গত ২২ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকত কক্সবাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখিনি। এ বছরটি একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে। সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তিনদিনব্যাপী বিচ কার্নিভালটা খুব ভালো ছিলো। এমন পদক্ষেপ আরও নিলে পর্যটনে পরিবর্তন আসবে।
কথাগুলো বলছিলেন টানা ২২ বছর সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ব্যবসা করা মো. শাহ আলম।
সিজন শেষ হওয়ায় ব্যবসা খুব ভালো নয় এখন। মন তাই খারাপ কিছুটা। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন বর্ষায়ও পর্যটক আসে কক্সবাজারে।
কক্সবাজারের পর্যটন নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কি ভাবছেন, কেমন চলছে তাদের ব্যবসা, কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন এসব বিষয়ে কথা হয় সৈকতের সুইমিং জোন লাবণী পয়েন্টের বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
সৈকতের এ অংশে কিছু দোকান আছে টং টাইপ, কিছু স্থায়ী পাকা কাঠামোর। সকালে ও বিকেলে দুই দফায় ঘুরে পর্যটকের দেখা খুব মিললো না। দোকানিরাও বেশি হতাশ। কারও আছে ক্ষোভ, কারও আবার গঠনমূলক উন্নয়নের পরামর্শ।
শাহ আলমের স্থায়ী দোকান। বিভিন্ন ধরনের কাপড় আর প্রসাধনী বিক্রি করেন তিনি।
তিনি বলেন, সৈকতে পর্যটকরা এসে সবার আগে নিরাপত্তা চান। এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব ভালো না। এই কয়েকদিন আগেও তিন পর্যটককে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। লোকাল আর আশপাশের উপজেলার কিছু কিশোর ও যুবক এসব কাজ করে।
প্রশাসন খুব কড়া ভূমিকা এ বিষয়ে রাখতে পারছে না বলেই মত তার।
আরেক দোকানি রকিবুল্লাহও বলেন, নিরাপত্তা না দিলে ট্যুরিস্ট তো আসবে না। দেখেন সন্ধ্যার পর সৈকতে পর্যাপ্ত আলো নেই। এখানে ছিনতাই হয়। সঙ্গে নারী নিয়ে কেউ আসতে সাহস পায় না। আর পর্যটক যদি না আসে তাহলে আমরা বাঁচবো কীভাবে।
বার্মিজ জুতা ও আচার বিক্রেতা মো. হাসান বলেন কিছু গঠনমূলক কথা। তার বক্তব্য, পর্যটকদের জন্য সৈকতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। যারা আসেন সবাই মনে করেন শুধু সৈকত ছাড়া আর কিছু দেখার নেই। তারা যদি না জানে তাহলে মহেশখালী, রামু, টেকনাফ এসব জায়গায় যাবে কীভাবে।
তিনি আরও বলেন, কিটকট থেকে প্রতিদিন অনেক মোবাইল, ব্যাগ চুরি হয়ে যায়। আর এসব নেয় ছোট ছোট শিশুরা, যারা চা, কফি, শামুক-ঝিনুকের সামগ্রী বিক্রি করে। প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো নজর নেই। তাছাড়া পর্যটকরা এতে বিরক্ত হন।
ঝিনুক-শামুক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বিদেশে ছিলেন কিছুদিন। তার অভিজ্ঞতা আবার ভিন্ন। বললেন, মানুষ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া চলে যায় কারণ সেখানে নিরাপত্তা আছে, সৈকতে বিনোদনের যথেষ্ট ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু আমাদের সেটা নেই। ইন্ডিয়াও এদিন দিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো সিজন চাই না। চাই সব সিজনে কক্সবাজারে পর্যটকরা আসুক। সিজন অর্থাৎ, শীতের সময় আমরা দিনে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করি। কিন্তু এখন মাসে ১৫ হাজার টাকাও আয় করা যায় না। তাহলে আমরা চলবো কীভাবে।
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, বিচে জেলা প্রশাসনের একটি বড় উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে। বছরে ২-৩ বার ছাড়া এখানে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। এ মঞ্চে যদি নিয়মিত সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় তাহলেও কিছু মানুষ এখানে আসবে।
পর্যটনের বিকাশে বিশাল জায়গার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন তিনি। আর যেটুকু জায়গা আমাদের আছে সেটা সাজিয়ে রাখলেই পর্যটকরা আসবে বলেই মত তার।
পর্যটন নগরীর নিরাপত্তাসহ সাবির্ক বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে নিরপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা লাগাতে বলা হলেও তারা মানছে না। এছাড়া লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে থাকা প্রয়োজন। তবে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে খারাপ বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, হিমছড়ির দিকে একটু আলো কম। এজন্য পর্যটকদের আমরা রাতে ওদিকে যেতে উৎসাহিত করি না। আমি মনে করি আজ আমি পুলিশ সুপার কাল ট্যুরিস্ট। সে জায়গা থেকে কাজি করি। তবে সবার আগে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এখানে যদি ভালো গাইড সার্ভিস পাওয়া যায় তাহলে সেটা পর্যটন বিকাশে আরও সাহায্য করবে।
কক্সবাজারে এখন যেন বারো মাস ট্যুরিস্ট আসে, সে লক্ষ্যে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।