তিন বছর অপেক্ষার পর পূরণ হতে যাচ্ছে বাহরাইনের লাখো প্রবাসীর প্রাণের দাবি। আগামী ৩০ মে ফের চালু হচ্ছে গালফ এয়ারের ঢাকা-বাহরাইন সরাসরি ফ্লাইট।
২০১৩ সালে ১ মার্চ হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়মকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় গালফ এয়ারের ঢাকা-বাহরাইন সরাসরি ফ্লাইট।
গালফ এয়ার বন্ধ হওয়ার অনেক আগে একই কায়দায় বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-বাহরাইন ফ্লাইট।
দুই ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে বাহরাইন প্রবাসীদের জীবনে। ট্রানজিট ভোগান্তি কারণে দেশে ফেরার যাএীর সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে। ট্রানজিটের কারণে মরদেহ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়।
২০১৩ সালে বাংলাদেশে গালফ এয়ারের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) রাশেদ নিজামের সঙ্গে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলারের একটি হিসাব নিয়ে এয়ারলাইন্সটির মতবিরোধ ঘটে। রাশেদ নিজাম বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের আদালতে মামলা করেন, যার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। অন্যদিকে গালফ এয়ার সিঙ্গাপুরের ইন্ট্যারন্যাশনাল এভিয়েশন কোর্টে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার জন্য মামলা করে এবং এর রায় গালফ এয়ারের পক্ষে যায়।
সরাসরি কোনো ফ্লাইট না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন বাহরাইনের লাখো প্রবাসী। ট্রানজিট ফ্লাইটে দুবাই, ওমান, কুয়েত, ভারত, শ্রীলঙ্কা হয়ে এক একেকটি ফ্লাইট ঢাকা পৌছাতে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নেয়।
এ দুর্দশা লাঘবে দূতাবাস ও সরকারের কাছেও জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রবাসীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সরাসরি ফ্লাইটের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তারা।
প্রবাসীদের বার বার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান, দূতাবাসের মিনিস্টার মেহেদী হাসান ও সচিব (শ্রম) মহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি বারবার জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে বাহরাইনের গালফ এয়ারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করে দূতাবাস। গালফ বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্টে রক্ষিত ৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা দেয়।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রথমবারের মতো দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাহরাইন যান। তিনি এ বিষয়ে বাহরাইনের রাজা (কিং) হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা, প্রধানমন্ত্রী শেখ খলিফা বিন সালমান আল খলিফা ও ক্রাউন প্রিন্স শেখ সালমান বিন হামাদ আল খলিফার সঙ্গে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাহরাইন থেকে ফোনে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে তাদের টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করেন ।
এরপর গালফ এয়ারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে সফরে গিয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তারা বাহরাইনে ফিরে গিয়ে সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।
এ সার্ভিসের খুঁটিনাটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে গালফ এয়ারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে গিয়ে এখনো অবস্হান করছে। তারা ওই ফ্লাইটে উভয় দেশের সুবিধাজনক সময়সীমা, সার্ভিসের মান, মূল্য নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয়ে সমন্বয় করবেন।
বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান জানান, বেসরকারি বিমানের ফ্লাইট উড্ডয়নের জন্য সিভিল এভিয়েশনের কিছু নিয়ম ও প্রক্রিয়া রয়েছে। যা ইতোমধ্যে গালফ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উভয়পক্ষ উভয়ের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আগামী ৩০ মে থেকে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-বাহরাইন সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত জানান, এ ফ্লাইট চালু হলে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বাহরাইনে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট হতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একটি করে ফ্লাইট চট্টগ্রাম ও সিলেটে দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪.কম