এভিয়েশন নিউজ: মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি মানের একটি বিমানবন্দরে পরিণত করতে সংস্করণ করা হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। নতুন আঙ্গিকে শাহজালালে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতীয় রানওয়ে এর পাশাপাশি দুটি টার্মিনালের সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রায় চারগুণ বড় আকারের আরও একটি টার্মিনাল। নতুন টার্মিনালে বসবে ৩২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বাড়বে বিমানবন্দরের ড্রাইভওয়ে। এর মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়ে যাবে বর্তমান ক্ষমতার চার গুণ। ফলে দিনে প্রায় এক হাজারটি উড়োজাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম হবে এই বিমানবন্দর।
বিমান বন্দর সূত্র জানায়, ১৯৮১ একর জমি ঘিরে রয়েছে এই বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বর্তমানে তার মোট ক্যাপাসিটির ৪০ ভাগ ব্যবহার করছে। নতুন অবকাঠামো স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য আরও ৬০ শতাংশ স্থান রয়ে গেছে। সেখানেই এখন দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টামর্নিাল নির্মাণ করা হবে।
বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি এন্ড রেগুলেশন) উইং কমান্ডার নাজমুল আনাম জানান, প্রতিবছরই প্রায় ৫ লাখ করে ভ্রমণ পিপাসু লোক বাড়ছে। এতে বর্তমান এয়ারপের্টে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়না। একসঙ্গে ৪টি উড়োজাহাজ নামলে তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় এয়ারপোর্ট অথরিটিকে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বেবিচক নতুন রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমান রানওয়েটির সমান্তরালেই নতুনটি নির্মিত হবে। এতে করে শাহজালালে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সংখ্যা আরো বাড়লেও তা ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হবে না।
দেশের এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সব বিমানবন্দরের অভিভাবক এই বেবিচকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বছরে ৬০ লাখ যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। প্রতি বছরই এই সংখ্যা গড়ে ৫ লাখ করে বাড়ছে। একইভাবে অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ রুটে ৬ লাখের মতো যাত্রী ব্যবহার করছে দেশের প্রধান বিমানবন্দর। বেবিচক জানায়, শাহজালালে বর্তমানে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৪০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। নতুন রানওয়ে, টার্মিনাল ও বোর্ডিং ব্রিজ নির্মিত হলে এর চারগুণ বাড়িয়ে প্রায় এক হাজার উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ সম্ভব হবে।
দ্বুাই বিমানবন্দরের মতো দুটি প্যারালাল রানওয়ে হয়ে গেলে এবং তৃতীয় টার্মিনালটির নির্মাণ হলে তাতে আরও ৩২টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। বর্তমান ৮টি বোর্ডিং ব্রিজসহ মোট ব্রিজের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০টি। এই সক্ষমতা আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলোকে আকৃষ্ট করবে। তাতে বিমানবন্দরের ব্যস্ততা যেমন বাড়বে, আয়ও বাড়বে, এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শাহজালালের বর্তমান রানওয়েটি গেল বছর মেরামত (ওভারলে) করা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় দফায় মেরামত, যার মাধ্যমে আগামী ১৪ বছর পর্যন্ত এটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এরপর এই রানওয়েটি আর মেরামতযোগ্য থাকবে না। তখন নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
বেবিচক জানায়, তাই ওই সময়ের আগেই নতুন রানওয়ে নির্মাণ শেষ হবে। এতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। প্রায় দুই দশক আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রধান বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। পরবর্তীতে এই কাজটি আর এগোয়নি। তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উৎসাহেই বিমানবন্দর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।
বেবিচক সূত্র জানায়, দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনালের পাশাপাশি এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইমিগ্রেশন ডেস্ক বাড়ানো, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংসহ প্রতিটি স্তরে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে এই পরিকল্পনার আওতায়। শাহজালালের যত্রীসেবা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। এক সঙ্গে তিনটি থেকে চারটি উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে অবতরণ করলেই যাত্রীদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এইসব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টিও নতুন কর্ম পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে ধাপে ধাপে বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজও কম হয়নি।
বেবিচক জানায়, ১৯৮২ সালে শাহজালাল বিমানবন্দর যখন যাত্রা শুরু করে তখন প্রতিদিন গড়ে ৬০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করতো। তখন মাত্র ৩টি পার্কিং নিয়ে এই বিমানবন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে পার্কিং সংখ্যা ২৯টি। এদিকে ডেনমার্কের অর্থায়নে ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ, রানওয়ে মেরামতসহ ৫৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অরগানোগ্রামে ৭ হাজার শ্রমশক্তি নিয়োগের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩ হাজার শ্রমশক্তি নিয়োগ রয়েছে। নতুন অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তি নিয়োগ করে সেবার প্রতিটি স্তরকে আধুনিক ও উপযোগী করে তোলা হবে বলেও জানায় বেবিচক। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্রমবর্ধমান যাত্রীচাপ সামলাতেই নির্মিত হচ্ছে দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনাল। যে জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ প্রায় সম্পন্ন। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রী সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানায় বেবিচক। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আগামী দেড় বছরের মধ্যে রানওয়ে ও টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে বেবিচকের পরিচালক (এটিএস) আজাদ জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দেড় বছরের মধ্যে কাজ শুরু হলে আগামী ৫ বছর পর নতুন রানওয়ে ও টার্মিনাল ব্যবহার উপযোগী হবে। যাত্রী সংখ্যা বাড়ার কারণে বিমানবন্দরের চাপ সামলাতে এই ব্যাপক উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।