সন্দ্বীপ কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ ঘাট উন্মুক্ত হলেও উপরে আছে অদৃশ্য ঢাকনা, দুই মাস পেরিয়ে গেলেও নেই প্রজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সন্দ্বীপ (চট্রগ্রাম)
গত ২২ আগস্ট ছাত্র-জনতার তোপে চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাটস্থ এক জরুরি বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএর উপস্থিত কর্মকর্তাগণ কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌরুটকে উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। ঘোষণার এক মাসের অধিক সময় পার হয়ে গেলেও এখনও ঘাট উন্মুক্তের প্রজ্ঞাপন বা কোনও দাপ্তরিক ঘোষণা দেয়নি বিআইডব্লিউটিএ। ফলে দ্বিধায় আছেন নতুন নৌ উদ্যোক্তাগণ। সূত্রে জানা যায়, এখনও ঘাট উন্মুক্ত হওয়ার কোনও অফিশিয়াল ঘোষণা না থাকায় নতুন নৌযান নামাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের বেশ কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। সূত্রে জানা যায়, এসব ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সন্দ্বীপের কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তার যৌথ উদ্যোগে সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস লিমিটেড কয়েকটি স্পীডবোট দিয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে।
নৌঘাট উন্মুক্ত হওয়ায় বিষয়ে জানতে চাইলে
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান জানান, ঘাট উন্মুক্ত হওয়ায় কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌরুটে এখন যে কেউ যাত্রীসেবা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে পারবে। তিনি আরও জানান, মামলা জনিত কারণে জেলা পরিষদের টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত ও বিআইডব্লিউটিএর টেন্ডার প্রক্রিয়া সচল থাকায় এখন ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা বিআইডব্লিউটিএর উপরই বর্তায়।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে মালিকানা জটিলতার সমাধান ছাড়া হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা করে গায়ের জোরে ঘাট উন্মুক্ত করার সুযোগ কারও নেই। তিনি আরও জানান, নৌরুটে নতুন উদ্যোক্তাদের সেবা দেওয়ার পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। বিগত সরকারের পতনে সুযোগ সন্ধানী কেউ পায়ে পায়ে ঝগড়া করতে এলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিবো।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএ এর মধ্যকার মালিকানা জটিলতায় দীর্ঘদিন যাবৎ আটকে আছে বহুল আলোচিত সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া-কুমিরা নৌঘাট। ২০১৬ সালের হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এই ঘাটের মালিকানা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের কাছে। অপরদিকে, গত বছর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফেনী থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ-বন্দর ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ-কে নৌ-ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়। তাই আইন অনুযায়ী নৌ ঘাটটি পরিচালনা করতে চায় বিআইডব্লিউটিএ। অপরদিকে জেলা পরিষদও হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এখনও ঘাটের মালিক এবং তাদের পরিচালনা কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটির ইজারা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে স্থানীয় দুই সাংসদ (চট্টগ্রাম ৩ ও চট্টগ্রাম ৪), বিআইডব্লিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট পরিচালনা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সকল ঘাট রক্ষণাবেক্ষণ ও ইজারা প্রদানে ক্ষমতা দেয়ায় সমঝোতা স্মারক নবায়ন করতে অনাগ্রহী বিআইডব্লিউটিএ। ২০২০ সালে সেই সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে গত চার বছর ঘাটের মালিকানা বিরোধ নিরসনে দফায় দফায় বৈঠকে বসেও আন্তঃমন্ত্রণালয় থেকে আসেনি কোনও সমাধান।
উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্টে পাঁচটি নির্দিষ্ট কার্যপরিধি নিয়ে কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌরুট পরিদর্শনে আসে বিআইডব্লিউটিএর বিশেষ প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন কার্যপরিধির মধ্যে অন্যতম ছিলো ফেরি চলাচল ও নৌ বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই ও সুপারিশ প্রণয়ন। কিন্তু পাঁচটি কার্যপরিধির মধ্যে ঘাট উন্মুক্তের বিষয়টি না থাকায় কিভাবে সেদিন ঘাট উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হলো তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা জানান, উপস্থিত ছাত্র জনতাকে শান্ত করতে এই কৌশল অবলম্বন করা ছাড়া উপায় ছিলো না।