বিদেশগামী জনগণের হয়রানি কমানোর উদ্দেশ্যে দেশের ছয় বিভাগের ১৭ জেলায় আরো ১৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৫ তলা ভিত্তির ওপর ৩ তলার এসব বিল্ডিংয়ে ব্যয় হবে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মধ্যে এসব ভবন নির্মাণ করা হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ‘১৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ’ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে, যা সব প্রক্রিয়া শেষ করে খুব শিগগিরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রতিবছর অসংখ্য লোক শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটন ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন করে থাকেন। এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকাসহ বহির্গমন ও পাসপোর্ট অফিসে প্রচণ্ড কাজের চাপ রয়েছে। তাই চার বছর আগে প্রধান কার্যালয়ের কাজের চাপ কমাতে সরকার ঢাকায় ৩টি এবং চট্টগ্রামে ২টিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই অংশ বিশেষ ইতিমধ্যে ১৫ জেলায় ১৫ পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বতর্মানে ১৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
বাকি ৩৩টি অফিসের মধ্যে অপেক্ষাকৃত অধিক গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ১৭টি পাসপোর্ট নির্মাণের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব অফিস বিল্ডিং ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল বিভাগের ১৭ জেলায় হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় নতুন
পাসপোর্ট অফিস হবে ভোলা, বড়গুনা, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নেত্রকোনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মাগুরা, ঝিনাদহ, রাজবাড়ী, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও সুনামগঞ্জ জেলায়। প্রত্যেক জেলা শহরেই নির্মাণ করা হবে এসব পাসপোর্ট অফিস। এর মাধ্যমে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পাওয়া আরো সহজ হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিপিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এসব অফিস বিল্ডিং নির্মাণ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোট ১০৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, অফিস বিল্ডিং নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকের বেতন, স্টাফদের বেতন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য ব্যাপারে ব্যয় হবে ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ব্যয় যাচাই-বাচাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে তেমন কোনো আপত্তি দেখা না গেলেও প্রকল্প পরিচালকের জন্য ৭০ লাখ টাকায় জীপ গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কমিশন।
সূত্র আরো জানায়, ১৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। এসব পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১৮ জেলায় যে ১৯টি পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো হলো ঢাকার উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী, নরসিংদী সদর, কিশোরগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া সদর ও পটুয়াখালী সদর জেলায়।