যুক্তরাষ্ট্রে একটি মুসলিম পরিবারকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। চেহারা ও ইসলামি পোশাক-আশাক দেখার পর পাইলটের মন্তব্য, তাদের ‘দেখতে যেন কেমন’। তারপর নিরাপত্তার ইস্যু দেখিয়ে বিমান থেকে তাদের নেমে যেতে বলেন পাইলট ও বিমানবালারা।
শিকাগো থেকে ওয়াশিংটনগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের একটি বিমানে ওঠেন এয়ামান অ্যামি সাদ সেবলি। সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী ও তিন সন্তান। পাইলট তাদের দেখার পর পাঁচজনকেই বিমান থেকে নেমে যেতে বলেন। বিমানে ওঠার পর সেবলি তার তিন সন্তানের আসনে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে কি না, তা জানতে চান।
এদিকে সেবলিদের সঙ্গে পাইলট ও বিমানবালারা যে আচরণ করেছেন, তা ভিডিওতে ধারণ করেন তিনি। এ ধরনের দুটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন সেবলি। এতে দেখা যায়, পাইলট ও বিমানবালারা তাদের বিমান থেকে নেমে যেতে বলছেন।
নেমে যেতে বলার পর সেবলি পাইলটকে প্রশ্ন করেন, এটি কি ‘বৈষম্যমূলক’ সিদ্ধান্ত নয়? পাইলট উত্তরে বলেন, এটি ফ্লাইটের নিরাপত্তার ইস্যু। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি বলেননি।
মসুলিমদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) পক্ষ থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেবলিদের সঙ্গে যারা অসদাচরণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
সিএআইআরের শিকাগোর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ রেহাব এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুর্বোধ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে নাটকীয় কারণে মুসলিম পরিবারকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। নিরাপত্তা মানে যাত্রীদের নিরাপদ রাখা, তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা নয় অথবা বিমান থেকে নেমে যেতে বাধ্য করা নয়।
ফেসবুকে সেবলি ইউনাইটেড এয়ারলাইনসকে ভর্ৎসনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছি। কোনো কারণ ছাড়াই ‘আমাদের দেখতে কেমন’ এর ভিত্তিতে বিবেচনা করা এবং তারপর নিরাপত্তার ইস্যু দেখিয়ে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুল ছুটির ফাঁকে আমাদের ছোট ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে ওয়াশিংটনে বেড়াতে যাচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু আমার তিন বাচ্চা যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো, তার জন্য তারা মোটেও উপযুক্ত নয়।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে মুসলিমবিদ্বেষী আচরণ এবারই প্রথম নয়। গত বছর মে মাসে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক মুসলিম নারী কর্মকর্তা ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে চাওয়ার পরও ডায়েট কোক দেওয়া হয়নি। বিমানবালারা তখন বলেছিলেন, তাকে ডায়েট কোক দেওয়া হলে, একে তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন।
অবশ্য সেবলির পরিবারকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য ইউনাইটেড এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়েছে এবং অন্য ফ্লাইটের যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। বাজফিড নিউজকে এক বিবৃতিতে এ বিষয়টি জানিয়েছে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ কোনোভাবে সহ্য করবে না তারা।