউনিট, প্রাণ-আরএফএল প্লাস্টিক ও প্রাণ-আরএফএল এক্সপোর্ট লিমিটেড। এছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপের আবুল খায়ের স্টিল, আবুল খায়ের টোব্যাকো, আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্ক, আবুল খায়ের বেভারেজ, শাহ ডেইরি প্রোডাক্ট, স্কার্ক কোকোনাট অয়েল, একে ফুড, একে প্রপার্টিজ লিমিটেড, কুমিল্লার আবুল বিড়ি, আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ফেনীর আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরি ও আবুল খায়ের স্টেপ প্রসেসিং লিমিটেড নিরীক্ষা করা হবে। চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের কে ওয়াই স্টিল মিলস লিমিটেড ও কেওয়াইসিআর কয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডও রয়েছে এ তালিকায়।
এদিকে গাজী গ্রুপের গাজী ট্যাংকস লিমিটেড, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশ, পারটেক্স গ্রুপের আম্বার পাল্প অ্যান্ড পেপার ও আম্বার বোর্ড মিলসের পাঁচ বছরের ভ্যাটের হিসাব খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া নিরীক্ষা তালিকায় থাকা সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রাউন সিমেন্ট লিমিটেড, নিটল সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড ও রয়েল সিমেন্ট লিমিটেড।
দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পগ্রুপগুলোর মধ্যে স্কয়ার গ্রুপের স্কয়ার এগ্রোভেট ডিভিশন, সুপার স্টার গ্রুপের সুপার স্টার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, মেঘনা গ্রুপের মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, আকিজ গ্রুপের আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি ও কেএসআরএম স্টিল প্ল্যানেট লিমিটেড নিরীক্ষা করা হবে। এ তালিকায় রয়েছে কেব্ল কোম্পানির মধ্যে পলি কেব্লস, এস কিউ কেব্লস, বাংলাদেশ কেব্লস লিমিটেড ও বিঅ্যান্ডটি কেব্ল।
এছাড়া বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড ফার্মা কেমিক্যাল, ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকটার লিমিটেড, মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন কোম্পানি, প্রমী এগ্রো ফুডস লিমিটেড, সুপার ফরমিকা অ্যান্ড ল্যামিনেশন লিমিটেড, তানজিম প্যাকেজিং, এমবিয়েন্ট স্টিল রি-রোলিং মিলস, ফাইবার হোম লিমিটেড, বঙ্গ বেকার্স লিমিটেড, কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড, কিষোয়ান কনজুমার প্রোডাক্টস, ইউনি ফুড প্রোডাক্টস, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজ লিমিটেড, লিংক-৩ টেকনোলজি লিমিটেড, ইটস ল্যাবটেস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্যুরো ভেরিতাস লিমিটেড, রাজশাহীর ওমর আল, ক্রিয়েটিভ পেপার মিলস, উত্তরা মোটরস লিমিটেডের বরিশাল ও রংপুর শাখা, বগুড়া মোটরস লিমিটেড, সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড, ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বগুড়ার ফুড ভিলেজ, গাজীপুরের দ্য মার্চেন্ট লিমিটেড, কুমিল্লার পিইবি স্টিল অ্যালায়েন্স, পিডি লাইট স্পেশালিটি কেমিক্যালস বিডি প্রাইভেট লিমিটেড, সিলেটের এলপি গ্যাস, চট্টগ্রামের প্রোডিউস ওয়্যার হাউজ লিমিটেড, আর আর ইম্পেরিয়াল ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড, রংপুরের প্রাইম পুষ্টি লিমিটেড, মুন্সীগঞ্জের সুপ্রিম ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড ও খুলনার চরকা এসপিসি পোলসের হিসাব খতিয়ে দেখা হবে।
বিড়ি কোম্পানির মধ্যে কুষ্টিয়ার কালাম বিড়ি ফ্যাক্টরি ও জাকির জর্দা ফ্যাক্টরি, পিরোজপুরের আলম বিড়ি ফ্যাক্টরি, খুলনার গোপাল বিড়ি ফ্যাক্টরি ও সোনালী বিড়ি ফ্যাক্টরি এবং পটুয়াখালীর পানজা বিড়ি ফ্যাক্টরি রয়েছে নিরীক্ষা তালিকায়। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিটিআরসি, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, গণপূর্ত অধিদফতর, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, ইস্টার্ন রিফাইনারি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ভ্যাটের তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি টিমে একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে নিরীক্ষা চলছে। আদেশ জারির এক মাসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া, সরবরাহ, মজুদ পণ্য ও সেবা, উপকরণ পরিদর্শন, প্রতিষ্ঠানগুলোর মূসকসংক্রান্ত যাবতীয় দলিল, বাণিজ্যিক দলিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রতিষ্ঠানের ক্রয় হিসাব, মূল্য ঘোষণাপত্র, বিক্রয় হিসাব পুস্তক, চলতি হিসাব পুস্তক, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় হিসাব বিবরণী যাচাই, ব্যাংক লেনদেন এবং অডিট রিপোর্ট যাচাই করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান বিগত পাঁচ বছর কী পরিমাণ ভ্যাট প্রদান করেছে, কোন কোন উৎস থেকে ভ্যাট দিয়েছে, তা নিরীক্ষা করা হবে। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আমদানি-রফতানি, স্থানীয় ক্রয়সংক্রান্ত হিসাবের কাগজপত্র, প্রাসঙ্গিক দলিল, যাচাইপূর্বক সম্ভাব্য ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিহার করে বছরভিত্তিক ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হবে। তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এর আগেও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময় ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, নিরীক্ষার জন্য প্রায় ১২০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। ৩৫টি শীর্ষ আবাসন কোম্পানি ও আটটি শীর্ষ ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান কম ভ্যাট পরিশোধ করেছে বা ফাঁকি দিয়েছে, তা বেরিয়ে আসবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.