মিথ্যা বক্তব্য ও তথ্য দেওয়া, জনগণের স্বার্থ, রাষ্ট্র এবং সংবিধান পরিপন্থী কার্যযক্রম পরিচালনা করলে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করার বিধান রেখে নতুন আইন করছে সরকার।
প্রস্তাবিত আইনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ছাড়া কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে নেওয়া নিবন্ধনও বাতিল করা হবে। আর নিবন্ধন ছাড়া কোনো সংস্থা চালু রাখা বা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
অন্যদিকে সংস্থার নামের ছাড়পত্র না নিলেও বিলুপ্ত করা হবে চলমান সংস্থা। শুধু তাই নয়, নতুন করে নিবন্ধন নিতে হলেও আগেই নিতে হবে নামের ছাড়পত্র।
এসব বিধান রেখে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৬ খসড়া চূড়ান্ত করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ রহিত করে নতুন করে এ আইন করছে সরকার। আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মতামত পেয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপ-সচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা বলেন, ১৯ এপ্রিল ছিল মতামত দেওয়ার শেষ দিন। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলেই খসড়া চূড়ান্ত করে দ্রুতই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
বিদ্যমান অধ্যাদেশ রহিত করে আইন করার বাধ্যবাদকতা ছাড়াও আইনের খসড়ায় নতুন করে বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। অন্যকোন আইন অনুযায়ী নিবন্ধনও করার সুযোগ বন্ধ করাসহ নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু শর্তও যোগ করা হয়েছে।
নিবন্ধন ছাড়া সংস্থা চলবে
খসড়া এ আইনে বলা হয়, আইনের বিধান অনুসরণ করা ছাড়া কোনো সংস্থা চালু রাখা যাবে না। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর বিদ্যমান সংস্থার নিবন্ধন সনদ নিয়ে সংস্থা চালু করা যাবে। আইন কার্যকর হওয়ার এক মাসের মধ্যে চলমান সংস্থার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে এক বছর বা নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিচালনা করা যাবে। আর নিবন্ধন আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে ৩০ দিন অথবা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চালু রাখা যাবে।
আগের কোনো সংস্থা পরিচালনা করতে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নামের ছাড়পত্র নিয়ে নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন সনদ দেওয়া হলে সংস্থা চালু করা যাবে।
ছাড়পত্র সনদ বাধ্যতামূলক
কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা যদি সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চান বা আগে প্রতিষ্ঠিত কোনো সংস্থা চালু করতে চান- তাহলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নামের ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন করা নামে বা নামের অনুরূপ সংস্থা নিবন্ধন নিয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে কর্তৃপক্ষের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
নিবন্ধন সনদ দেওয়া বা প্রত্যাখ্যান
নামের ছাড়পত্র পাওয়ার পর নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর তদন্ত করে আবেদন মঞ্জুর বা প্রত্যাখ্যান করবে কর্তৃপক্ষ। আবেদন মঞ্জুর হলে ক্রমিক নম্বরসহ নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে। আর প্রত্যাখ্যান করা হলে তার সঙ্গত কারণ জানিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে তা জানানো হবে।
অন্য আইনে নিবন্ধিত সব সংস্থা বাতিল
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্যকোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ থেকে কোনো আইনে নিবন্ধন নেওয়া থাকলে ওই সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ হবে। আর অন্যকোন আইনে নিবন্ধিত সংস্থা এ আইনে নিবন্ধিত হবে না। স্বেচ্ছায় কেউ সংস্থা বাতিল করতে চাইলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে।
নিবন্ধিত সংস্থা বাতিল করতে পারবে সরকার
যদি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ মনে করেন সংস্থাটি গঠনতন্ত্র বিরোধী, সংস্থার সদস্যদের বিরোধী কিংবা জনগণের স্বার্থ বিরোধী, রাষ্ট্র ও সংবিধান বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাহলে সংস্থাকে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেওয়ার সুযোগ দিয়ে নিবন্ধন বাতিল করতে কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন পাঠাবে সরকারের কাছে। সরকার তা যথাপযুক্ত মনে করলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।
আইন না মানলে দণ্ড
সংস্থার বা কার্যনির্বাহী পরিষদের কোনো সদস্য এই আইনের বিধান না লঙ্ঘন করলে, বক্তব্যে বা প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য দিলে এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অন্যদিকে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বা সরকার বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া সরকারের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ আইনে কোনো আদালতে মামলা করা যাবে না। তবে আর্থিক অনিয়মের কারণে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি আদালতে মামলা করতে পারবেন।