করোনা পরিস্থিতিতে এবছর হজ বাতিল হতে পারে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সৌদি আরবে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে । লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ১৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮৫ জনে। মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। লকডাউন করা হয়েছে মক্কা-মদিনাসহ পুরো দেশ। জারি হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কারফিউ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে কি-না সেটা নিয়ে  অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সৌদি কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর হজ বাতিল হতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে অবশ্য হজ বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে আধুনিক ইতিহাসে এটা বিরলতম ঘটনা। সর্বশেষ প্রায় ২০০ বছর আগে ১৭৯৮ সালে হজ বাতিল করা হয়েছিল।

সৌদি কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রীদের জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে চলতি বছর হজ অনুষ্ঠিত নাও হতে পারে। জুলাই মাসের শেষের দিকে শুরু হওয়ার কথা এ বছরের হজের আনুষ্ঠানিকতা। তবে হজের নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এখনো বন্ধ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিমদের হজে অংশগ্রহণের বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

মক্কা ও মদিনা মুসলিম কাছে সবচেয়ে পবিত্র দুটি শহর, যা তীর্থযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু। করোনার কারণে দুটি শহরই গত এক মাস ধরে দর্শকদের জন্য বন্ধ রয়েছে। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময়ও এই দুটি শহর বন্ধ করা হয়নি। সৌদি কর্মকর্তারা বিদেশের জন্য দেশের সীমানা সিল করে দিয়েছে এবং আংশিকভাবে হজের আগে এই ভাইরাসটি নির্মূল করার আশায় মক্কা ও মদিনার অভ্যন্তরে চলাচলে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বুধবার সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহর মন্ত্রী মুহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বান্তেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘সৌদি আরব সমস্ত মুসলিম ও নাগরিকের সুরক্ষার জন্য প্রস্তুত। এ কারণেই আমরা পরিষ্কার ধারণা না পাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে হজের বিষয়ে কোন চুক্তি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্বের সমস্ত মুসলিমদের কাছে এই মূহূর্তে কোনও চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য অনুরোধ করেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘হজের প্রস্তুতি নিয়ে এবার তাড়াহুড়ো না করতে মুসলিম দেশগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। মহামারির গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে সিদ্ধান্ত। বেশি গুরুত্ব পাবে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি।’

কিংস কলেজ লন্ডনের ওয়ার স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রভাষক সিরাজ মাহের বলেছিলেন,’হজ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত করছে। তারা অতীতকাল থেকে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেতে শুরু করেছে, যেখানে বিপর্যয় ও যুদ্ধ সহ বিভিন্ন কারণে হজকে স্থগিত করতে হয়েছিল। আমি মনে করি এটি মানুষকে আশ্বস্ত করার বিস্তৃত প্রয়াসের একটি অংশ। যদি হজ সত্যিই বাতিল হয় তবে সেটা কোন নজিরবিহীন ঘটনা হবে না।’

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী সব মুসলিমই তাদের জীবদ্দশায় একবারে হলেও হজ পালন করতে আগ্রহী। সামর্থ্যবানদের জন্য এটা ফরজ করা হয়েছে। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এটি। প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ হজ পালন করতে মক্কা-মদিনায় জড়ো হয়।

সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.