করোনা নিয়েই ভারতের বিভিন্ন শহর ঘুরেছেন ইতালির পর্যটকরা, আতঙ্ক চরমে
ভারতের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩০ জনে। এর আগে অল্প সংখ্যক ভারতীয়ের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মিললেও সম্প্রতি ভারতে বেড়াতে আসা ইতালির ১৫ জন পর্যটকের শরীরে এই ভাইরাস মেলার পরই সংখ্যাটা এক লাফে বেড়ে যায়। ওই পর্যটক দলটির সঙ্গে থাকা গাড়িচালকের শরীরেও করোনার সংক্রমণ মেলে।
ইতালির পর্যটক দলের সঙ্গে থাকা এক ট্যুর গাইডও করোনায় আক্রান্ত। ওই পর্যটকরা যে তিন-চারটি রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সেখানকার এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। এমন আশঙ্কা করে আরও অন্তত ১০০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, একটি ট্যুর অপারেটর গ্রুপের মাধ্যমে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ১২ দিনের জন্য ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ওই পর্যটকরা। গুজরাট, রাজস্থান ও দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। থাকা-খাওয়া, বেড়ানো মিলিয়ে গত ৯ থেকে ১০ দিনে শতাধিক লোকের সংস্পর্শে এসেছেন তারা। সেই সব হোটেল, রেস্তোরাঁ বা পর্যটনকেন্দ্রের লোকজনেরও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভারতে আসার পর গুজরাটের দ্বারকা নামক এলাকায় বেড়ানোর পর একটি বিলাসবহুল হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তারা। ওই দিনই দ্বারকা থেকে যান রাজস্থানের মান্ডোয়াতে। সেখানকার একটি হোটেলে থেকে পরের দিন মান্ডোয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন। তার পর যান বিকানেরে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকানেরেও জুনাগড় দুর্গ ঘোরার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা করেন। ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের ভ্রমণের তালিকায় ছিল জয়সালমের। জয়সালমের দুর্গ, গাদিসার লেক ঘুরে দেখার পর সেখানেও কেনাকাটা করেন তারা। ২৫ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি জোধপুরের মেহরানাগড় দুর্গসহ স্থানীয় বেড়ানোর জায়গাগুলোতে যান। ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দেখেন উয়পুর সিটি প্যালেস।
ইতালির পর্যটকদের ওই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এক দম্পতি। মূলত তাদের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনাতেই ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ওই পর্যটকরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি জয়পুরে গিয়ে প্রথম কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় পর্যটক দলের উদ্যোক্তার। তাকে ভর্তি করা হয় ফোর্টিস হাসপাতালে। তার স্ত্রী হাসপাতালেই তার সঙ্গে থেকে যান। বাকি পর্যটকরা যান আগ্রায়। পরের দিন ওই ব্যক্তিকে জয়পুরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে ‘আইসোলেশন’ বা আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা আছে। অসুস্থ ব্যক্তির স্ত্রীর করোনাভাইরাস টেস্ট হয়। তবে নেগেটিভ, অর্থাৎ সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
অন্যদিকে, বাকি পর্যটকরা ১ ও ২ মার্চ আগ্রায় তাজমহল ও এর সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। সেখান থেকে তারা পৌঁছে যান দিল্লিতে। ২ মার্চ ওই দলটি দিল্লির জামা মসজিদ, কুতুব মিনার পরিদর্শনের পর একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানেই প্রথম তারা জানতে পারেন করোনা সংক্রমণের কথা। হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জয়পুরে তাদের যে সঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তার দেহে করোনার সংক্রমণ হয়েছে। তাদের বলা হয়, নিজের নিজের ঘরে থাকতে এবং ঘর থেকে না বের হতে। পরের দিন অর্থাৎ ৩ মার্চ তাদের ফেরার টিকিট ছিল। ইতালি ফেরার বিমান ধরতে তারা দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরেও পৌঁছান। কিন্তু সেখানে তাদের আটকে দেওয়া হয়।
করোনার সংক্রমণ সন্দেহে বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়নি বিমাবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় দু’ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকার পর ট্যুর অপারেটর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লির বসন্তকুঞ্জ এলাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে ফিরে আসেন তারা। সেখান থেকে পাঠানো হয় নজফগড়ে আইটিবিপির ‘আইসোলেশন’-এর সুবিধাযুক্ত হাসপাতালে। ৪ মার্চ পরীক্ষায় ধরা পড়ে, জয়পুরে আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রী তো বটেই ওই পর্যটক দলের আরো ১৪ জন করোনা আক্রান্ত। তাদের গুরুগ্রামের মেদান্ত মেডিসিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আবার ট্যুর গাইডের শরীরেও করোনা সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। তিনি চিকিৎসাধীন দিল্লির সফদর জং হাসপাতালে। তবে যাদের সংক্রমণ হয়নি, তাদের ইতালির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ রুখতে বড় জমায়েত বা সমাবেশে নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা। দিল্লির সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিকিমে ভ্রমণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাতাসের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা না থাকলেও সংস্পর্শে এলে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। এই পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর মানচিত্র থেকে স্পষ্ট, বিপুল সংখক লোকজনের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন তারা। পর্যটনকেন্দ্র, বাজারের মতো জনবহুল এলাকায় গিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সেই সংখ্যাটা অন্তত ১০০। তাদের অনেকেই যে সংক্রামিত হতে পারেন, তেমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে ভারতে করোনার সংক্রমণ আরো বড় আকার নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।