চালু হচ্ছে ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট

dhakaআসছে বছরের শুরুতে ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এতথ্য জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ‘ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিসস্ট্রেশন’ (এফ.এ.এ.’র)-এর অধীনে ক্যাটাগরি ওয়ানে উন্নিত হবে। ক্যাটাগরি ওয়ান অর্জনের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর ঢাকা নিউইয়র্ক ফ্লাইট আগামী বছরের শুরুর দিকে চালু করা সম্ভব হবে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মে: ডেভিড মিল এবং বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম সানাউল হক বক্তৃতা করেন।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালে ফেডারেল এভিয়েশন এ্যাডমিনিসট্রেশন (এফএএ) ইউএসএ বাংলাদেশ’কে সেফটি রেটিং এ নির্ধারন করে। ২০০৯ সালে একইভাবে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) কর্তৃক ব্ল্যাক লিস্টেড করা (কালো তালিকা) হয়। এ ধরনের আন্তর্জাতিক মানের অডিট ৮টি ভাগে বিভিন্ন প্রকারের প্রটোকল কোয়েশ্চান দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর প্রথমে সিভিল এভিয়েশন আইন, নিয়ম-কানুন দ্বারা সিদ্ধ হতে হয়। তারপর অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণ সাপেক্ষে এয়ারলাইন্স ও অর্গানাইজেশন এ বাস্তবায়নের সমস্ত দলিল বা ডকুমেন্টস্্ ও রেকর্ড প্রদান করতে হয়।

সেজন্য ফ্লাইট ষ্ট্যান্ডার্ডকে সমুন্নত রাখার নিমিত্ত প্রয়োজন হয় আন্তর্জাতিক মানের সিভিল এভিয়েশন ইন্সপেক্টর, যুগোপযোগী আইন, টেকনোলজী এবং কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা। এ ধরনের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০১২ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রথম ২০১২ সালের জুলাই মাসেই আইকাও এর কালো তালিকা থেকে বেবিচক বেরিয়ে আসে।

কালো তালিকা থেকে বের হওয়া একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করে কারণ কোন দেশ কালো তালিকাভূক্ত হলে তার উপরে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় যা কিনা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। যেমন বাংলাদেশের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ছিল-কোন এয়ারলাইন্স তার বহরে নতুন কোন বিমান সংযোজন করতে পারবে না, কোনো নতুন এয়ারলাইন্স চালু করতে পারবে না, বিদ্যমান আভ্যন্তরীন এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুটে যেতে পারবে না, কোন দেশ সহজে বাংলাদেশের সঙ্গে এভিয়েশনজনিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে পারবে না ইত্যাদি।

পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি এন্ড রেগুলেশন্স) গ্রপ ক্যাপ্টেন এস এম নাজমুল আনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আইকাও কালো তালিকা থেকে বের হবার পর আমাদের শংকা ছিল এ রেটিংয়ে এর মান ধরে রাখা। সেলক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গত দু’বছরে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ইন্সপেক্টর গ্র“প তৈরী করেছি। আধুনিক অফিস ও অটোমেশনে যাওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া চলছে। এখন এফএএ ক্যাটাগরি-১ এ পৌছানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পথে। এ বছরেই আমরা এফএএ অডিট করতে চাই যা কিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’কে আমেরিকা গমনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সে লক্ষ্যে ২০১১ সালের এফএএ টেকনিক্যাল রিভিউ অনুযায়ী ৬১টি ফাইন্ডিংস এর মধ্যে ৪৫টির কাজ শেষ, বেবিচকের ৩টি শেষ হবে জুনের মধ্যে এবং বাকী ১৩টি বেবিচকের অর্গানোগ্রাম ও আইন সংক্রান্ত যা সরকারের নিকট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আরও ৫০০০ জনবলের অর্গানোগ্রামের কাজও অনেক দুর এগিয়ে গেছে। সিভিল এভিয়েশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ ও ১৯৮৫ কে যুগোপযোগী করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় আশা করছে ৩-৪ মাসের মধ্যে এ অর্ডিন্যান্স দু’টিকে আইন আকারে পার্লামেন্টে পাশ করানো সম্ভব হবে। নতুন আইন কার্যকর হলেই শুধুমাত্র সমস্ত প্রটোকল কোয়েশ্চান গুলোর উত্তর দেয়া সম্ভব হবে এবং Primary Aviation Legislation I Specific Operating Regulation নামে ২টি প্রধান অঞ্চলে বেবিচক পাশ করতে পারবে।

কাজ এগিয়ে রাখার জন্য বেবিচক তার নিজস্ব সমস্ত ফ্লাইট স্টান্ডার্ড রেগুলেশান ইতিমধ্যে প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে। জুন-জুলাই ২০১৫ এর মধ্যে নতুন এয়ার নেভিগেশান অর্ডার গুলো প্রকাশ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানের এ নিয়ম-কানুনের জন্য বেবিচকের সাথে আমেরিকা ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান JDA Aviation Technology Solutions Ltd নামে এ্রকটি প্রতিষ্ঠান নভেম্বর ২০১৪ থেকে এক বছরের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আজ এফএএ ক্যাটাগরি-১ এ পৌছানোর লক্ষ্যে গত ০৮ মার্চ থেকে ০৫ মে ২০১৫ FAA Oklahoma Aviation Academy পরপর চারটি ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করল। চারটি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে বেবিচকের ১৩৬ জন ফ্লাইট ষ্ট্যান্ডার্ড ইন্সপেক্টরদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করল, অন্যথায় তাদের দ্বারা পরিচালিত সকল ইন্সপেক্টশন এফএএ এর কাছে গ্রহনযোগ্য হতো না। কাজেই, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ইন্স্পেক্টশন এর মানে আরও এক ধাপ এগ্রিয়ে গেল এবং এফএএ ক্যাটাগরি-১ এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইন্ডিংস এর কাজ সম্পন্ন হলো।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.