কার্গো নিরাপত্তাঃ বাংলাদেশের সাফল্য রোল মডেল মনে করে এভিয়েশন বিশ্ব

কার্গো নিরাপত্তাঃ বাংলাদেশের সাফল্য রোল মডেল মনে করে এভিয়েশন বিশ্ব

কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্যকে অনুকরণীয় হিসেবে দেখছে এভিয়েশন বিশ্ব। মাত্র দু’বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন এ ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রশংসনীয় ও আলোচিত। গত সপ্তাহে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বের শীর্ষ ৩৮ দেশের এক সেমিনারে উপস্থিত ডেলিগেটদের মুখে উচ্চারিত হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রফতানি কার্গোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। গত ৫ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল এভিয়েশন সিকিউরিটি’ শীর্ষক এই সেমিনারে বাংলাদেশের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। সেখানে বাংলাদেশ টিমকে নেতৃত্ব দেন সিভিল এভিয়েশনের মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান। টিমের অপর দুই সদস্য ছিলেন, শাহজালালের এভসেক পরিচালক উইং কমান্ডার নূরে আলম সিদ্দিকী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার। সেমিনারে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের আলোচিত এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান কার্গো নিরাপত্তার নিষেধাজ্ঞা থেকে কিভাবে দ্রুততম সময়ে এ সঙ্কট উত্তরণের সুবিস্তৃত চিত্র উপস্থাপন করেন। বৈঠকে অংশ নেয়া একজন প্রতিনিধি জনকণ্ঠকে জানান, মূলত ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার শীর্ষ দেশগুলোর বিমানবন্দরের কার্গো নিরাপত্তার সর্বশেষ পরিস্থিতি মূল্যায়ন, ব্যর্থতা, সফলতা ও আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ২০১৫ সালে মিসরের শার্মালে একটি উড়োজাহাজ বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতে এভিয়েশন বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। কদিন পর ২০১৬ সালের মার্চে বাংলাদেশসহ ১৯টি দেশের কার্গোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় দেখা দেয়। এ সঙ্কট উত্তরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। যুক্তরাজ্যের ডিএফটি-এর আরোপিত শর্ত অনুযায়ী রেডলাইন নামের একটি নিরাপত্তা কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। রেডলাইনের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা টানা দু’বছর ঢাকায় অবস্থান করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও সরঞ্জামাদি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ অনুসারে, যুক্তরাজ্যের বেসরকারী সংস্থা রেডলাইন সিকিউরিটিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতকরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর যুক্তরাজ্য একের পর এক শর্তারোপ করতে থাকে। যুক্তরাজ্যের পরামর্শ অনুযায়ী বিমানবন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর হয়। এ কঠিন দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর। যিনি দিনরাত অফিস করে নিরলস প্রচেষ্টায় একের পর এক শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি যেমন- উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারি ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ডব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, লিকুয়িড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস), ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) প্রতিস্থাপন করেন। তার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতায় দ্রুত আকাশপথে এ সব ইকুইপমেন্ট আমদানি করে কার্গোকে আধুনিকায়ন করা হয়। এভাবে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরই যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় গত বছরের মার্চে। এখন কার্গোর রমরমা অবস্থা। এতে বিমানসহ অন্য এয়ারলাইন্সের রাজস্ব বেড়েছে বহুগুণে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.