বাংলাদেশকে না জানিয়ে এ দেশে ফ্লাইট সার্ভিস স্থগিত করে দিয়েছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ)। ঢাকায় পিআইএর কান্ট্রি ম্যানেজার আলী আব্বাসকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হয়রানির অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছে পিআইএ কর্তৃপক্ষ। তবে জাল মুদ্রা ও সোনা পাচারের অভিযোগে চার দিন আগে ঢাকায় আলী আব্বাসের বাসা তল্লাশি এবং তাঁকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর প্রতিবাদে পিআইএ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পাকিস্তান সরকার পিআইএর কান্ট্রি ম্যানেজারকে ‘হয়রানি’র বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
অন্যদিকে এ দেশে সন্ত্রাসবাদে সন্দেহভাজন অর্থ জোগানদাতা ও গোপনে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া মাজহার খানসহ পাকিস্তান
হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপর কর্মকর্তার নাম শাহনাজ কাওসার।
গতকাল পিআইএর পক্ষ থেকে পাকিস্তানে সংবাদমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে ফ্লাইট স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের হয়রানির ঘটনায় পিআইএ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পিআইএর মুখপাত্র জানান, গতকাল করাচি থেকে ঢাকাগামী (পিকে-২৬৬) ফ্লাইটটি বাতিল করে দিয়ে বাংলাদেশে সব ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্লাইট পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পাকিস্তানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পিআইএর অভিযোগ, দুই মাস ধরে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পিআইএ কর্মকর্তাদের হয়রানি করছেন। সর্বশেষ চার দিন আগে পিআইএর কান্ট্রি ম্যানেজার আলী আব্বাসের ঢাকার বাসায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় তারা আলী আব্বাস ও তাঁর পরিবারের সদ্যদের হয়রানি করে। এ ছাড়া গত বুধবারের পিকে-২৬৬ নম্বর ফ্লাইট তিন ঘণ্টার জন্য দেরি হয়েছে নিরাপত্তা যাচাইয়ের কারণে। ওই সময় ফ্লাইটের ক্রু ও যাত্রীদের হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করে পিআইএ। পরে আলী আব্বাসকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।
তবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, জাল মুদ্রা ও সোনাপাচার সন্দেহে বেশ কয়েকবার পিআইএ কর্মকর্তাদের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানেও গত ৩১ ডিসেম্বর বেনজির ভুট্টো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাদক পাচারের জন্য এক পিআইএ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ বাহিনী (এএনএফ)। ওই কর্মকর্তার যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে যাওয়ার কথা ছিল।
এদিকে পিআইএ কর্মকর্তা আলী আব্বাস, এর ক্রু ও যাত্রীদের ‘হয়রানি’র ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে গতকাল ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পাকিস্তান। গতকাল পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তাসনিম আসলাম সে দেশের গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আলী আব্বাসের বাসায় তল্লাশি চালানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। পাকিস্তান এ ব্যাপারে বাংলাদেশের জবাবের অপেক্ষায় থাকবে।
এদিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম বলেন, এ বিষয়ে পিআইএ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি।
দুই কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব : গোপনে দেশে চলে যাওয়া পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহার খানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে হাইকমিশনের ঠিকানায় থাকা শাহনাজ কাওসার নামে আরেক কর্মকর্তার হিসাবও তলব করা হয়।
গত রবিবার বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়ে এ দুই কর্মকর্তার ব্যাংক
হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য আগামী ২ মার্চের মধ্যে পাঠাতে বলেছে বিএফআইইউ।
এই ইউনিটটি সাধারণত মুদ্রাপাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে কাজ করে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এ দুজনের নামে বা তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো হিসাব বর্তমানে বা এর আগে পরিচালিত হয়ে থাকলে সে হিসাবের যাবতীয় তথ্য (কাগজপত্রসহ হিসাব খোলার আবেদন ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম এবং শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী) পাঠাতে হবে।’
বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব থাকলে খোলার আবেদন ফরম, কেওয়াইসি ফরম এবং লেনদেনের বিবরণী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের পরামর্শ প্রদান করা হলো।
মোহাম্মদ মাজহার খান, পিতা-মোহাম্মদ আরশাদ খান ও মাতা-নাজির বেগম। এ ছাড়া শাহনাজ কাওসার, পিতা-শাহ ফকির খান, মাতা-জুবাইদা বেগম। চিঠিতে এ দুজনের ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তান হাইকমিশন, গুলশান-২, ঢাকা।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি বনানী মৈত্রী মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোপন বৈঠকের সময় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহার খান এবং মজিবুর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের বনানী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে রাতেই পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রথম সচিব সামিনা মাহতাব মোহাম্মদ মাজহার খানকে ছাড়িয়ে নেন। ছেঁড়া পাসপোর্টে যে ব্যক্তিদের নাম দেখা যায়, সেগুলোতে এমন তিন ব্যক্তির নাম রয়েছে যারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সম্পৃক্ত।
আরও খবর