স্বদেশ যাত্রা।
দেশে যাব, দেশে যাব—এমন একটা মন উতলা অনুভূতি, আর উড়ুক্কু মন নিয়ে সেই নভেম্বর থেকেই একটা চাপা উত্তেজনায় দিন কাটাচ্ছিলাম। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনেরা উপদেশ দিল এখন নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচনটা হয়ে যাক, তারপর না হয় এসো। বলা তো যায় না, কী হয়, না হয়…! তারা কেউই আর পুরো বাক্য শেষ করে না। আমিও আর পুরোটা শুনতে চাই না। আচ্ছা, নির্বাচনটা না হয় হয়েই যাক; দেশে শান্তি, আর স্বস্তির হাওয়া প্রবাহিত হোক। দেশে গিয়ে যেন দেশবাসী সবারই হাসিমুখ দেখতে পাই; আমিও যেন মনের আনন্দে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে পারি।
ডিসেম্বর গেল। নির্বাচনের ভোটাভুটিও শেষ হলো। আমিও যাওয়ার জন্য মনস্থির করে টিকিট অনুসন্ধান শুরু করলাম। আমার দুই ছেলেকে বললাম, ‘বাবারা, আমার এবারের দেশ ভ্রমণের ব্যয়টা তোমাদের যেকোনো একজনকে স্পনসর করতে হবে। কারণ, তোমাদের বাবা আগেই আত্মসমর্পণ করে বসে আছেন।’ স্বামী ভদ্রলোক ইতিমধ্যেই নিজেকে পুরোপুরি দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। আমার গত বছরের বাংলাদেশ ও ভারত ট্রিপটা তিনিই স্পনসর করেছিলেন বিধায়, এবারের ট্রিপে তাঁর আর তেমন কোনো গরজ নেই। যেহেতু এবার উনি নিজেও যাবেন না বলে মনস্থির করেছেন, তাই আমার যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না।
এই সংবাদে বড় ছেলে সুমিত জোরেশোরে ঘোষণা দিল, ‘কই বাত নেহি! আই’ওল গিভ ইউর টিকিট মম।’ ছেলে আমার বড়ই দিলদরিয়া। কোনো কিছু দেওয়ার ঘোষণা দিতে একটুও দ্বিধা করে না। তার নিজের পকেট গড়ের মাঠ হলেও সে ধার করে হলেও অন্যের প্রয়োজন মেটাতে দ্বিধা করে না। মনে মনে জানি, আমরা যত দিন বাঁচব, ইনশা আল্লাহ সে এমন অনেক কিছুই করার চেষ্টা করবে আমাদের জন্য। তার পকেটে দশ ডলার থাকলে, বিশ ডলার খরচ করতে সে মোটেই পরোয়া করে না। কিন্তু দেখা গেল আমার ‘ভেনমো’ অ্যাকাউন্টে ঘোষিত ডলার আর জমা হয় না। যতই তাকে মনে করিয়ে দিই, সে ততই বলে, ‘হো যায়েগা মাতাজি, চিন্তা না করে!’ কিন্তু ততই আমার চিন্তা বাড়ে। ভয় হলো, এমনও হতে পারে, তার হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। কিন্তু সে আমাকে ‘না’ বলতেও পারছে না।
অবশেষে একদিন টিকিটের জন্য প্রয়োজনীয় ডলার আমার ‘ভেনমো’ অ্যাকাউন্টে জমা হলো। দুজনের একটি টিকিট কমিটিও গঠন করা হলো। ঠিক হলো, ছোট ছেলে অমিত ও বোনের ছেলে শান্তনু দুজনে মিলে সুলভ মূল্যে ভালো ফ্লাইট পেলেই টিকিট কনফার্ম করবে। ওরা বলল, ‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পরে টিকিটের দাম কমতে শুরু করবে। অতএব তোমার তেমন তাড়া না থাকলে একটু ধীরেসুস্থে, আরামসে যাও’। আমি বললাম, ‘তথাস্তু।’
কিন্তু টিকিটের দাম আর কমে না। অবশেষে খুঁজে পেতে টার্কিশ এয়ারলাইনের টিকিট কাটা হলো। জানা গেল, এই ট্যুর প্ল্যানের আওতায় আমি টার্কিশ এয়ারে চড়ে উড়ে যাব তুরস্কে। সেখানে একজন গাইড আমার জন্য ‘শেলী জামান খান’ নাম লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে অপেক্ষা করবে। তারপর তিনি তাঁর ট্যুর বাস বা কারে করে আমাকে শহর ঘুরিয়ে দেখাবেন। তুরস্কের দর্শনীয় স্থানগুলোর ধারা বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আমার ফটোগ্রাফার হিসেবেও কাজ করবেন। এভাবে তুরস্কের সময় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিভ্রমণ শেষ হলে ওই গাইড আমাকে বিমানবন্দরে ড্রপ করে গুডবাই জানাবে।
