জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় এয়ার টিকেটের দাম বাড়ছে

জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায় এয়ার টিকেটের দাম বাড়ছে।

হঠাৎ আরেক দফা উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এতে বিপাকে পড়েছে দেশী এয়ারলাইন্সগুলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদেরকে এখনই বাড়াতে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের টিকেটের দাম। পরিণামে দায়টা পড়বে গিয়ে যাত্রীদের ঘাড়ে। এয়ারলাইন্সগুলোর অভিযোগ তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়াই বিপিসি একচেটিয়া নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়াচ্ছে। এতে কার্যত এভিয়েশন খাতেই স্থবিরতা নেমে আসবে।

জানা গেছে, সর্বশেষ দাম বাড়ানোর ফলে অভ্যন্তরীণ রুটের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলোকে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল কিনতে এখন গুনতে হবে ৭৩ টাকা। আর আন্তর্জাতিক রুটের ক্ষেত্রে পড়বে লিটারপ্রতি দশমিক ৭১ ডলার। এ নিয়ে এ বছর তৃতীয়বারের মতো বাড়ল জেট ফুয়েলের দাম। যা আগে ছিল ৭২ টাকা, গত মার্চে যা বিক্রি হয়েছে ৬৭ টাকায়। নতুন করে দাম বাড়ানোয় অভ্যন্তরীণ রুটের ক্ষেত্রে জেট ফুয়েলের দাম পড়ছে লিটারপ্রতি ৭৩ টাকা, আন্তর্জাতিক রুটের ক্ষেত্রে পড়ছে লিটারপ্রতি দশমিক ৭১ ডলার, যা আগে ছিল দশমিক ৬৮ ডলার। এ ছাড়া মার্চে দাম ছিল দশমিক ৬২ ডলার মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের এভিয়েশন ব্যবসার জন্য বড় ধরনের হুমকি। লিটারে এক ডলার বেশি হলে প্রতিটি ফ্লাইটে বাড়তি খরচ পড়ে প্রায় ৩২ লাখ টাকা। এই হিসাব এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষ থেকে তৈরি করা হলেও বিপিসি এতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সম্প্রতি সব এয়ারলাইন্সকে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি অবগতি করে চিঠি দিয়েছে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। চিঠিতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেট এ-১ তেলের বিক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে। যা ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিপিসির উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জেট ফুয়েলের দাম কম-বৃদ্ধি করা হয়। জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসির মূল্য নির্ধারণ কমিটি। কমিটি সব সময়ই জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং করেই মূল্য সমন্বয় করে। এবারও তাই করা হয়েছে।

তবে আকস্মিক জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছে দেশী এয়ারলাইন্সগুলো। তারা বলছেন, জেট ফুয়েলের দাম বাড়ালে এয়ারলাইন্সের পরিচালন ব্যয় বাড়বে। এতে বিদেশী এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব হবে না। কারণ এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্স অনেক কম মূল্যে জ্বালানি পায়। এভাবে চললে দেশী এয়ারলাইন্সের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এমনিতেই নানা সঙ্কটে এয়ারলাইন্সগুলো ধুঁকছে, তার ওপর হঠাৎ করে আরেক দফা দাম বাড়ানোটা হচ্ছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ সম্পর্কে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চীফ অপারেশন অফিসার আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, দফায় দফায় জেট ফুয়েলের দাম বাড়া বাংলাদেশের এভিয়েশন ব্যবসার জন্যে বড় ধরনের হুমকি। অপারেশনে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে দেশে বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলো এমনিতেই ন্যুজ হয়ে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার অর্থ আরও ক্ষতি। তিনি বলেন, বেশিরভাগ দেশী এয়ারলাইন্সে বোয়িং ৭৩৭ ও ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয়। এসব বিমানের গড়ে তেলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার গ্যালন। বিদেশী এয়ারলাইন্সের তুলনায় যদি জ্বালানির দাম লিটারে এক ডলার করেও বেশি হয়, তাহলে প্রতিটি ফ্লাইটে দেশীয় এয়ারলাইন্সের বাড়তি খরচ গুনতে হয় প্রায় ৩২ লাখ টাকা। কেবল মধ্যপ্রাচ্যে নয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের জেট ফুলের দাম বেশি। এমনিতেই লাভ নেই তার ওপর দফায় দফায় জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোয় বেসরকারী এয়ারলাইন্সের ব্যয় বাড়ছে। সবমিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা।

এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান সামছুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, জেট ফুয়েলের দাম বাংলাদেশে বেশি- এ কথা ঠিক নয়। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ সংক্রান্ত কমিটি জেট ফুয়েলের দাম পুনর্নির্ধারণ করে থাকে। এবারও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দাম বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেট এ-১ জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ চাহিদা ছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার ১৪২ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৮৫ হাজার টন ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেট এ-১ জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮২২ টনে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এভিয়েশন খাত যেভাবে স্ফীত হচ্ছে তাতে আগামী পাঁচ বছরে সেটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.