হাবের দুর্নীতি: শুধু স্বাক্ষরের দাম পৌনে ৩ কোটি টাকা!

file (2)শুধু একটি স্বাক্ষরের বিনিময়ে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ২শ টাকা করে নিচ্ছেন হাব নেতারা। একই সঙ্গে প্রতি গাইডের জন্য তারা নিচ্ছেন জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। সেই হিসাবে চলতি হজ মৌসুমে বেসরকারি ৮৮ হাজার ২০০ হজযাত্রীর বিপরীতে অতিরিক্ত বাড়তি ২ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা পকেটস্থ করছেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

তবে সরকারই তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছে। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিমালায় হজযাত্রী বা হজ এজেন্সির ব্যাংক স্টেটমেন্টে হাব নেতাদের প্রতিস্বাক্ষরের বিধান রাখা হয়েছে। এই স্বাক্ষর ছাড়া কোনোভাবেই হজ যেতে পারবেন না কেউ। আর এই কারণেই বিপুল অংকের টাকা হাতানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। অথচ বিধিমালার কোথাও টাকা নেয়ার কথা উল্লেখ নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরেই সংশোধিত জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিমালায় হজযাত্রীর ব্যাংক স্টেটমেন্টে হাব নেতাদের প্রতিস্বাক্ষর নেয়ার এই অযৌক্তিক নিয়ম যুক্ত করা হয়। এর আগেই গাইডের জন্য প্রতি জনের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নিয়েছেন তারা।

হজ এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ, বিগত তিন মাসেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হাব নেতারা প্রায় তিন কোটি টাকা আদায় ও আত্মসাতের সুযোগ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই হজযাত্রীদের জিম্মি করে এই টাকা আদায় শুরু করেছে হাব। এই অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি অসাধু চক্রও জড়িত বলে দাবি করেন তারা।

গত ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ১৮তম বৈঠকে হাবের এই দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। লুটপাট বন্ধে নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশও করেন কমিটির সদস্যরা। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উপত্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় স্থায়ী কমিটি।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের সভাপতিত্ব বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য, এমপি একেএম আওয়াল (সাইদুর রহমান), এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, দিলারা বেগম, মোহাম্মদ আমির হোসেন এবং আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন। এছাড়া কমিটির বৈঠকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল জলিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, হজ এজেন্সি বা হাজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হাবের প্রতিস্বাক্ষরের বিষয়টি নীতিমালায় সংযুক্ত করা ঠিক হয়নি। হাজি প্রতি ২০০ টাকা করে জমা না করলে হাব প্রতিস্বাক্ষর করছে না। হাজিপ্রতি ২০০ টাকা করে হলে ৮৮ হাজার ২০০ হাজির জন্য ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়। এই বিশাল অংকের টাকা হাব কেন নেবে, তাও জানতে চান নজিবুল বশর।

তিনি বলেন, বেসরকারি পর্যায়ের হজযাত্রীদের জন্য গাইড রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৫৫২ জন। এই গাইড প্রতি হাব নেতারা তিন হাজার টাকা করে এক কোটি টাকার বেশি জমা নিচ্ছেন। এই বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিতেই এই প্রতি স্বাক্ষরের বিষয়টি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি বন্ধ করতে নীতিমালা সংশোধন করা জরুরি।

একই দাবি তোলেন বৈঠকে উপস্থিত অপর সংসদ সদস্য একেএম আওয়াল। হজ এজেন্সি বা হাজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হাবের প্রতিস্বাক্ষর থাকার প্রয়োজন কেন, তা জানতে চান। তিনি বলেন, হাব একটি বিতর্কিত সংগঠন।

এ ব্যাপারে হাব সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি  বলেন, হজযাত্রী প্রতি ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে সত্য। তবে তা আইনসম্মতভাবে সংগঠনের বার্ষিক চাঁদা হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই। হজ গাইডদের পরিচয়পত্র দেয়া হয় হাব থেকে। এ কারণে তাদের কাছ থেকেও ৩ হাজার করে টাকা নেয়া হচ্ছে। যা কিছুই করা হচ্ছে তা সংগঠনের বিধি মেনেই করা হচ্ছে।

হাবের এমন স্বীকারোক্তির পরও ধর্ম সচিব মো. আবদুল জলিল বলছেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, হজ প্রায় সমাগত। চলতি বছর দুই দফায় নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। চলতি বছর হজ শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.