সন্দ্বীপ মুছাপুর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে শামু
সন্দ্বীপ মুছাপুর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে শামু।
সন্দ্বীপ থানার অন্যতম ইউনিয়ন মুছাপুর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে রয়েছেন তরুণ, শিক্ষিত ও প্রতিভাবান নেতা মাহমুদুর রহমান শামু। সন্দ্বীপের এতিহ্যবাহী আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসাবে শামুর নেতৃত্বে আসা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে সংশ্লিস্টরা মনে করছেন। জানাগেছে, আওয়ামী পরিবারের সন্তান হলেও শামু তৃণমুল থেকে রাজনীতি করে এসেছেন। তিনি একজন ছাত্রসংগঠকও। তৃণমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলররা মনে করেন মুছাপুরকে আওয়ামীলীগের দুর্গ হিসাবে গড়ে তুলতে হলে শামুকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর নিদের্শনাও ইতিমধ্যে সারাদেশের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পৌছে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ত্যাগী, সৎ, যোগ্য ও তরুণ নেতাদের খুজে বের করে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।
আগামী ৬ নভেম্বর মুছাপুরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শামু ছাড়াও এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করার কথা রয়েছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা বেলাল, শাহজাহান বাদশা ও আলতাফের। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা বেলালের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নানা অভিযোগ জমা পড়ায় তার ইমেজ শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে। তাছাড়া সংগঠক হিসাবেও ইউনিয়নের নেতাদের কাছে বেলালের তেমন কোন গ্রহন যোগ্যতা নেই। দীর্ঘদিন এই পদে থেকেও তিনি মুছাপুরে আওয়ামীলীগের অবস্থায় আগের চেয়ে শক্তিশালী করতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ কেন্দ্রীয় আওয়ামীগের দপ্তরে জমা আছে। একারণে তার অবস্থান খুবই দুর্বল। জানাগেছে বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি আওয়ামীলীগের এক সভা থেকে মুক্তিযোদ্ধা বেলালকে বের করে দেয়া হয়েছে।
অপর দিকে আলতাফ সম্প্রতি ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এই অবস্থায় তিনি আবারো ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়াকে নেতাকর্মীরা ভাল চোখে দেখছেন না। এনিয়ে ইতিমধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ নেতা কর্মীরা বলেছেন, এভাবে বার বার পাল্টি খাওয়া নেতারা কোনভাবে দলীয় আস্থাভাজন হতে পারবে না। এদের বিরুদ্ধে এখনই সতর্ক হতে হবে। তা না হলে এরা যে কোন সময় দলও পাল্টে ফেলতে পারে। এসব কারণে আলতাফের অবস্থান তেমন শক্তিশালী নয়।
অপর দিকে শাহজাহান বাদশা যে ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছেন ওই ওয়ার্ড থেকেই নির্বাচন করছেন শামুও। একারণে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শাহজাহান বাদশাকে নিয়ে অন্য চিন্তা করছেন। সন্দ্বীপ থানা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, শামুর বিষয়ে তারা ইতিমধ্যে সব অঙ্গ সংগঠনের কাছে বার্তা পৌছে দিয়েছেন। শামুকেও গ্রীন সিগনাল দিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শামু রাজনীতির শুরু থেকে কোন ধরনের ব্যালেন্স করা ছাড়াই রাজনীতি করে আসছেন। আওয়ামীলীগের জন্য তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ। তিনি নির্বাচিত হলে শুধু মুছাপুরই নয় গোটা সন্দ্বীপ থানা আওয়ামীলীগ উপকৃত হবে। তার মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিভা আছে। রাজনীতিতে তিনি ইতিমধ্যে বেশ ম্যাসিওরিটি অর্জন করেছেন। তৃণমুল নেতাকর্মীরা শামুর প্রতি বেশ আস্থাবান।
এদিকে সন্দ্বীপ থানার একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে থানার সর্বত্র দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালানোর বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে। নেতারা বলেছেন, ইতিমধ্যে সন্দ্বীপের যেসব ইউনিয়নে কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে সেসব নির্বাচন কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তারা বলেছেন, মুছাপুর ইউনিয়নের নেতৃত্ব নির্বাচনেও তাই সব কিছু বিবেচনায় আনা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কাউন্সিলর এই প্রতিবেদককে জানান, মুছাপুরে শামুর পরিবার সম্পুর্ণ পরিক্ষিত আওয়ামীলীগ ঘরনার পরিবার।
শামুর বাবা ছিলেন সন্দ্বীপ থানা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে দলের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা।
কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি বেশ জনিপ্রয় ছিলেন। সন্দ্বীপের বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার বাবা ও সন্দ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাবেক সাংসদ দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধুও ছিলেন শামুর বাবা। তারা দুজনই ছিলেন ক্লাসমেট। এটি শামুকে তার রাজনৈতিক জীবনে বেশ খানিকটা বর্ণাঢ্য করে দিয়েছে। ছাত্রজীবনে শামুর বড় ভাই মিজানুর রহমান মিজান ছিলেন একজন তুখোর ছাত্র নেতা। চট্টগ্রাম জেলার কমার্স কলেজের তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের নির্বাচিত ভিপি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের মধ্যে মিজান ছিলেন অন্যতম। মিজান বর্তমানে থানা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া শামুর অপর ভাই ঢাকার একটি প্রভাবশালী প্রত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে চাকুরী করছেন। সন্দ্বীপের বর্তমান সাংসদ আলহাজ মাহফুজুর রহমান মিতার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
ইতিমধ্যে শামুর সব ভাই ও তাদের পুরো পরিবার শামুর জন্য বিভিন্ন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভ কামনা জানিয়েছেন বলে জানাগেছে। তাছাড়া শামুর বাবা মরহুম মোস্তাফিজুর রহমানের বন্ধু, ছাত্র এবং ঘনিষ্টজনরাই বর্তমানে সন্দ্বীপ থানা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ধারনা করা হচ্ছে আগামী ৬ নভেম্বরের কাউন্সিলে শামু বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।