এভিয়েশন নিউজ ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দারুণ এক রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে। একটি পুরনো বোয়িং ৭০৭ উড়োজাহাজকে রেস্তোরাঁয় রূপান্তর করে রীতিমতো স্থানীয়দের মধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় দুই সহোদর। ফলে এখন খেতে গিয়েই উড়োজাহাজে চেপে বসার অনুভূতি পাবেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। খবর এপি।
জমজ দুই ভাই খামিস আল সাইরাফি ও আতা আল সাইরাফির এ রেস্তোরাঁ তৈরির গল্পটা বেশ লম্বা। দুই ভাইয়ের ভাষ্য, ৯৯ শতাংশ ফিলিস্তিনি কখনো উড়োজাহাজে চড়েনি। কেবল কিছু রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, মন্ত্রী ও মেয়রের মতো মানুষ উড়োজাহাজ ভ্রমণের অনুভূতি পেয়েছেন। তাদের এ রেস্তোরাঁর মাধ্যমে এখন সাধারণ মানুষ অন্তত উড়োজাহাজ কেমন হয় সে ধারণাটুকু পাবে। এটাই তাদের ভালো লাগার বিষয়।
প্রায় ২৫ বছরের চেষ্টার পর দুই ভাই মিলে রেস্তোরাঁটি চালু করতে পেরেছেন। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘প্যালেস্টাইন-জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কফি শপ আল সাইরাফি’। গত ২১ জুলাই থেকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলেছে বিশেষ এ রেস্তোরাঁর দুয়ার।
মূল উড়োজাহাজের নিচের অংশে চালু হয়েছে ক্যাফে। অনেকেই আবার আসছেন বাহনটির ভেতরে বসে ছবি তোলার জন্য। অবশ্য সেজন্য আলাদা মূল্যও পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র দেড় ডলার।
পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ধারে বছরের পর বছর ধরে পড়ে ছিল এ উড়োজাহাজ। ৬০ বছর বয়সী জমজ দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরেই বাহনটিকে রেস্তোরাঁয় রূপান্তরের স্বপ্ন দেখছিলেন। এক দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে তারা সফল হয়েছেন।
রেস্তোরাঁয় রূপান্তরিত উড়োজাহাজটির একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৯৬১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার এটি ব্যবহার করত। ১৯৭৮ সালে মিসরের সঙ্গে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি করতে এ উড়োজাহাজে করেই যুক্তরাষ্ট্রে যান তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন। এরপর উড়োজাহাজটি কিনে নেন তিন ইসরায়েলি ব্যবসায়ী, যাদের পরিকল্পনা ছিল এটিকে রেস্তোরাঁয় পরিণত করা। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনাটি আলোর মুখ দেখেনি।
একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালে ১ লাখ ডলারে ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাহনটি কিনে নেন দুই ভাই। এরপর সেটিকে পশ্চিম তীর পর্যন্ত নিয়ে যেতে ও লাইসেন্সসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে আরো ৫০ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয় তাদের।
কেনার পর পরই ২০০০ সালের শেষ দিকে আবার শুরু হয় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল উত্তেজনা। ফলে সেই সময় আর রেস্তোরাঁ তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
এরপর প্রায় ২০ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল উড়োজাহাজটি। এরপর আবার নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন দুই ভাই। ঠিক সেই সময়ই এল কভিড-১৯ মহামারী, যার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফিলিস্তিনের অর্থনীতি। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত জুলাইয়ে খুলে দেয়া হয় রেস্তোরাঁটির দরজা। এর আগে সেটিকে সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা হয় গ্রাহকসেবার জন্য। ভেতরে বসানো হয় চেয়ার টেবিল, নাকের অংশে আঁকা হয় ফিলিস্তিনের রঙিন পতাকার রঙ, লেজের অংশ রাঙানো হয়েছে জর্ডানের পতাকার রঙে। এখন কেবল ক্যাফে অংশটি চালু হয়েছে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন সামনের মাসেই পুরোদমে রেস্তোরাঁ চালু করতে পারবেন। এজন্য বাহনটির নিচের অংশে একটি রান্নাঘর তৈরির কাজ চলছে।