ঢাকার রাজপথে এমন পদযাত্রা নিকটকালে দেখা যায়নি। দলে দলে শত বাউল। তরুণ থেকে বৃদ্ধ। কারও হাতে একতারা, ডুগডুগি, খমক। কেউ নিয়ে এসেছেন ঢোলক, সারিন্দা, দোতারা। কেউ কেউ আবার হাতে হাত রেখে হাঁটছেন। বাদ্যে ছিল নানান সুর। গানে গানে তাঁরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-পেশার ভেদাভেদ না করে সবাইকে মনুষ্যত্বের আহ্বান করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ১১ আগস্ট থেকে জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী লালন ভাবধারার ‘ভাবসংগীত ও সম্মেলন’। এ আয়োজনের শেষ দিনে গতকাল ছিল বাউলের পদযাত্রা। সামনে ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’সংবলিত ব্যানারসহ নিজের বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে লালন সাঁইয়ের গানের তালে তালে বাউল হাঁটেন ঢাকার রাজপথে। সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি এলাকা থেকে বের হয়ে এ পদযাত্রার পূর্ণতা পায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে।
এর আগে সকালে চিত্রশালায় ছিল বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব আক্তারী মমতাজ। অনুষ্ঠানে বাউল সাধক নহির শাহ, বাউল পাগলা বাবুল ও বাউল হৃদয় সাধু বক্তব্য দেন।
বাউলের দর্শন তা সামগ্রিক সবার জীবনের মূল দর্শন মন্তব্য করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, এ দর্শন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-পেশার মধ্যে ভেদাভেদ না করে সবাইকে মনুষ্যত্বের আহ্বানে একত্র করে। বাউল ভাব দর্শন পারে অন্ধকারের শক্তি রুখে দিতে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে অন্ধকারের শক্তিগুলো বাংলাদেশে তাদের অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। তারা ধর্মের নামে মুক্তমনা মানুষ, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক, শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক, পুরোহিত, ইমাম, বিদেশিসহ নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। বিভিন্ন সময় দেশের নানা প্রান্তে বাউলদের ওপর চালাচ্ছে নির্যাতন। এ অপশক্তিগুলোর মোকাবিলায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বক্তব্যের পরে বাউল সাধক নহির শাহের সঙ্গে সমবেত সবাই লালন সাঁইয়ের ‘সত্য বল সুপথে চল’ গানটি পরিবেশন করেন। বের হয় পদযাত্রা। একক কিংবা সম্মিলিত গানে, কথায় পুরো এলাকা মেতে উঠেছিল লালন-বন্দনায়। প্রায় তিন শ বাউল ফকির এসেছেন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বগুড়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আরও এসেছিলেন ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলের লালন অনুরাগীরা।
আরও খবর