২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে মনে করে দেশটি। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বড় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া চলতি বছরে চীনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসছেন। ঢাকায় সফররত চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোং জুয়াইউ একাধিক বৈঠকে এসব কথা বলেছেন।
চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোং জুয়াইউ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোং জুয়াইউ। সে সময় দুই দেশের সম্পর্ক, সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ ইস্যুতে দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ সময় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে চমৎকার অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ক্ষেত্র আছে, যেখানে এই দু’দেশের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এ দেশকে উন্নত করতে চাচ্ছি। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও বাসস্থানসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বেগবান করতে তার সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে। চীনের জন্যও জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশে পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে চীনের আরও বিনিয়োগের প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমানের (বিসিআইএম) মধ্যে আঞ্চলিক জোট গঠন করা হয়েছে। এই জোটের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। জবাবে বাংলাদেশকে চীনের ‘সম্মুখসারীর উন্নয়ন সহযোগী’ উল্লেখ করে দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, তার আশা বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হবে।
অর্থনৈতিক মন্থর গতির মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য চীনের এই মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশের ‘এক চীন নীতির’ প্রশংসা করেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন জাপানের কোচি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিরোকো মিনামি। বৈঠকে দেশের নার্সিং খাত নিয়ে আলোচনা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নার্সিং খাত আগে অবহেলিত থাকলেও তার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে এবং সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতেও নার্সিং পেশার উন্নয়নে সরকার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
জবাবে হিরোকো মিনামি বলেন, বাংলাদেশের নার্সিং খাতের উন্নয়নে ‘প্রজেক্ট ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব নার্সিং সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাইকা। এ প্রকল্পের অধীনে নার্সিংয়ে একটি স্নাতক কোর্স চালু হবে বলেও জানান তিনি। চীন ও জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ চীনা সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোং জুয়াইউ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চীনা সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ চীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। দুই দেশ বিশ্বস্ত বন্ধুও। বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতার ক্ষেত্র ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী চীন। অবকাঠামো খাতে উন্নয়নে জোর দিতে চাই আমরা। বাংলাদেশে পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চীন সহযোগিতা করছে। এছাড়া চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক জোনেও চীন বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। দুই দেশের সম্পর্ক বিস্তৃত করতে চলতি বছরেই উচ্চ পর্যায়ে চীন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছেন চীনা সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোং জুয়াইউ। বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্তোরত্তর আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।