হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনার পেছনে ইসরায়েলের হাত আছে কিনা তা নিয়ে জল্পনা- কল্পনা হচ্ছে। তার মধ্যেই ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “ইসরায়েল ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত নয়।”
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম থেকেও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার জন্য খারাপ আবহাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে এবং সেদিকে মনযোগ দিয়েই খবর প্রকাশ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির খবরে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সোমবার ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে ব্রিফিংয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের নিহত হওয়ার পেছনে ইসরায়েলের হাত নেই বলে জানিয়েছেন।
রোববার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ তাদের সঙ্গে থাকা মোট নয়জন।
সেদিন তারা আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাস নদীর ওপর একটি বাঁধ প্রকল্প উদ্বোধনের পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর তাবরিজে ফিরছিলেন। ঘন কুয়াশার মধ্যে হেলিকপ্টারটি পার্বত্যাঞ্চলে দুর্ঘটনায় পড়ে বলে জানান ইরানি কর্মকর্তারা।
এরপর ৪০ জনের বেশি উদ্ধারকর্মী, অনুসন্ধানী কুকুর এবং ড্রোন দিয়ে শুরু হয় বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কুয়াশার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে উদ্ধারকর্মীদের বেগ পেতে হয়।
পরে সোমবার সকালে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেওয়া একটি তুর্কি ড্রোন ‘হিট সোর্স’ শনাক্ত করলে দুর্ঘটনাস্থলের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পরে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দুর্ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায়।
এমন একটি সময়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত হলেন যখন গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে ইসরায়েল।
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই ইরান ইসরায়েলের চরম শত্রু হয়ে আছে। ইরান মধপ্রাচ্যজুড়ে বছরের পর বছর ধরে তাদের বিভিন্ন ছায়া বাহিনীগুলো গড়ে তুলেছে, যাদের মধ্যে হামাস অন্যতম। হামাসকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের সমর্থন দিয়ে আসছে তেহরান।
এছাড়াও গত মাসেই সরাসরি বিরোধে জড়িয়েছিল দুই দেশ। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের দুই কমান্ডারসহ উচ্চপদস্থ সাত কর্মকর্তা নিহত হন। ইরসায়েল ওই হামলা চালিয়েছে দাবি করে এর প্রতিশোধ নিতে ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান।
সেদিনের সেই হামলার পর দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করলেও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে উভয় দেশই নিজেদের সংবরণ করে নেয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় সেই ছাই চাপা আগুন আবার উস্কে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল কী জড়িত থাকতে পারে?
এ বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু ঐতিহাসিকভাবেই দুই দেশ পরষ্পরের চিরশত্রু। তাই অনেক ইরানি মনে করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের হাত থাকলেও থাকতে পারে। বিশেষ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের। যদিও মোসাদ ইরানের স্বার্থে বার বার আঘাত করলেও এখন পর্যন্ত কখনও সংস্থাটি ইরানের সরকার প্রধানকে তাদের লক্ষ্য বানায়নি।
বিশেষজ্ঞারাও মনে করেন, রাইসি নিহত হওয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের জড়িত থাকার যুক্তি খুব একটা ধোপে টেকে না। কারণ, বর্তমান প্রেসিডেন্টকে গুপ্তহত্যা করা সরাসরি যুদ্ধের আহ্বান এবং ইরান যে তার কড়া জবাব দেবে সেটাও জানা কথা। আর ইসরায়েল শুরু থেকেই ইরানের উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতা নয় বরং দেশটির সামরিক বাহিনী ও পরমাণু প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।