কোরিয়ান টেকনোলজিকে যেসব সেক্টরে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

kuriaমাঈনুল ইসলাম নাসিম : আইটি সেক্টর ছাড়াও রিমোট এরিয়াতে মোবাইল নেটওয়ার্কিং, সোলার এনার্জি, কনস্ট্রাকশান এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সহ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে দক্ষিণ কোরিয়ার এডভান্সড টেকনোলজিকে বাংলাদেশে কাজে লাগাতে দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিউলে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। ৮ এপ্রিল শুক্রবার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কোরিয়ান যেসব উন্নত প্রযুক্তি বাংলাদেশে কাজে লাগাবার আয়োজন চলছে তার বিশদ বিবরণ দিচ্ছিলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান জানান, ঢাকা সিটি নর্থের মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে সিউল সফরে রয়েছেন। কোরিয়াতে সিটি গভর্নমেন্টগুলো কীভাবে চলে, বিভিন্ন সেক্টরগুলো কিভাবে কাজ করছে বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট যেভাবে হচ্ছে এখানে, তার পাশাপাশি নগরীর ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং যেসব বিষয় সিটি গভর্নেন্সের জন্য প্রয়োজনীয়, এসব ক্ষেত্রে কোরিয়ানরা যেভাবে কাজ করছে ঠিক সেভাবেই রাজধানী ঢাকাকে ঢেলে সাজাতে চান সিউল সফরে আসা এই ডেলিগেশন।

কনস্ট্রাকশান এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেক্টরে কোরিয়ান প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবার মিশনে বাংলাদেশে সরকারের সেতু বিভাগের সচিবও এখন সিউলে অবস্থান করছেন। বিশেষ ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে আগামী সপ্তাহে কোরিয়া আসছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। রাষ্ট্রদূত জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি আইসিটি ডেলিগেশন কোরিয়া সফর করবে মে মাসের মাঝামাঝি, যারা আগামীতে হাইটেক পার্কে কাজ করবেন। বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত এই প্রতিনিধিদলটি কোরিয়ানদের সাথে বি-টু-বি তথা বিজনেসম্যান টু বিজনেসম্যান আলোচনা ও সেমিনারে অংশ নেবে।

পেশাদার কূটনীতিক জুলফিকার রহমান আরো জানান, আমাদের দেশে সন্দীপ-হাতিয়া যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই বা পৌঁছতে পারে না, সেখানে কীভাবে নেটওয়ার্ক কানেকশান দেয়া যায়, তার জন্য কোরিয়ানদের প্রযুক্তিগুলো দেখবেন আমাদের আইসিটি এক্সপার্টরা। ‘গিগা আইল্যান্ড’ নামে কোরিয়াতে একটা প্রজেক্ট আছে, যারা দুর্গম এরিয়াতে কানেক্টিভিটি বাড়াতে কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রদূত বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কোরিয়ানদের কাছ থেকে নেয়ার ব্যাপারটি আসলে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এখন মূল প্রতিপাদ্য।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও ২ সপ্তাহ আগে সরকারী সফরে সিউলে এসেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের সময় বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয় বলে জানান রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। কোরিয়ান ইনভেস্টরদের সাথে ফলপ্রসু বৈঠক হয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর। বিশেষ করে সোলার এনার্জি সেক্টরে বাংলাদেশে কোরিয়ান টেকনোলজির পথ সুগম করতে এখানকার একটি কোম্পানি আগামী মাসে বাংলাদেশে যাচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। কেরিয়াতে যেহেতু চাহিদার চাইতে বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বেশি, সেজন্য এখানকার লোকজন সোলার এনার্জি খুব একটা ব্যবহার করেননা বা করতে হয়না। কোরিয়ানরা তাই বাইরে তাদের বাজার সম্প্রসারণ করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য সহ ভারতে সোলার এনার্জি সেক্টরে কোরিয়ানদের আছে বিশাল বিনিয়োগ।

লেবার-কস্ট সামাল দিতে না পেরে যেসব শিল্পকারখানা বা ম্যানুফেকচারিং প্লান্ট কোরিয়া থেকে রি-লোকেট হয়ে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে, সেখানটায়ও বিশেষ নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান জানান, বহু কোরিয়ান কোম্পানি ইতিমধ্যে লাওস, কাম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং বাংলাদেশও যাতে কোরিয়ানদের কাছে একটা ডেস্টিনেশন হতে পারে, এ লক্ষ্যে জোরেশোরে কাজ চলছে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান তাঁর সিউল সফরের সময় কোরিয়ানদের সাথে কথা বলেছেন, যার ফলো-আপ এখন হচ্ছে। এখান থেকে কি কি ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে রি-লোকেট করা সম্ভব তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কোরিয়ানরা অচিরেই বাংলাদেশে যাবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.