মাঈনুল ইসলাম নাসিম : পহেলা বৈশাখ তথা ১৪ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার দেশে-বিদেশে যখন বাংলা নববর্ষেকে বরণ করে নেয়া হচ্ছিল মনের মাধুরী মিশিয়ে, তখন বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকাতেই ঘটে গেলো দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক আরেকটি ঘটনা। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেত্রী এবং তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চরম নেক্কারজনকভাবে অবমাননা করা হলো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীতকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বেগম জিয়ার সম্মানে অথবা তাঁর ক্যমেরা কাভারাজের সুবিধার্থে একদল নারীকে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীণ মাটিতে বসে থাকতে বাধ্য করা হয় এদিন। রাজপথে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই দিনে-দুপুরে রচিত হয়েছে এই স্ক্যান্ডাল।
অনলাইনে ভাইরাল হওয়া জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার ভিডিওটি যারা দেখেছেন তাঁরা এই অপকর্মের জন্য বিএনপির বয়োবৃদ্ধ নেতা মওদুদ আহমেদের বেকুবিপনা এবং অতিবুদ্ধিসুলভ চাটুকারিতায় ভরপুর মনোভাবকে দায়ী করেছেন। কারণ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সহ অন্যান্য নেতারা যখন দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করছিলেন, সামনে বসে থাকা নারীরাও একই সময় দাড়াবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মওদুদ আহমেদ ধমক দিয়ে তাদেরকে বসে থাকার নির্দেশ দেন । জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদার চাইতে ক্যামেরা কাভারেজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কিংবা ম্যাডামের বাড়তি সুনজরের আশায় তিনি এমনটা করেছেন বলে অভিযোগ।
বর্ষবরণে বিগত দিনে এই ঢাকাতেই নারীর শ্লীলতাহানীর দায় সরকারকে নিতে হয়েছে। এবার সেরকম কিছু না হলেও জাতীয় সঙ্গীতের চরম মর্যাদাহানী যেভাবে ঘটেছে বা ঘটানো হয়েছে নয়াপল্টনে বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাসাস আয়োজিত বৈশাখী অনুষ্ঠানে, এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কারণ তিনি চাইলেই পারতেন মওদুদকে ওয়ান-টু’র মধ্যে স্লোয়ার কাটারে বোল্ডআউট করে থামাতে এবং ‘শো-পিস’ হিসেবে বসে থাকা মা-বোনদের এইমর্মে নির্দেশ দিতে পারে যে, “এই তোমরা বসে আছো কেন ? কারো কথা শোন কেন ? জাতীয় সঙ্গীত বাজলে দাড়িয়ে সম্মান করতে হয় এটা তো স্কুলে শেখার কথা”। কিন্তু না, বেগম জিয়া কাজে লাগাননি তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই সভা-সমাবেশে তাঁর দেয়া পজিটিভ বক্তব্যের ধারাবাহিকতা এদিন বৈশাখীর অনুষ্ঠানেও পরিলিক্ষিত হয় ইতিবাচকভাবে।
বাংলা নববর্ষে সুন্দর একটি আয়োজন যেখানে এক গামলা দুধের চাইতে স্বচ্ছ হওয়ার কথা, সেখানে একফোটা চনা ঠেকাতে পারেননি সেখানে উপস্থিত মঈন খানের মতো মাথাওয়ালাও। মহাসচিব মির্জা ফখরুল অবশ্য লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছিলেন। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা রক্ষা যেহেতু বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব, তাই বাংলা বছরের প্রথম দিনে নয়াপল্টনে ঘটে যাওয়া এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য বেগম খালেদা জিয়া সহ জাসাস ও বিএনপিকে অবশ্যই দেশ ও জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় দেশে-বিদেশে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে নেক্কারজনক মেসেজ যাবে অনাগতকাল ধরে।
জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার ভিডিও দেখুন : https://www.youtube.com/watch?v=ySNAUNqW9mc