সিডিউল ওলটপালট করে বিমানের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত

hajjকাল থেকে বিমানের হজ ফ্লাইট শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ঢাকায় পৌঁছেনি হজের জন্য ভাড়া করা বিদেশী উড়োজাহাজ। ওই এয়ারক্রাফট আসবে কিনা তা নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় বিমান কর্তৃপক্ষ সিডিউল ওলটপালট করে হজ ফ্লাইট পরিচালনার তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে বিমানের যেমন সাড়ে তিনশ’র বেশি নির্ধারিত ফ্লাইট সিডিউল পরিবর্তন অথবা বাতিল করতে হবে তেমনি অগ্রিম টিকিট কাটা বিমানের কয়েক হাজার যাত্রীও চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন। এ অবস্থার মধ্যেই আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশকোনা হজ ক্যাম্প উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে নির্ধারিত হজ ফ্লাইট।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, যে এয়ারক্রাফটের সঙ্গে বিমান চুক্তি করেছিল, শেষ মুহূর্তে দেখা গেছে সেটি সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। সাউদিয়া কর্তৃপক্ষও ডিসেম্বরের আগে বিমানকে ওই এয়ারক্রাফট দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমানের পরিচালনা পর্ষদ জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, হজের এয়ারক্রাফট আসার আগ পর্যন্ত বিমানের নিজস্ব রুটে থাকা ৩টি বোয়িং হজের সিডিউলে যুক্ত থাকবে। বিমানের মার্কেটিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এতে বিমানের সব আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট সিডিউলে বড় ধরনের কাটছাঁট করতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় হজ চলাকালীন সব রুটে ৩শ’ থেকে ৩৫০টি ফ্লাইট বাতিল করতে হবে। বন্ধ করতে হতে পারে ২ থেকে ৩টি রুট। এতে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে বলে সূত্র জানিয়েছে। ফলে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকা পড়বেন হাজার হাজার যাত্রী। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে যাত্রীদের। একই সঙ্গে এ সময়ে যদি বিমানের কোনো এয়ারক্রাফট বিকল হয় তখন হজ ফ্লাইট নিয়েও চরম বিপর্যয় দেখা দেবে।

বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী চৌধুরী বলেন, হজের জন্য এয়ারক্রাফট ভাড়া নিলেও বেশ কিছু রুটের ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হতো। হজের এয়ারক্রাফট না আসায় এখন কাটছাঁট একটু বেশি করতে হবে। ৪১৯ আসনের জায়গায় ২১৯ ও ১৭৩ আসনের এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে- হজের এয়ারক্রাফট আসার আগ পর্যন্ত বিমানের নিজস্ব ৩টি বোয়িং৭৭৭ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। তিনি আশা করছেন, বিকল্প ব্যবস্থায় ১০ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে হজের উড়োজাহাজ ঢাকায় পৌঁছে যাবে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। এ বছর ৫৫ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান।

বর্তমানে বিমানের বহরে আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনার জন্য ১২টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে মিসর থেকে ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফট মাসের ১৫ দিন বিকল থাকছে।

উড়োজাহাজ দুটির ৪টি ইঞ্জিনের দুটি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি দুটি ইঞ্জিন দিয়ে জাহাজ দুটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দুটি এয়ারবাস-৩১০-এর মেয়াদ আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যাবে। মেয়াদ শেষে জাহাজ দুটি বহর থেকে বাদ দেয়া হবে। এ দুটি এয়ারক্রাফটের অবস্থাও খুব খারাপ। এক নাগাড়ে ২ দিন ফ্লাই করলেই উড়োজাহাজ দুটি মেরামত না করলে আর উড়তে পারে না। এ ছাড়া ৪টি বি-৭৩৭ বিমানের মধ্যে দুটি পুরনো। এতে হজ চলাকালীন বহরে থাকবে মাত্র ৯টি উড়োজাহাজ। কিন্তু আসন হিসাব করলে সব মিলিয়ে জাহাজ থাকবে মাত্র ৪টি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই ৪টি উড়োজাহাজ দিয়ে আগামী ৩ মাস বিমানের ১৮টি বৈদেশিক স্টেশনের ফ্লাইট পরিচালনা করা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ।
বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩ মাস আগে তৈরি করা ছক অনুযায়ী, হজের জন্য কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া না নেয়া গেলে, তিন মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ৩১৫টি ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হবে। এই সময়ে ১ লাখ ৬ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে না। যার কারণে উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উড়োজাহাজ পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা ও অদূরদর্শিতার কারণে জাহাজ ভাড়া করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অভিযোগ আছে, পরিদর্শনের সময় উড়োজাহাজটি অপর একটি এয়ারলাইন্সের কাছে চুক্তিভুক্ত আছে এটা তারা জানতে পারেনি। তাছাড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদি হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার এক মাস আগে লিজদাতার সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব হতো, তাহলে শেষ মুহূর্তে এ বিপর্যয় হতো না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ বছর বিমানের একটি সিন্ডিকেট চেয়েছিল বিমানের জন্য বোয়িং৭৬৭-এর মতো ছোট একটি উড়োজাহাজ ভাড়া করতে। ওই সিন্ডিকেট এ জন্য বড় অংকের টাকাও গোপনে লেনদেন করেছে ওই লিজদাতা কোম্পানির সঙ্গে। যার কারণে সবকিছু জেনেও বড় উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে সমস্যার বিষয়টি তারা এড়িয়ে গেছেন। জানা গেছে, সিন্ডিকেট এখন বড় উড়োজাহাজ বাদ দিয়ে মঙ্গোলীয় নামে ওই কোম্পানির কাছ থেকে ১টি বি-৭৬৭ উড়োজাহাজ সরাসরি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে লিজ নেয়ার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছে।

আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী : আজ (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম-২০১৬ উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল শুরু হচ্ছে চলতি বছরের হজ ফ্লাইট। এই বিশেষ ফ্লাইট চলবে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর ফিরতি ফ্লাইট ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ইতিমধ্যে হজযাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্প।

হজ ক্যাম্প সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে হজের প্রথম ফ্লাইট (বিজি ১০১১) ৪ আগস্ট সকাল ৮টা ৫ মিনিটে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে। একই দিন বিকাল ৫টায় দ্বিতীয় ফ্লাইট (বিজি ৫০১১) ঢাকা ছাড়বে। প্রথম দুটি ফিরতি ফ্লাইটে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টা ২০ মিনিট ও রাত ১১টা ২০ মিনিটে হাজীরা ঢাকায় ফেরত আসবেন। বাংলাদেশ বিমান ১১২টি বিশেষ ফ্লাইট ও ৩২টি নির্ধারিত ফ্লাইট দিয়ে ৫০ হাজার হজ যাত্রী পরিবহন করবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.