চরিত্রের প্রয়োজনে কত কিছুই না করতে হয় অভিনয়শিল্পীদের। চেহারা, পোশাক, হেয়ার স্টাইলে যে পরিবর্তন আনতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বলিউডের অনেক তারকাই চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে পরিবর্তন করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। এমন তারকা অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।
শাহরুখ খান : সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খান অভিনীত ‘ফ্যান’ সিনেমাটি। ৫০ বছর বয়সী এই অভিনেতা এতে অভিনয় করেছেন তারই মতো দেখতে ২৫ বছর বয়সী গৌরবের চরিত্রে। সিনেমাটিতে শাহরুখ খানকে গৌরবের রূপ দিতে কৃত্রিম আইভ্রু তৈরি করতে হয়েছিল। পাশাপাশি নাক এবং দাঁতেরও আলাদা ডিজাইন করতে হয়েছে। এ ছাড়া ভিএফএক্স দলকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে কাজ করার জন্য।
করতে হয়েছে শাহরুখের চিবুকের আকার পরিবর্তন। গলার উঁচু স্থানকে সমান করতে হয়েছে। পরিবর্তন করতে হয়েছে চোখ এবং কাঁধের ধরণ। ৮৫০ মিলিয়ন রুপি খরচে নির্মিত এই সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বক্স অফিস রেকর্ড গড়ে আয় করেছে প্রায় ১.৮৫ বিলিয়ন রুপি।
ফারহান আখতার : ২০১৪ সালে ‘ভাগ মিলকা ভাগ’ সিনেমায় মিলকা সিং চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নিজেকে বেশ আলাদাভাবেই প্রস্তুত করেছিলেন ফারহান। সে জন্যই ফারহানের ক্যারিয়ারে এই সিনেমাটি একটু বেশিই প্রশংসার দাবি রাখে। সিনেমায় নিজেকে একজন উপযুক্ত শিখ এথলেট হিসেবে যথার্থ প্রমাণ দিয়ে ওই বছর সেরা অভিনেতা হিসেবে জিতে নেন গ্লিড, ফিল্মফেয়ার এবং আইফা অ্যাওয়ার্ড।
আমির খান : ২০০৮ সালে গজনি সিনেমায় যেন নতুন আমিরকে দেখেছে দর্শক। সিনেমাটিতে তাকে দেখানো হয় একজন ক্ষীণ স্মৃতির মানুষ হিসেবে। তবে সিনেমায় হৃষ্টপুষ্ট শরীর দেখানোর কারণে প্রায় কয়েকমাস ধরে আমির খান তৈরি করেছিলেন নিজেকে। এই চরিত্রের কারণেই সিনেমাটি সাফল্য পেয়েছিল। মাত্র ৪৫০ রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি সে বছরই আয় করেছিল প্রায় দুই বিলিয়ন রুপি।
অমিতাভ বচ্চন : নিজেকে ভেঙে নিজেকেই গড়েছেন যেন অমিতাভ। পা সিনেমায় অরু চরিত্রে নিজেকে ভিন্নরূপে মেলে ধরেছিলেন অমিতাভ। আর এ জন্য প্রতিদিনই তাকে মেকআপ নিতে সময় খরচ হত কয়েক ঘণ্টা। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই কমেডি-ড্রামা সিনেমায় অভিনয়ের কারণে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকে শুরু করে সে বছর ভারতের অনেক পুরস্কার ঘরে তুলেন এই অভিনেতা।
অক্ষয় কুমার : একশান রিপ্লে সিনেমায় নতুন হেয়ারস্টাইলে দেখা গিয়েছিল অক্ষয়কে। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচারের’ উপর ভিত্তি করে মূলত সিনেমাটি তৈরি করা হয়। তবে আর যাই হোক সিনেমাটিতে কিশেন চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় উপহার দিয়েছিলেন অক্ষয়। তবে এই চরিত্রের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে কয়েক মাস নিজেকে তৈরি করেছিলেন অক্ষয়। একশান রিপ্লে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১০ সালে।
সঞ্জয় দত্ত : মুন্না ভাই বলে যিনি বিশেষভাবে পরিচিত। সেই সঞ্জয় দত্ত নিজেকে একেবারে আলাদাভাবে মেলে ধরেছিলেন অগ্নিপথ সিনেমায়। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় কাঞ্চা চিনা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজেকে বিশালদেহী মানবরূপে তৈরি করতে হয়েছিল নিজেকে। আর সাথে সাথে চরিত্রটির জন্য মাথার চুল থেকে ভুরু পর্যন্ত কামাতে হয়েছিল সঞ্জয়কে। এই চরিত্রের কারণে ওই বছর নেতিবাচক চরিত্রের জন্য আইফা অ্যাওয়ার্ডের আসরে সেরার পুরস্কার পান সঞ্জয়।
হৃতিক রোশান : ২০০৩ সালে ‘কই মিল গ্যায়া’ সিনেমায় রোহিত চরিত্রে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন হৃতিক। তবে চরিত্রটিতে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে সিনেমার প্রথম অর্ধকের জন্য ওজন কমাতে হয় তাকে। আর দ্বিতীয় অংশের জন্য আবার ওজন বাড়াতে হয়েছিল। অল্পদিনের মধ্যেই এভাবে ওজনের তারতম্য ঘটানো হৃতিকের জন্য বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সবকিছু পেছনে ফেলে তিনি উপযুক্ত হতে পেরেছিলেন সিনেমার কাহিনির সাথে।
ইমরান হাশমি : ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজনৈতিক থ্রিলার সিনেমা ‘সাংহাই’ তে ইমরান হাশমিকে একেবারে ভিন্নরূপে দেখা যায়। সিনেমাটিতে তাকে দেখানো হয় কালো দাঁতওয়ালা প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্রের একজন নির্মাতা হিসেবে। এই চরিত্রের জন্য ইমরান নিজেকে বেশ আলাদাভাবেই প্রস্তুত করেছিলেন।
অনিল কাপুর : অনিল কাপুর অভিনীত কমেডি সিনেমা ‘বাধায় হো বাধায়’ এখনো দর্শকদের হাসির খোরাক হিসেবে বেশ পরিচিত। সিনেমাটির রাজা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেশ সুনাম পেয়েছিলেন অনিল কাপুর। তবে বিশালদেহী এই মানুষের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বাধায় হো বাধায় মুক্তি পেয়েছিল ২০০২ সালে।
সাইফ আলী খান : উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ওথেলোর মূল গল্পের উপর ভিত্তি করে ২০০৬ সালে নির্মিত হয় সিনেমা ওমকারা। সিনেমাটিতে ল্যাংডা টায়জি চরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সাইফ আলী খান। তবে চরিত্রটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল সাইফকে। তবে শেষমেশ বেশ দাপুটে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা। যে কারণে ওই বছর নেতিবাচক চরিত্রে সেরার খেতাব পান তিনি। সিনেমাটিতে সাইফ আলী খান ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগন, বিবেক, কারিনা কাপুর, বিপাশা বসু, নাসিরুদ্দিন শাহ্’র মতো অভিনয়শিল্পীরা।