ক্যাসিনোতে নতুন বিনিয়োগের কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরির অর্থ ফিলিপাইনে নিয়ে যান সুয়া হুয়া গাও এবং ডিং জি জাই নামের দুই চীনা ব্যবসায়ী। গত মঙ্গলবারের সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে এ তথ্য দিয়েছেন ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন ব্যবসায়ী কিম ওয়ং।
চীনা ওই দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কিম ওয়ং ও রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর পরিচয়, অর্থ লেনদেনের প্রক্রিয়া, ভুয়া ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে অর্থ পাচার—পুরো ঘটনার বর্ণনা শুনানিতে দিয়েছেন ব্যবসায়ী কিম ওয়ং। নিচে তাঁর জবানিতে ঘটনাটি তুলে ধরা হলো।
চীনা ব্যবসায়ী সুয়া হুয়া গাওকে আমি চিনি অনেক দিন। আট বছর তিনি ক্যাসিনোর জাংকেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। সোলাইরি ক্যাসিনোতে গাও অনেক জুয়া খেলেছেন। এমনকি এক দানে ৪৫ কোটি পেসো হেরে যাওয়ার ঘটনাও আছে।
২০১৫ সালের কোনো এক সময় আমার মাধ্যমে মায়া সান্তোস দেগুইতোর সঙ্গে সুয়া হুয়া গাওয়ের পরিচয় হয়। ফিলিপাইনে ব্যবসা করতে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য গাও আমার সাহায্য চাইলে মায়ার সঙ্গে আমি তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিই। গাও আরসিবিসিতে একটি করপোরেট ডলার হিসাব খুলতে চাইলে মায়া তাঁকে জানান, এমন হিসাব খুলতে পাঁচজন আলাদা ব্যক্তির নামে হিসাব খুলতে হবে। পাঁচজন ব্যক্তি জোগাড় করা গাওয়ের পক্ষে কঠিন হওয়ায় তিনি মায়াকে বিষয়টি সমাধানে অনুরোধ করেন। এরপর মায়া নিজেই ভুয়া তথ্য ও নথি দিয়ে গাওকে করপোরেট হিসাব খুলতে সহায়তা করেন।
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬—সুয়া হুয়া গাও ও মায়া সান্তোস দেগুইতো মাইডাস হোটেল ও ক্যাসিনোতে আমার কার্যালয়ে দেখা করেন। সেখানে কথোপকথনের একপর্যায়ে মায়া সান্তোস তাঁর ব্যাংকে পাঁচটি ভুয়া ব্যাংক হিসাব যে খোলা হয়েছে, সেটি গাওকে জানান। তাঁদের কথোপকথন অনুযায়ী, পাঁচটি হিসাব খোলার পর সেখানে প্রাথমিক জমা হিসেবে ২ হাজার ৫০০ ডলার জমা করা হয়।
গাও আমাকে বলেন, ম্যাকাওয়ে ক্যাসিনোর ব্যবসা ভালো চলছে না। গাওয়ের মতো আরও কয়েকজন আছে, যারা ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে বিনিয়োগ করতে চায়। একই দিন ডিং জি জাই নামের ম্যাকাওয়ের আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গেও আমার কথা হয়।
সুয়া হুয়া গাও ও ডিং জি জাই আমাকে সোলাইরি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে দেখা করতে বলে জানান, ক্যাসিনোতে বিনিয়োগের অর্থ সেখানে রেমিট্যান্স হিসেবে জমা হবে। এরপর আমি মায়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করি, আরসিবিসির হিসাবে অর্থ এসেছে কি না।
ওই দিন বেলা একটার সময় মায়া আমাকে ফোন করে জানান, ৬০ লাখ ডলার হিসাবগুলোতে এসেছে। এরপর আবারও ফোন করে তিনি ৩ কোটি ডলার এবং এর পরবর্তীকালে জমা হওয়া অর্থের তথ্য আমাকে জানান। আমি তাঁকে অর্থ নিয়ে সোলাইরি ক্যাসিনোতে আসতে বলি।
৫ ফেব্রুয়ারি—ডিং জি জাই সোলাইরি ক্যাসিনোতে আসেন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যে কনকন বাতিস্তা নামের এক ব্যক্তি সেখানে ৮ কোটি ফিলিপিনো পেসো নিয়ে আসেন। একই সময়ে মায়া সান্তোস আরও ২ কোটি পেসো নিয়ে সোলাইরিতে জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। ৮টা ৫ মিনিটে সব অর্থ জমা করার কাজ শেষ হয়। অর্থ জমার রসিদের একটি ছবি তুলে আমি সেটা জাংকেট অপারেটরের কাছে জমা দিই। এরপর কনকন, মায়া ও আমি একটি কোরিয়ান রেস্তোরাঁয় খেতে যাই।
৯ ফেব্রুয়ারি—আমি কনকন বাতিস্তার বাসায় আরও ১০ কোটি পেসো এবং ৩০ লাখ ডলার আনতে যাই।
১০ ফেব্রুয়ারি—আরও ১০ কোটি পেসো ও ২০ লাখ ডলার বাতিস্তার বাসা থেকে নিয়ে আসি।
১৪ ফেব্রুয়ারি—নতুন আরও ১০ কোটি পেসো বাতিস্তার বাসা থেকে নিয়ে আসি। তিন দিনে আনা মোট ৩০ কোটি পেসো সোলাইরির জাংকেট অপারেটরের কাছে জমা দেওয়া হয়। জাংকেট অপারেটর এর মধ্য থেকে ৫০ লাখ ডলার নিতে চাইলে আমি রাজি হইনি। কারণ, এটা চুক্তির অংশ ছিল না। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়াই জাংকেট অপারেটর ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার তুলে নেয়। আর বাকি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার আমার কাছে থেকে যায়। আমি এই অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে ফেরত দিতে চাই। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এখানে আছেন। তাঁর কাছে যদি কোনো বাক্স থাকে, তাহলে সেখানে এ অর্থ আমি রাখতে পারি।
আরও খবর