ভারতে জ্বালানির দাম অনুসারেই বিমানের ভাড়ার সীমা

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিমান জ্বালানি এটিএফের দাম যদি কমছে দেখা যায়, তবেই বিমান ভাড়ার বর্তমান সীমা পুনর্মূল্যায়নে বসবে সরকার।

গত ২০২০ সালে দেশ জুড়ে লকডাউন ওঠার পরে ঘরোয়া উড়ানের টিকিটের দাম নিয়ন্ত্রণের পথে হেঁটেছিল কেন্দ্র। দীর্ঘ দিন যাত্রীর অভাবে ধুঁকতে থাকা বিমান শিল্পের আয়ের কথা মাথায় রেখে এক দিকে যেমন ন্যূনতম ভাড়া বেঁধে দেয় সরকার, তেমনই সর্বোচ্চ দাম স্থির করে দেওয়া হয় যাত্রীদের টিকিটের অত্যধিক চড়া দামের হাত থেকে সুরাহা দিতে। পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে সেই সীমা শিথিলও হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে যে ভাবে বিমান জ্বালানির (এটিএফ) দাম বেড়েছে, তাতে এই সীমা তোলার দাবি জানাচ্ছে বিমান সংস্থাগুলি। অন্য দিকে যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া এখন আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই অবস্থায় মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিমান জ্বালানি এটিএফের দাম যদি কমছে দেখা যায়, তবেই বিমান ভাড়ার বর্তমান সীমা পুনর্মূল্যায়নে বসবে সরকার। সেই সঙ্গে রাজ্যগুলিকে বিমান জ্বালানিতে যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) কমানোর আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য বক্তব্য, মন্ত্রীর ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট নয়। বিমান শিল্পের দাবি মেনে টিকিটের দামের ঊর্ধ্বসীমা তোলা বা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন নাকি যাত্রীদের আর্জি মাফিক তা আরও নামিয়ে আনার, সেটা পরিষ্কার বোঝা যায়নি।

২০২০ সালে ২৫ মার্চ থেকে দু’মাস লকডাউন চলার পরে ২৫ মে ঘরোয়া উড়ানে ভাড়া বেঁধে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে করোনার আগের ৩৩ শতাংশে বাঁধা হয় উড়ানের সংখ্যাও। তার পরে ধাপে ধাপে ওই দুই বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হলেও, গত বছর তাতে ফের থাবা বসায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। শেষে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে তৃতীয় ঢেউয়ে নাস্তানাবুদ হয় বিমান শিল্প।

এর পর থেকে হাল কিছুটা হলেও ফিরছিল। বাড়ছিল উড়ান এবং যাত্রী সংখ্যা। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাড়তে বাড়তে এটিএফের দাম পৌঁছে যায় কিলোলিটার পিছু ১.৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সম্প্রতি তা ১৬ শতাংশের মতো কমলেও রয়েছে ১.২০ লক্ষের আশেপাশে। ২০১৯-২০ সালে যে দর ছিল ৫৩,০০০ টাকায়।

এক সাক্ষাৎকারে সিন্ধিয়া বলেন, বর্তমানে বিমান ভাড়া সর্বনিম্ন সীমা থেকে উপরে কিন্তু সর্বোচ্চ সীমা থেকে অনেকটাই কম। কিন্তু বিমান সংস্থার ক্ষেত্রে এটিএফের দাম কিলোলিটারে ৫৩,০০০ টাকায় থাকলেই পরিষেবা খরচের ৩৯% যায় এই খাতে। এখন তা ১.২ লক্ষ টাকা। ফলে এই শিল্পের কাছে এটা চ্যালেঞ্জ। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার ক্রমশ স্থিতিশীল হচ্ছে। …এটিএফের দামও কমে আসছে। পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে আমরা অবশ্যই (ভাড়ার সীমার বিষয়টি) খতিয়ে দেখব।’’

পাশাপাশি মন্ত্রী জানান, গত জুলাইয়ে মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে ২৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এটিএফে ভ্যাট ছিল ২০%-৩০%। কেন্দ্রের বহু অনুনয়-বিনয়ের পরে তাদের মধ্যে ১৬টি রাজ্য তা নামিয়েছে ১-৪ শতাংশে। বাকিগুলিও যাতে সেই পথে হাঁটে সে জন্য চেষ্টা করবেন তাঁরা। এর হাত ধরে সুরাহা হবে বিমান শিল্প তথা রাজ্যগুলিরও।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.