মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বাংলাদেশের স্বার্থে ‘সম্ভব সব কিছু’ করাই যে কোন রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারের রুটিন ওয়ার্ক। নেতৃত্বে থাকেন তিনি, সাথে থাকে দূতাবাস বা হাইকমিশনের পুরো টিম। তবে ‘সম্ভব সব কিছুর’ সীমানা পেরিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফলতা এলে সেটার মূল্যায়ন একটু ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ২০১২ সাল থেকে দায়িত্ব পালনকারী হাইকমিশনার কামরুল আহসান ও তাঁর টিমের প্রশংসা তাই এখানে করতে হচ্ছে বাংলাদেশের স্বার্থেই। কারণ অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশনটি ব্যর্থ হলে দেশটিতে জিএসপি সুবিধা এনজয় করার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যেতো।
হাইকমিশনার কামরুল আহসানের সাথে ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদকের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে দেশটিতে তাঁর দায়িত্বপালনের সময়কালে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পাবার নেপথ্যের অনেক অপ্রকাশিত সত্য। কানাডিয়ান এমপিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে দিয়ে জিএসপি সংক্রান্ত পুরো গ্রাউন্ড ওয়ার্কটি সেরে নেয় তখন হাইকমিশন। কিন্তু শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছিল, জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশ তখনই পাবে যখন বাংলাদেশের ফেক্টরিগুলোতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানী করা হবে জিএসপি সুবিধা আগে থেকেই পাওয়া দেশসমূহ থেকে।
হাইকমিশনার জানান, “উপরোক্ত শর্তে কানাডায় জিএসপি এনজয় করার কোন সুযোগই ছিল না আমাদের। কারণ বাংলাদেশ থেকে কানাডাতে ৯৯% এক্সপোর্ট যেহেতু টেক্সটাইল এবং বাংলাদেশের ট্রেক্সটাইল সেক্টরের কাঁচামাল আসে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, ইজিপ্ট ও উজবেকিস্তান থেকে, যারা এখানকার জিএসপি সুবিধা পাওয়া দেশ নয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা তখন পিটিশন দিলাম। জিএসপি ইস্যুতে ঢাকা থেকে ডজন ডজন লোক আমেরিকাতে গেলেও কানাডাতে কেউই আসেনি। স্থানীয় প্রভাবশালী এমপি এবং সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের হার না মানা লবিংয়ের কারণেই কানাডিয়ান পার্লামেন্টে জিএসপি সংক্রান্ত একটি অর্ডিনেন্স পাশ হয়, যাতে যোগ হয় স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশকে জিএসপি দেবার বিধান”।
সুনির্দিষ্ট ঐ অধ্যাদেশের কারণেই কানাডিয়ান জিএসপিভুক্ত নয় এমন দেশ থেকে আমদানী করা কাঁচামাল ব্যবহার করে উৎপাদিত টেক্সটাইল পন্য আজ কানাডায় রপ্তানী করতে পারছে বাংলাদেশ। হাইকমিশনার কামরুল আহসান আরো বলেন, জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ১০ বছরের জন্য চালু হওয়া জিএসপি সুবিধা ডিসেম্বর ২০২৩ অবধি আমরা পাবো। তবে এটি যেহেতু স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাই মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা এখানে জিএসপি এনজয় করবো”। কানাডা-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য আশাব্যঞ্জক হারে বাড়ছে বলে জানান হাইকমিশনার। বাইল্যাটেরাল ট্রেড ২০০০ সালে যেখানে ছিল মাত্র ২৫০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার, আজ সেটা বেড়ে ১.৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে দায়িত্বে আসা কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন হাইকমিশনার কামরুল আহসান। আরো সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “নতুন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব ভালো জানেন। ১৩-১৪ বছর বয়সে বাবার সাথে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তিনি, যেটা এখনো স্বরণে আছে তাঁর। বাংলাদেশের জন্য এটা অবশ্যই একটা বড় ইতিবাচক বিষয়”। অটোয়াতে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন শেষে কিছুদিন পরই ঢাকায় ফিরছেন হাইকমিশনার কামরুল আহসান। বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় সফল এই কূটনীতিকের মেধা ও যোগ্যতা আবারো সুফল এনে দেবে বিশ্বের অন্য কোন প্রান্তে, এই প্রত্যাশা আমাদের।