এরপর আমি হোটেল রুমে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে বিশ্রাম নিতে পারব। খাবার, ঘুম ইত্যাদির পাশাপাশি বিমানবন্দরের লবি, লাউঞ্জে বেড়ানোর সুযোগও মিলবে। ওয়েকআপ কল এলে ফ্রেশ হয়ে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সর্বশেষ গন্তব্য তুরস্ক-টু-ঢাকা ফ্লাইটে গিয়ে উঠে বসব।
পুরো ট্যুর প্ল্যান শুনে আমার তো চক্ষু চড়ক গাছ। ও মা, তাই তো; আমি তো এখন নেহায়েত একজন ঝাড়া হাত-পা। ‘কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা’ টাইপ মানুষ। নিজেকে ছোটখাটো উদীয়মান এক লেখকও দাবি করতে পারি। আজীবন যাদের ‘পায়ের তলায় সরষে’ লাগানো থাকে তাদেরকে দূর থেকে হিংসা করেছি। খুব খুশি মনেই প্ল্যান রচনাকারীকে বুড়ো আঙুল দেখালাম। তারপর মনে মনে তুরস্কে খণ্ডকালীন ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। কিন্তু হায়, বিধিবাম। পরদিনই জানা গেল, টিকিট কাটার সময় টার্কিশ এয়ারলাইনস লম্বা ২০ ঘণ্টার ট্রানজিটের যে রাজকীয় হোটেলের প্রলোভন দেখিয়েছিল, তা আর পাওয়া যাচ্ছে না। এই খবরে আমার মন খারাপের চূড়ান্ত। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নগর পরিভ্রমণ শেষে আরও ঘণ্টা ছয়েক বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বসে কাটিয়ে দেওয়ার ধকল নিতে আমার মন চাইল না। মনে মনে যতই নিজেকে ‘ফরএভার টুয়েন্টি ওয়ান’ ভাবি না কেন, শরীর তো ঠিকই জানে বয়স কত। অগত্যা বিদ্রোহী কবির সেই গুপ্ত মন্ত্র ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ মনের গভীরেই সুপ্ত অবস্থায় মারা গেল। টিকিটটি বাতিল করা হলো। শুরু হলো আবার টিকিট খোঁজার পালা। এবার লক্ষ্য আমিরাত এয়ারলাইনস। যদিও টিকিটের দাম টার্কিশের চেয়ে চড়া। সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিটও দেখা গেল তুলনামূলকভাবে কম। এগারো শ ডলার খরচ করে আমিরাতে ভ্রমণেই সায় দিলাম।
দেখতে দেখতে যাত্রার সময় ঘনিয়ে এল। এদিকে নিউইয়র্কের আকাশও ক্রমে থমথমে হয়ে আসছে। দেখা গেল আবহাওয়ার মেজাজ সুবিধের না। মনে একটা শঙ্কা হলো। সময়মতো যাওয়া যাবে তো? আমিরাত থেকেও দফায় দফায় ইমেইল আসতে লাগল। প্রথম নোটিফিকেশন এল উইন্টার স্টর্ম ‘হার্পার’-এর আগমন বার্তা জানিয়ে। আসন্ন তুষারপাতের কারণে যাত্রা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কায় আমিরাত আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠাল। আমিও বারবার আকাশ দেখতে শুরু করলাম। নাহ্, হার্পার সাহেবকে তেমন শক্তিশালী মনে হলো না। যাত্রার সময়ও সমাগত। ‘দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি’; রাত্রির প্রথম প্রহর। সুতরাং নিশ্চিন্তে গোছগাছ শেষে যাত্রার জন্য পোশাক পরে রেডি হব হব করছি, তখনই টুং করে উঠল ইমেইলের নোটিফিকেশন। নাহ্, আমার যাওয়া হবে না আজ। যাত্রা নাস্তি! কিন্তু না; এতে হার্পার সাহেবের কোনো ষড়যন্ত্র নেই। স্বয়ং বিহঙ্গ নিজেই কিছু গোলমাল বাঁধিয়েছেন। বৈদ্য ডেকে তার যত্নআত্তি, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবচ করা হবে। অবশেষে অপেক্ষার ফসল ঘরে এল। পরদিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে সিট রিবুকড হলো। ইনসমনিয়ার রোগী হওয়ায় ভোরের দিকেই ঘুম হয় আমার। তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা কষ্টকর। অগত্যা ৫ মিলিগ্রামের আ্যামবিয়েন সিডেটিভ ট্যাবলেটই ভরসা। ছেলে ও ছেলেদের বাবাকে বলে রাখলাম ওয়েকআপ কল দিতে।
