দরজায় ঠকঠক: গ্রেফতার আতঙ্কে চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের জন জীবন

নজরুল ইসলাম বিপ্লব, সহ-সম্পাদক, জার্মানি

বাংলাদেশ ভালো নেই। ভালো নেই বাংলাদেশের দক্ষিণের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সাধারণ জনগণ। বর্তমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সন্দ্বীপেও সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের গণহারে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। যদিও সন্দ্বীপে কোন প্রকার আন্দোলন, সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গত কয়েক দিনে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধ শতাধিক নিরাপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করার অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও নিরীহ জনগণ। যারা ক্ষমাশীন দলের স্থানীয় নেতাদের স্পষ্ট মদদে গ্রেফতার হচ্ছেন বলে অভিযোগ এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এভিয়েশন নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদদে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের দ্বারা লিস্ট করে সেটা সন্দ্বীপ থানা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ রাতের আধাঁরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে লিস্ট ধরে গ্রেফতার করছে। এর মধ্যে অনেকে গ্রেফতার হলেও অধিকাংশ ভুক্তভোগী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যা সন্দ্বীপের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। সুস্পষ্ট জন প্রতিনিধিদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দক্ষিণ সন্দ্বীপে মগধরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রবিউল আলম সমির ও সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে এমনটা করা হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জনাব ইন্জি বেলায়েত হোসেন বলেন,
‘সোনার দ্বীপ সন্দ্বীপ এখন এক আতঙ্কের জনপদ। সন্ধ্যা হলে চলে পুলিশের অত্যাচার। নিরীহ বিএনপির নেতা কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত পঁচিশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হরিশপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মগধরা বিএনপির সহ-সভাপতি, আজিমপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, রহমতপুর ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা সহ উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্র দলের অনেক নেতৃবৃন্দ। সন্দ্বীপে কোন প্রকার ঘটনা না ঘটলেও এই জাতীয় জুলুম নির্যাতন জন মনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে।’

সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট মোঃ আবু তাহের বলেন, ‘সন্দ্বীপে কোন প্রকার সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও বিএনপির শান্তি প্রিয় নেতা-কর্মীরা এলাকায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। এ যাবৎ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ২৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এতে সন্দ্বীপে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ পুলিশের ভয়ে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। বাড়ি ঘরে থাকতে না পেরে অমানবিক জীবন যাপন করছে। পুলিশের এমন নিপীড়ন ও নির্যাতন অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, অন্যায় ও জুলুম।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল আলম সমিরের সাথে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। আরেক ক্ষমতাশীন
দলের নেতা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান প্রথমে বিষয়টি স্বীকার করলেও পরে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যদি তালিকা দিয়ে থাকি তাহলে বলব দিয়েছি। তবে সন্দ্বীপ থানা পুলিশের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। যেহেতু আমার নামে অভিযোগ এসেছে, আমি বলব আমার দেওয়া উচিত ছিল। যা আমি না দিয়ে ভুল করেছি। আমি তালিকা দেয়নি।’ সন্দ্বীপে জন মনে গ্রেফতার আতঙ্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ সহিংসতার সাথে যুক্ত থাকে তাহলে তার মনে ভয়ভীতি থাকার কথা। তবে সন্দ্বীপে এমন কোন পরিবেশ পরিস্থিতি হয়নি। সন্দ্বীপের মত এমন পরিবেশ বাংলাদেশের কোথাও নেই।’

আন্দোলন শহরে চললেও সন্দ্বীপে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, ‘যাদের নামে অভিযোগ এসেছে ও গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই শহরে আন্দোলন ও সহিংসতায় অংশগ্রহণ করে ছিল। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকে সন্দ্বীপে ইতি পূর্বে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তবে এখনো গ্রেফতার শুরু হয়নি। কাউকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’ স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের মন রক্ষার্থে এমন গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কি না সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। জামাত-বিএনপির প্রেতাত্মা ছাড়া এই সব বলার সুযোগ নেই। এই গুলো এক ধরনের প্রপাগাণ্ডা ছাড়া কিছু নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। যদি কোন নিরীহ শিক্ষার্থী এর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে থাকেন, তাহলে লিস্ট দিন। আমি মুক্ত এবং স্বাধীন।’

উল্লেখ্য, এই পর্যন্ত দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সন্দ্বীপের ২ জন মেধাবী তরুণ শহরের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে শাহাদাত বরণ করেছেন এবং শতাধিক আহতের খবর স্থানীয় মাধ্যম এভিয়েশন নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.