বেবিচকের উচ্চ মাশুল কমানোর দাবি দেশীয় এয়ারলাইনসের

বেবিচকের উচ্চ মাশুল কমানোর দাবি দেশীয় এয়ারলাইনসের।

উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশনসহ বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) অর্থ পরিশোধ করে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। তবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এসব মাশুলে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এ কারণে আঞ্চলিক রুটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করছে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। খরচ সামাল দিতে অনেকে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে আনার কথাও জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে একটি এটিআর-৭২ অথবা ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজকে ল্যান্ডিং ও নেভিগেশনের জন্য বেবিচককে দিতে হয় ২ হাজার ৪০৩ টাকা। কিন্তু ঢাকা-কলকাতা রুটে একই উড়োজাহাজের জন্য প্রতি ফ্লাইটে এ চার্জ ৫২ হাজার ৪৫০ টাকা। এর মধ্যে ট্রাভেল ট্যাক্স রয়েছে ৪ হাজার ৬১৮ টাকা (রিটার্ন টিকিট)। যদিও দূরত্ব কম হওয়ায় ঢাকা-কলকাতা রুটে টিকিটের মূল্য অভ্যন্তরীণ রুটের চেয়ে খুব একটা বেশি নিতে পারে না এয়ারলাইনসগুলো।

উদাহরণ হিসেবে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে যাত্রীপ্রতি রিটার্ন টিকিটের মূল্য রাখা হয় ট্যাক্সসহ গড়ে ৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৭০ আসনের উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালিত একটি রিটার্ন ফ্লাইট থেকে টিকিট বিক্রি বাবদ আয় গড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ট্যাক্স (যাত্রীপ্রতি ৫২৫+৩৮ টাকা) ৩৯ হাজার ৪১০ টাকা। আর উড়োজাহাজ ল্যান্ডিং ও নেভিগেশনের জন্য বেবিচককে পরিশোধ করতে হয় ৪ হাজার ৮০৬ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রী প্রতি রিটার্ন টিকিটের মূল্য ট্যাক্সসহ গড়ে ১২ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৭০ আসনের টিকিট বিক্রি বাবদ এয়ারলাইনস পায় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু একই উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে এ রুটে শুধু অ্যারোনটিক্যাল চার্জই (ল্যান্ডিং ও নেভিগেশন) দিতে হয় ৮৭ হাজার ৬৩ টাকা। পাশাপাশি ৭০ আসনের জন্য ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৬০ টাকা। এর বাইরে রয়েছে বিদেশে স্টেশন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচালন ব্যয়।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে যে ভাড়ায় কলকাতায় দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো যাত্রী পরিবহন করছে, তাতে লোকসান ঠেকানো খুব কঠিন। কারণ আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অ্যারোনটিক্যাল চার্জ ও জেট ফুয়েলের দাম বেশি হওয়ায় এয়ারলাইনসগুলোর পরিচালন ব্যয় বেশি হচ্ছে। ব্যয় কমাতে গত জুন থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে ফ্লাইট সংখ্যা সপ্তাহে ১৪টি থেকে কমিয়ে সাতটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ অবস্থায় সব চার্জ সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করলে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকে থাকা সম্ভব হবে উল্লেখ করে মফিজুর রহমান বলেন, দেশীয় এয়ারলাইনসকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক দেশের সরকারই ভর্তুকি দেয়। জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যও দেশের এভিয়েশন খাতের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার নজর দিলে ভালো হয়।

এর আগে ২০১৭ সালে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোকে প্রণোদনা দেয়ার অংশ হিসেবে আঞ্চলিক রুটের অ্যারোনটিক্যাল চার্জ কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল বেবিচক। ৩০ হাজার কেজি পর্যন্ত ওজনের উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ফ্লাইটের অ্যারোনটিক্যাল চার্জ একই রাখার একটি প্রস্তাবও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সংস্থাটি। সেটি অবশ্য আর আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দেশী এয়ারলাইনসগুলোকে প্রণোদনা দিতে আঞ্চলিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে অ্যারোনটিক্যাল চার্জ কমানোর একটি উদ্যোগ ছিল। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।

উল্লেখ্য, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে পাওয়া অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জই বেবিচকের আয়ের একমাত্র উৎস। এ অর্থ দিয়েই বিমানবন্দর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো হয়। তবে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুুফ করার দাবি জানিয়ে আসছে। সম্পূর্ণ মওকুফ করা সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণের সমান রেটে চার্জ নির্ধারণেরও একটি প্রস্তাব তাদের রয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.