ছোট ভাই বনী তার গাড়ি দিয়ে যথাসময়ে আমাকে তল্পিতল্পাসহ জেএফকে বিমানবন্দরে ড্রপ করল। সঙ্গে অমিত, শাহীন ও রাইসা এসেছে। দেশে যাওয়া বলে কথা। আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য টুকটাক উপহার তো না নিলেই নয়। তাই প্রতিটি স্যুটকেসই কিছুটা ওভার ওয়েট হয়ে গেছে। বোর্ডিং কার্ড হাতে দিয়ে ডেস্কে বসা কৃষ্ণসুন্দরী মালপত্রের ওজন মাপতে মনোযোগী হলেন। দেখা গেল, ৫০ পাউন্ডের দুটো স্যুটকেস, সাত পাউন্ডের ক্যারিঅন সবই কিঞ্চিৎ ওভারওয়েট। গতবারের মতো এবারও আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। ক্যারিঅনসহ তিনটি সুটকেসেই তিনি হাসিমুখে চেকইন ট্যাগ লাগিয়ে বললেন, তোমার ক্যারিঅনে কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস থাকলে, তা হ্যান্ডব্যাগে নাও। তারপর সহাস্য চোখ টিপে যোগ করলেন, ‘নেক্সট টাইম মালপত্র আরও কম আনবে। মনে থাকে যেন।’
এবার সিকিউরিটি চেকিংয়ের পালা। অফিসার পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস চেক করে কিছু একটা লিখে বললেন, সিকিউরিটি অফিসারকে বলবে ‘নো সুজ চেকিং’। আমি আনন্দ চিত্তে হাতের ডাফেল হ্যান্ডব্যাগটা স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানার ট্র্যাকের ওপর বোর্ডিং পাসটি অফিসারের সামনে ধরে বললাম, ‘নো সুজ চেকিং’। আমাকে অবাক করে তিনি বললেন, ‘ওকে গো’। আমি দ্বিধায় পড়লাম। কারণ, কারণ তাঁর আঙুল দেখাচ্ছে বিনা চেকিংয়ে যাওয়ার পথটি। এরপর ফ্লাইটের নির্দিষ্ট গেটের সামনে গিয়ে বোর্ডিংয়ের অপেক্ষা। কিন্তু সে ডাক আর আসে না। আসে না তো আসেই না। জানা গেল, ফ্লাইট ডিলে হবে। অপেক্ষা চলতে লাগল। অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। দুপুর ১টা বেজে গেল। হঠাৎ করেই ঘোষণা এল, দেরির কারণে সব যাত্রিকে লাঞ্চের জন্য কুড়ি ডলারের মিল ভাউচার দেওয়া হচ্ছে। খুশি মনে মিল ভাউচার নিলাম। বোর্ডিং গেটের কাছাকাছি ‘টাইগিনস আইরিশ পাব’ নামের এক রেস্তোরাঁয় গিয়ে বিশ ডলারের একটি মিল অর্ডার করলাম। খাবারের জন্য অপেক্ষার সময় আমার পাশে এসে বসলেন এক বাঙালি ভদ্রলোক। দেখলাম তাঁর হাতেও আমিরাতের মিল ভাউচার। বুঝলাম তিনি আমার সহযাত্রী। তিনিও আমার মতোই সতেরো ডলারের মিলটি অর্ডার করলেন। ওয়েটার চা কফি চাই কিনা জানতে চাইলে, আমি কিছুই না ভেবেই কফি অর্ডার দিয়ে বসলাম। সহযাত্রী দিলেন এক গ্লাস রেড ওয়াইনের অর্ডার। কিছুক্ষণ পর পার্স হাতড়ে দেখি, আমার কাছে এক শ ডলারের নোট ছাড়া কোনো খুচরো নেই। কফির দাম বিশ ডলারে কভার করবে না বলে ভয় হলো। ওয়েটারকে বলতে গিয়ে দেখি, সে এক কাপ ধূমায়িত কফি হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। লজ্জিত হয়ে বললাম, ‘এই মিল ভাউচার ছাড়া আমার কাছে কোনো খুচরো নেই। মিল ভাউচারে কি কফির বিল কভার করবে?’ উত্তর, ‘না’। আমি বললাম, ‘তাহলে আমাকে এক শ ডলারের নোট দিয়ে কফির দাম পরিশোধ করতে হবে, সেটা সম্ভব?’ আমাদের আলোচনার মাঝেই সহযাত্রী ভদ্রলোক বললেন, ‘কিছু মনে না করলে, আমি আপনাকে কফি খাওয়াতে পারি। কারণ, আমার কাছে খুচরো আছে।’ আমি হেসে বললাম, ‘ধন্যবাদ, তাহলে আমি সানন্দে কফি খাব।’ দুজনে খেতে খেতে গল্প শুরু করলাম। উনি আমাকে তাঁর বিজনেস কার্ড দিয়ে বললেন, ‘ঢাকায় গিয়ে কোনো দরকার হলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন, প্লিজ!’ কার্ড পড়ে বুঝলাম, তিনি ঢাকায় কর্মরত একজন হোমরাচোমরা সরকারি চাকরিজীবী। আমি তাঁর কাছে এক কাপ কফির জন্য ঋণী হয়ে রইলাম।
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল। প্রায় ৫ থেকে ১০ মিনিট ওয়ার্মআপের পর ৩টা ৪৫ মিনিটে আমাদের বিহঙ্গ তার পা গুটিয়ে নিয়ে আকাশে ডানা মেলল। উড়াল দিল দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে। আমরা ছাড়লাম নিউইয়র্কের মাটি। প্লেন ধীরে ধীরে তার কক্ষপথে চলতে শুরু করল। আমিরাত সুন্দরীরাও তাদের অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে উঠল। তাদের ট্রলিতে শোভা পাচ্ছে আপেল, কমলা, আমর, আনারস ও টমেটো জুস। রয়েছে কোমল পানীয়; বিয়ার, রেড ওয়াইন, হোয়াইট ওয়াইন; নানা রকমের সোডা; কোক, জিঞ্জারেল, সেভেনআপ, স্প্রাইট ইত্যাদি। এর পর এল ডিনার পর্ব। প্রথমে সার্ভ করা হলো কোশার বা হালাল খাবারের জন্য যারা সাইনআপ করেছে, তাদের ডিনার। এর পর বাকি যাত্রীদের পালা। মেনুতে ছিল দুটি বিকল্প। চিকেন অথবা ভেজিটেবল। আমি চাইলাম ভেজিটেবল। পাশের যাত্রী নিলেন চিকেন। একটি ট্রেতে করে ছোট ছোট পেয়ালায় সাজানো নানা আইটেম। ডেজার্ট ও চা কফির সরঞ্জামও দেওয়া আছে ট্রেতে। শুধু মূল ডিশের জন্যই চয়েস অপশন। বাকি মেনু সবার জন্য একই। সহযাত্রী ভদ্রলোক বাংলাদেশি। বোঝা গেল তাঁর পছন্দের পানীয় রেড ওয়াইন। তিনি পরপর কয়েক গ্লাস রেড ওয়াইন হাপিস করলেন। কিন্তু ক্রমে এই সহযাত্রীর উপস্থিতি আমার যাত্রাপথকে নিরানন্দ ও অস্বস্তিকর করে তুলল। দুর্ভোগের জন্য নিজের ভাগ্যকে অভিসম্পাত দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার রইল না। বিষয় তেমন গুরুতর নয়। কিন্তু আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠল। সহযাত্রীটি নির্বিবাদী মানুষ। নীরবে খাওয়া-দাওয়া সেরে একসময় ঘুমিয়েও গেলেন। আমি নিদ্রাহীনতার রোগী বলে ওনার শ্বাস-প্রশ্বাস ও শরীরের গন্ধে আমার জীবন দোজখময় হয়ে উঠল। মনে মনে প্রার্থনা করলাম, অন্তত দুবাই-ঢাকা কানেকটিং ফ্লাইটে ওনার পাশে যেন আমার সিট না পড়ে। আল্লাহ আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন।
এরপর দুবাই টু ঢাকা ফ্লাইটের গল্প লিখব পরবর্তী পর্বে। কারণ এই ফ্লাইটটি ও আমাদের বিদেশ ফেরত বাংলাদেশি ভাইবোনদের নিয়ে আমার মনে অনেক ভালো-মন্দ কথা জমে আছে। খুব সত্যি কথা হলো, ভালো হোক, মন্দ হোক, কষ্ট হোক অথবা আনন্দময় হোক ‘স্বদেশ যাত্রা’র কোনো তুলনা হয় না। বিদেশ যতই চাকচিক্যময় হোক না কেন, স্বদেশের মানুষ, মাটি, নদী-নালা, আকাশ আর গাছপালার জন্য প্রাণের গহিনে কোথায় যেন গভীর এক মমতা জমা হয়ে থাকে। দেশের কথা মনে হলেই হৃদয়ের উত্তাপে সেই জমাটবাঁধা মমতা গলে গিয়ে বাষ্পীভূত হয়; তারপর অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে!