‘যত চাপই থাকুক সড়ক আইন বাস্তবায়ন হবে’

‘যত চাপই থাকুক সড়ক আইন বাস্তবায়ন হবে’

কোনো চাপেই নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের পথ থেকে সরকার সরে আসবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

একই সঙ্গে এই আইন প্রয়োগে যেন অযথা বাড়াবাড়ি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে রোববার ও সোমবার বিভিন্ন জেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে আইনটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের চাপ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যত চাপই থাকুক আইনটি বাস্তবায়ন করতেই হবে।

এটি পার্লামেন্টের আইন, বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো প্রকার ধর্মঘট-বন্ধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আইন প্রয়োগের সময় অযথা যেন বাড়াবাড়ি না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পরিবহন ধর্মঘট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি জানি, তাদের সঙ্গে আমাদের সচিব আলোচনা করেছেন, আমিও কথা বলেছি, দেখেন না কি হয়। তাই বলে আইন প্রয়োগ না করে সরে যাব, এটি কি আপনারা চান? আপনারাও আমাকে সহযোগিতা করুন, তারা তো চাপ দেবেই।

প্রথম পর্যায়ে আইনটি সহনীয়ভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে আইনটি সংযুক্ত করে যে বিষয়টি অসম্পূর্ণ ছিল গতকাল (রোববার) গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। আজ (সোমবার) থেকে মোবাইল কোর্ট কার্যকর হচ্ছে। আইন প্রয়োগে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অযথা হয়রানি কিংবা বাড়াবাড়ি বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। সহনীয় মাত্রা মানে, বাড়াবাড়ি যেন না করে, এটাই বলছি।

পার্কিং সুবিধা নেই বা পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, রিকশাচালকদের লাইসেন্স নেই- এসব ছাড়া আইনটি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ আইন শুধু ঢাকার জন্য নয়। এছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য তাদের অন্যদিকে মনোযোগ ছিল। তারা শিগগিরই মিটিং করবে, আমি নিজেই মিটিং ডেকেছি।

বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইনটি আগের তুলনায় কঠোর করা হয়েছে। কঠোর করার উদ্দেশ্য শাস্তি দেয়া নয়, সবার কল্যাণে সড়ককে নিরাপদ করা, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা। আইনটিতে একটি নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে তা হল চালকদের জন্য পয়েন্ট সিস্টেম, উন্নত বিশ্বের মতো আইন অমান্য করলে চালকদের পয়েন্ট কর্তন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিবহন মালিকদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অভিযুক্ত যিনিই হোন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনটি বাস্তবায়নে বিআরটিএ কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। নতুন ডায়নামিক চেয়ারম্যান এসেছে, বিআরটিএতে ভিড় লেগেই আছে। বিআরটিএতে জনবলও বাড়ছে, এটি একটা চ্যালেঞ্জ। সবাই সহযোগিতা করলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি, বিএনপি সেটি জেনেও না জানার ভান করছেন। তিনি বলেন, বিএনপিতে অনেক বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি আছেন নেতৃত্বে। আমি অবাক হয়ে যাই, তারা এমওইউ ও চুক্তির মধ্যে পার্থক্য- এটা বোঝেন না। চুক্তি তো হয়নি, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও চুক্তি তো এক কথা নয়।

ভারতের সঙ্গে চারটি এমওইউ ও তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এমওইউকে কেন চুক্তি বলছে, আমার প্রশ্ন। এখানে নাথিং সিক্রেট, এভরিথিং ইজ ওপেন সিক্রেট। এমওইউ কোনোটার সিক্রেসি কিছু নেই।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযান যে থামেনি তা প্রধানমন্ত্রী সংসদেও বলেছেন। উপজেলা পর্যন্ত এ শুদ্ধি অভিযান চলতে থাকবে। অভিযান শুরুর পর যারা দেশত্যাগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরেছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ খতিয়ে দেখছে, সে রকম কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কারও ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। টার্গেট অ্যাচিভ করার জন্য যত রকমের দরকার, স্যাক্রিফাইস করা হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকার কাউন্সিলরদের মধ্যে কম অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবুও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

জি কে শামীমের মতো ঠিকাদার সড়ক খাতে রয়েছে কিনা প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ রকম কেউ আমার এখানে ঢুকতে পারেনি। আমাদের এখানে মূলত কাজগুলো করে আর্মি, মোনায়েম কোম্পানি, রেজা কন্সট্রাকশন ও মীর আক্তার। কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে আমার এখানে বৈঠক করিনি। তারা আলাপ করলে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলাপ করে।

পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে জানতে চাইল তিনি বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে হাহাকার কমে যাবে, দু’তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আসা শুরু করলে হাহাকার কমে যাবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.