বিদেশগামীদের করোনা সনদ দিতে প্রস্তুতি নেই ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের

প্রবাসীরা চান নিরাপদ, ঝুকিমুক্ত নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল

কাল থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বিদেশগামীরা করোনা সনদ সংগ্রহের জন্য নমুনা দিতে যাবার কথা রয়েছে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন অফিসে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এখন পর্যন্ত এই অফিসের এনিয়ে কোন প্রস্তুতি নেই। কোথায় নমুনা সংগ্রহ করা হবে সেরকম কোন বুথও তৈরী হয়নি। বিদেশগামীদের ভীড় বেড়ে গেলে সেটা সামাল দেয়ার মতো কোন ব্যবস্থাও এখনো করা হয়নি।

নমুনা নেয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবলও তাদের নেই। পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও নিরাপত্তা সামগ্রীও নেই তাদের। তালিকার ১৬ হাসপাতালের মধ্যে ঢাকায় আছে ৩টি। এগুলো হলো ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন এন্ড রেফারাল সেন্টার (এনআইএলএমআরসি), ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথ (এনপিএমএল-আইপিএইচ) ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেনটিভ এন্ড সোসাল মেডিসিন (এনআইপিএসওএম)।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে এমনিতে নিয়মিত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করাতে এসব হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে সেক্ষেত্রে এত বিশাল সংখ্যক বিদেশগামীদের নমুনা ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রস্তুত করার মতো তাদেরও পর্যাপ্ত জনবল ও ইকুইপমেন্ট নেই।

বিদেশগামীরা বলেছেন, জেলা সিভিল সার্জন অফিসগুলো এই মুহর্তে করোনা ভাইরাসের অভ্যয়ারন্য। তাছাড়া সারাদেশের প্রবাসী যাত্রী, ভ্রমনকারী ও অফিসের কাজে বিদেশগামীরা যদি এক সঙ্গে সংশ্লিস্ট সিভিল সার্জন অফিসে নমুনা দিতে যান তাহলে ওই অফিসে বড় ধরনের ভীড় তৈরী হবে। বিশাল লাইন পড়ে যাবে। এতে বিদেশগামীদের মধ্যে করোনা ঝুকি বাড়বে।

ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু নমুনা প্রদানকারী আইসোলেশনে চলে যাবেন সেক্ষেত্রে এসব নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ৭২ ঘন্টার আগে তাদের ওয়েসসাইটে ডাউনলোড করা, নমুনা প্রদানকারী ও সংশ্লিস্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে জানিয়ে দেয়া কোনভাবেই জেলা সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষে সম্ভব হবে না।

তাছাড়া ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসে এরকম আইটি বিশেষজ্ঞ ও আইটি ইকুইপমেন্টও নেই। কাজেই ৭২ ঘন্টার মধ্যে বিদেশগামীদের নমুনা ফলাফল বিমানবন্দরে পৌছানোর সম্ভবনা খুবই কম। এতে অসংখ্য যাত্রী বিমানবন্দরে গিয়ে সনদ পাবেন না।

এনিয়ে তদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে যাত্রীদের। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মফস্বলের সিভিল সার্জন অফিসগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। তাদের পক্ষেও বিদেশগামীদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে সেগুলো ৭২ ঘন্টার মধ্যে তালিকাভুক্ত ১৬ হাসপাতাল থেকে টেস্ট করিয়ে ওয়েসবাইটে আপলোড করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

এদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ভোগান্তির ভয়ে এয়ারলাইন্সগুলোতে টিকিট বাতিলের হিড়িক পড়েছে। অধিকাংশ ভ্রমন পিপাষুরা এবং অফিসের কাজে যারা বিদেশ যাবেন তারা তাদের ভ্রমন স্থগিতের কথা জানাচ্ছেন ট্রাভেল এজেন্টগুলোকে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলেছে, সরকার যে পদ্ধতিতে সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে নমুনা দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে এনিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃস্টি হবে।

একজন ট্রাভেল এজেন্সি মালিক জানান, যারা বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ও পরিবার পরিজন নিয়ে নমুনা দিতে যাবেন তাদের পক্ষে এভাবে লাইনে দাড়ানো সম্ভব হবে না। এতে করোনা আরো ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা আছে। তাছাড়া প্রবাসীরা এদেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা। তাদের হয়রানির বিষয়টি সরকারকে আন্তরিকভাবে দেখতে হবে।

নামীদামি বেসরকারি হাসপাতালের টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই কোন দেশের। সরকারের উচিত যেখানে প্রবাসীরা নিরাপদ বোধ করবেন টেস্টের জন্য এরকম হাসপাতালের নাম দেয়া উচিত। সাড়ে ৩ হাজার টাকায় এভাবে লাইনে দাড়িয়ে নমুনা দিতেও তারা অনিহা জানিয়েছেন।

এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের এই লিস্ট মানতে গেলে তাদের যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা এখন ভ্রমন করতে আগ্রহ দেখাবেন না। অনেকে এই ঘোষনায় তাদের ভ্রমন বাতিল করার জন্য বলেছেন।

এমিরেটস এয়ারলাইন্সের দেয়া ২৯টি হাসপাতালের এরমধ্যে অন্যতম ছিল এভার কেয়ার, স্কয়ার, ইউনাইটেড, ইবনে সিনা, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, কুর্মিটোলা জেনারেল, আইপিএইচ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল, ফরিদপুর মেডিক্যাল, নারায়নগঞ্জ ৩০০ বেড, চট্টগ্রাম ইউনিভাসিটি, সৈয়দ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল, ইমপিরিয়ার হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ, আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল, কুমিল্লা মেডিক্যাল, ব্রাহ্মনবাড়িয়া মেডিক্যাল, রাজশাহী মেডিক্যাল, খুলন মেডিক্যাল, বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল, সিলেট ওসমানি মেডিক্যাল, রংপুর মেডিক্যাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল, জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিক্যালসহ ২৯টি নামিদামি হাসপাতাল অন্যতম।

জানাগেছে এতদিন যাত্রীরা নিরাপদে ও নিভিঘেœ এসব হাসপাতাল থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় থেকে শনিবার ১৬ হাসপাতালের যে তালিকা প্রদান করা হয়েছে তাতে বিদেশগামীরা নমুনা প্রদানে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সরকারের নতুন তালিকায় আগের অধিকাংশ নামিদামি ও ঝুকিমুক্ত হাসপাতালের নাম নেই। ১৬টি হাসপাতালের অধিকাংশই প্রবাসীরা চিনেন না। প্রবাসী ও বিদেশগামীদের সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত করেছে নমুনা হাসপতালে না দিয়ে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের নির্ধারিত বুথে গিয়ে প্রদানের সিদ্ধান্তে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.