ভোটের আবহে ফাঁকা রাজধানী ঢাকা।
প্রায় দেড় কোটি লোকের ব্যস্ত রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়েছে। জনসমাগম এলাকাসহ বিনোদন কেন্দ্র, মার্কেট বিপণিবিতান ও রাজপথ নীরব হয়ে পড়েছে। ঢাকায় বসবাসকারীরা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাসা-বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে না। টানা তিন দিন বন্ধ থাকায় অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজ চত্বর জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
মূলত ভোট দিতে গ্রামের উদ্দেশে ছুটে যাওয়ার কারণেই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে ঢাকা। যদিও দু’দিন আগেও (বৃহস্পতিবার) জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের মিছিল-সভা ও প্রচারকাজে তীব্র যানজট ও লোকের ভিড় ছিল। ব্যস্ত শহরে স্বাভাবিক চলাফেরা ছিল কঠিন। শনিবার শহরের চিত্র ভিন্ন আকার ধারণ করেছে। তবে দূরপাল্লার বাস স্টেশন-কাউন্টার ও লঞ্চ টার্মিনালে লোকজনের ভিড় ছিল। ভোটের আগের দিনও অনেকে গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
আজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সারা দেশে। এজন্য এ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর আগের দু’দিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায় টানা তিন দিন ছুটি দাঁড়ায়। ফলে বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা অফিস করে অনেকেই চলে গেছেন গ্রামে। আবার এ ছুটির সঙ্গে আরও দু-একদিন ছুটি নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে ঢাকা শহর বৃহস্পতিবার থেকেই ফাঁকা হয়ে পড়ে। এদিকে নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশনা অনুসারে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা হয়। এরপর থেকে বাসাবাড়িতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন রাজধানীর বেশির ভাগ প্রার্থী।
শনিবার মধ্য রাত থেকে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ফলে শনিবার মধ্যরাতের আগে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন বেশির ভাগ মানুষ। যে কারণে পুরো শহর একরকম ফাঁকা হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে পরিবহন পাওয়া যায়নি। অন্যান্য দিনের তুলনায় পরিবহনও কম চলে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমি দেখেছি। মহাসড়কে গাড়ি চলাচল করতে দেখেছি। এবার একটু ভিন্ন অবস্থা দেখছি। মহাসড়ক সংলগ্ন নির্বাচনী এলাকায় ভোট দিতে আগেভাগেই চলে যাচ্ছেন ভোটাররা।
সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় নির্বাচনী মিছিল, স্লোগান, গান ও বাদ্য-বাজনায় মুখরিত ছিল ঢাকা। রাজপথ থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগলি সর্বত্রই ছিল জমজমাট প্রচারণা। শনিবার রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর, ধানমণ্ডি, ঝিকাতলা, হাজারীবাগ, রমনা ও তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে অন্যদিনের তুলনায় রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা। মানুষের ভিড়ও নেই। ফলে কোথাও কোনো শব্দদূষণ নেই। জনসমাগমে ব্যস্ত ধানমণ্ডি লেক, টিএসসি, শাহবাগ, শিশুপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনার মাঠসহ বিভিন্ন এলাকা ছিল ফাঁকা। এসব স্থানে লোকজনের উপস্থিত ছিল কম। রাজধানীর সিটি কলেজ থেকে কুড়িল বিশ্বরোড আসতে অন্য সময় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে সিগন্যাল ও যানজটের কারণে প্রায় এক থেকে সোয়া ঘণ্টা সময় পরিবহনে লাগে। শনিবার ছিল ভিন্ন চিত্র। ভিআইপি পরিবহনের একটি বাসে ২০ মিনিটেই সিটি কলেজ থেকে কুড়িল বিশ্বরোডে আসা হয়েছে। যাত্রী, সিগন্যাল ও যানজট কোনোটির ভোগান্তি ছিল না। এদিকে রাজধানীর রেলস্টেশনের পাশাপাশি বাস টার্মিনালগুলোয় ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ভোটের আগের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ভোট দিতে তারা যাচ্ছিল নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে। রিকশাচালক ফরিদ কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জের ভোটার। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে জানান, গন্তব্যে পৌঁছতে দু’ঘণ্টা লাগবে। এজন্য শেষ দিন শনিবার গ্রামের বাড়িতে রওনা দিচ্ছেন। আর বৃহস্পতিবার পরিবার ও সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। সায়েদাবাদে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কুমিল্লার শিমুল। তিনি বলেন, ‘বাড়ি যাচ্ছি ভাই। ভোট দেব।’ বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করা আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা তো যাচ্ছি ভোট দিতে। ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় মহাখালী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়েছিলেন বিল্পব নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ছুটি পেয়েছি ভাই। ভোট দেব। তাই বাড়ি যাচ্ছি।’
এদিকে নৌরুটেও চাপ পড়ছে যাত্রীদের। একসঙ্গে সবাই যাচ্ছে গ্রামে ভোট দিতে। নির্বাচনের কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ পড়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে শনিবার সকাল থেকেই দেখা যায় অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। এতে নৌরুটের উভয় পারে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ছিল পাঁচ শতাধিক যানবাহন।
অপেক্ষায় থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি’র ঘাট কর্মকর্তারা জানান, মূলত ৩০ ডিসেম্বের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ঢাকা শহরে বসবাসরত দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট হয়ে। শুক্র, শনি ও রোববার সরকারি ছুটি হওয়ায় এ নৌরুটের লঞ্চ ও ফেরিগুলোয় বেড়েছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। যাত্রীবাহী ৮৭টি লঞ্চ, আড়াই শতাধিক সি-বোট যাত্রী পারাপারে ব্যস্ত এ নৌ রুটে।