দেশীয় রিফাইনারীর জ্বালানি তেলের দাম কমানোর আদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট : ৫ মাস আগে গেজেট কার্যকর করার নির্দেশ কেন বাতিল করা হবে না সে মর্মে সরকারকে রুল
দেশীয় রিফাইনারীর কাছ থেকে কেনা জ্বালানী তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেছে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারী তেল পরিশোধন কোম্পানী পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারী কোম্পানী লিমিটেড। গত ৮ মার্চ এক গেজেটে জ্বালানী বিভাগ তেল ভেদে প্রতি লিটার দাম ৮ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। আর ৫ মাস আগের তারিখে নতুন এ দর কার্যকর দেখানো হয়।
হাইকোর্ট নভেম্বর মাস থেকে দাম কার্যকর করণ সংক্রান্ত এই গেজেটটি কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে সরকারের বিরুদ্ধে রুলনীশি জারি করেছে। একই সঙ্গে গেজেটে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে দাম কার্যকরের নির্দেশনাটি স্থগিত করে দেয়। তবে গেজেট প্রকাশের তারিখ থেকে দাম কমার সরকারী নির্দেশ কার্যকর থাকবে। গত সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আবেদন কারীর পক্ষে মামলা পরিচালণা করেন রারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।
এদিকে মামলা দায়েরের পাশাপাশি দেশীয় ১১টি রিফাইনারী কোম্পানী হঠাৎ তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে কমানোর গেজেটটি পুর্ণবিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। আবেদনে তারা বলেছে, এটি বাস্তবায়ন হলে কোম্পানীগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কমপক্ষে ১০ হাজার লোক বেকার হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একজন রিফাইনারীর মালিক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের কাঁচামাল কনডেসেটের (প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত) দাম কমেছে খুবই অল্প।
কিন্তু সে হিসাবে তেলের দাম কমানো হয়েছে অনেক বেশি। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে আমাদানী করা কনডেসেটের দাম আর বিপিসির কাছ থেকে কেনা কনডেসেটের দামের মধ্যেও ব্যাপক বৈষম্য তৈরী করা হয়েছে। ফলে তাদেরকে বিপুল লোকসান গুণতে হবে। এই বৈষম্যের কারণে দেশে আন্তজাতিক মানের পেট্রোল ও অকটেন তৈরী হবে না। একারণে তারা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে। জ্বালানী মন্ত্রনালয় সুত্রে জানাগেছে এ বিষয়ে তারা রিফাইনারী কোম্পানীগুলোর সঙ্গে বসবে এবং কোন বৈষম্য তৈরী হলে সেটা দুর করবে। কোন প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
গত ৮ মার্চ মঙ্গলবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় তেলের দাম কমানো সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করে। প্রজ্ঞাপনে তেলের দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা আন্তজাতিক বাজারে যে হারে জ্বালানী তেলের দাম কমেছে তাতে রিফাইনারী থেকে কেনা তেলের দাম কমানো নয়, বরং সরকারি ভাবে বিক্রি করা তেলের দাম কমানোর দাবি জানান। তাদের বক্তব্য সাধারণ মানুষের সবিধা দিতে হলে বিপিসিকে তেলের দাম কমাতে হবে।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম যে হারে কমেছে তাতে বিপিসিকে এই মুহুর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ থেকে ৬ টাকা কমানো উচিত। তিনি বলেন, তেলের দাম না কমিয়ে সরকার ইতোমধ্যে তার প্রতিশ্র“তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। এখন লুটপাট চালাতে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
তার মতে মুলত তেল চুরি, দুনীতি আর লুটপাটের জন্যই বিপিসি ইচ্ছা করেই তেলের দাম কমাচ্ছে না। আন্তজাতিক বাজার থেকে অকটেন ও পেট্রোল ক্রয়ের জন্য তারা দেশীয় শিল্পগুলো ধ্বংস করতে চাচ্ছে। কারণ তেল আমদানী করতে পারলে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ তৈরী হবে। তার মতে বর্তমানে দেশের চাহিদার (অকটেন ও পেট্রল) ৪০ শতাংশ দেশীয় রিফাইনারীগুলো যোগান দিচ্ছে। বাকী ৬০ শতাংশ অকটেন ও পেট্রল আমদানী করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমদানী করা পেট্রল ও অকটেন দেশীয় পেট্রেল ও অকটেনের চেয়ে গুণগন মানে খারাপ।