অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই পাসপোর্ট-টিকিট জব্দ [ভিডিও]

13874879_1671297873194541_123627794_nবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি বিমান সংস্থা। বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই বিমানটির আরেক নাম আকাশে শান্তির নীড়। কিন্তু না, বিদেশে যে বাংলাদেশিদের জন্য অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিমান। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে যাত্রীদের হয়রানি করছে অথবা টাকার বিনিময়ে অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। তারা বিদেশে দেশের মান মর্যাদার কথা একবারও ভাবছে না। এমনকি প্রতিবাদ করলেই সৌদি কর্মকর্তাদের ডেকে পাসপোর্ট টিকিট জব্দ করা হয়।

অবশ্য বিমানের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সমালোচনা আজ নতুন নয়। বিশেষ করে প্রবাসীরা বহুদিন থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। যেমন: সম্প্রতি যাত্রী সেজে সৌদি আরবের রিয়াদে বাদশাহ খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান কাউন্টারে গিয়ে রীতিমতো ভিড়মি খাওয়ার জোগাড় হলো।

পরিছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে বিমানের কর্মকর্তাদের কাছে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে প্রবাসী যাত্রীদের। পড়ছে দালালের খপ্পরেও।

অনেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন মালামাল নিয়ে, আবার অনেকে শেষে এসে সবার আগে মালামাল নিয়ে হাসতে হাসতে প্রবেশ করছেন। বিনিময়ে পরিছন্নতা কর্মীদের ধরিয়ে দিচ্ছেন ১০০ থেকে ২০০ সৌদি রিয়েল।

এসব দেখে সাধারণ যাত্রীরা ক্ষেপে ওঠেন। দু’একটা কড়া কথা হয়তো বাতাসে ছেড়ে দেন। কিন্তু কিছু করার থাকে না। কারণ কর্তাদের আশীর্বাদে কর্মচারীরা এখানে সর্বশক্তিমান। আর বহু বছর পর প্রিয় জন্মভূমিতে ফেরার আনন্দটা ঝগড়া করে মাটি করতে চান না কেউ।

যাত্রীদের মালামাল নির্ধারিত পরিমানের একটু বেশি হলে সরকার একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা বাড়তি পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটা যাচ্ছে কর্মকর্তাদের পকেটে। কমিশন পাচ্ছে কর্মচারীরা। এমন প্রমাণ মিলেছে বিমান কাউন্টারে গিয়ে। যাদের মালামাল বেশি তাদের চোখে চোখে রাখে পরিছন্নতা কর্মীরা। ‍সুযোগ বুঝে ওই যাত্রীর কানে কানে কী যেন বলে। একটু পরেই দেখা যায়, অতিরিক্ত মালামাল থাকার পরও তারা হাসিমুখে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কর্মকর্তারা সহযোগিতার নামে এই অবৈধ কারবার করছেন।

আর যারা সৎ, দেশপ্রেমিক তাদের মালামাল খুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা, হচ্ছে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

গোল চিহ্নিত শাহেদ
গোল চিহ্নিত শাহেদ

এমনকি বিমান কাউন্টারে দাঁড়িয়ে দেখা গেলো, ক্যাশিয়ারের দৃষ্টি সবসময় সামনে। কোনো যাত্রী এলেই বাইরে থেকে কর্মচারীরা চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছে। আগে থেকেই ‘চুক্তিবদ্ধ’ ওই যাত্রী কোনো ঝামেলা ছাড়াই কম খরচে পার পেয়ে যাচ্ছেন।

বিমানবন্দরে এই সুবিধা নেয়া লোকজনই কিন্তু বেশি। কষ্ট করে উপার্জনের টাকা, একটু কম খরচে যদি বিমানবন্দর থেকে ছাড় পাওয়া যায় ক্ষতি কী!

এতো গেলো মালামালের কাহিনি। মালামাল বুকিং করতে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের চেয়ে বাংলাদেশ বিমানে সব সময় ভিড়টা একটু বেশি, লম্বা লাইন লেগেই থাকে। আর লাইন ঠিক করতে কিছুক্ষণ পরপর এক কর্মচারী এসে হম্বিতম্বি করে। লাইনে দাঁড়ানো লোকদের বকাঝকা করে,

অপমানজনক কথা বলে। ‘কেমন মানুষ আপনেরা, লাইনটাও ঠিক মতন ধরতে পারেন না। বিদেশ কেন করেন- এরকম আরো কতো কথা! এমনকি অনেক সময় যাত্রীদের মালামাল লাথি দিয়ে ফেলে দিতেও দেখা গেছে তাকে।

একদিন তার কাছে গিয়ে তার পিঠে হাত দিয়ে বললাম, তারা টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটেছে। তাদের সাথে এমন আচরণ কেন করছেন। এই কথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে বলে, আপনি কে? আপনাকে কেন কইফিয়ত দিতে হবে? তবে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরই তার চেহারা পাল্টে গেল। তার পরিবর্তনটাও ছিল বেশ হাস্যকর। পরে জানা যায়, লোকটির নাম শাহেদ। তিনি এখানকার কর্মচারী।

এখানে কয়েক দিন থেকে উপলব্ধি হলো- বাংলাদেশ বিমানে প্রতিদিন এমন ভিড় লম্বা লাইন দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না এই সরকারি সংস্থাটি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে!

তবে যাইহোক, লাভ লোকসান নিয়ে সাধারণ মানুষ মাথা না ঘামালেও যাত্রীদের দুর্দশা কিংবা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা কিন্তু সবাইকে পীড়া দিচ্ছে। এ নিয়ে কিন্তু কারো কোনো বিকারও নেই। সবাই চুপচাপ, কিছু বলার সাহস নেই।

এর কিন্তু একটা গুরুতর কারণও আছে। কেউ কিছু বললেই কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে কর্মরত সৌদি নাগরিক ডেকে ওই যাত্রীকে দেখিয়ে দেয়। আর সেই সৌদি কর্মকর্তা এসে সে যাত্রীর পাসপোর্ট আর টিকিট জব্দ করে। প্রায় দৈনিকই কিন্তু এমন দুয়েকটা ঘটনা ঘটছে। তাহলে কে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারবে!

https://youtu.be/nR3xqH3CbDU

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে: অতিরিক্ত মালবাহী এক যাত্রীর সঙ্গে বেআইনি চুক্তি করছে এক কর্মচারী।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.