তিন বছর আগে রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ এখনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে অ্যাকশন এইড।
ওই ঘটনায় আহত ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী একহাজার ৩০০ শ্রমিকের উপর চালানো জরিপ থেকে এই ফল বের হয়েছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি এই উন্নয়ন সংস্থা।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ শনিবার ‘রানা প্লাজা ধসের তিন বছর: পোশাকশিল্পের অগ্রগতি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখানো হয়েছে, রানা প্লাজা ধসে আহত প্রায় ৫৯ ভাগ শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।আর ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার রয়েছে; শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে তারা কাজে ফিরতে পারছে না।
তবে বেঁচে যাওয়া এই শ্রমিকদের অধিকাংশই সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর আর পোশাক কারখানায় কাজ করতে চান না। মাত্র ৫ ভাগ পোশাক শিল্পে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। প্রায় ৭৯ শতাংশ নিজে ব্যবসা করতে চান।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে আট তলা রানা প্লাজা ধসে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক, যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
আহত ওই শ্রমিকদের উপর চালানো এই জরিপ জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক নুজহাত জেবিন। এর প্রথম ভাগে রানা প্লাজা ধসের আহত শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়; দ্বিতীয় ভাগে আসে পোশাক খাতের পরিস্থিতি।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে। কোন প্রক্রিয়া ও কোন মানদণ্ড অনুসরণ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তা এখনো শ্রমিকদের কাছে স্বচ্ছ নয়।
ধসের পর শ্রম আইন সংশোধন করা হলেও শ্রমিকের অসদাচরণের সংজ্ঞা ও ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণাসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এখনো প্রয়োজনীয়।
প্রতিবেদনের শেষে পোশাক খাতের সার্বিক পরিবেশের উন্নয়নে বেশকিছু কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি জাতীয় ক্ষতিপূরণ কাঠামো করা, নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা, কারখানায় স্বাধীনভাবে সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করা এবং শ্রম আইনের দুর্বল দিকগুলো সংশোধন করা।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফারাহ্ কবির বলেন, “রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ, নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও গবেষণার ফলাফল আমাদের আশাবাদী করছে না।
“তিন বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের যা দেওয়া হয়েছে তা আর্থিক সহযোগিতা। ক্ষতিপূরণ বললেই শ্রমিকের মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক বিষয়গুলোকে নিয়ে কাজ করতে হবে। ”
প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হামিদা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা যা পেয়েছে বা পাচ্ছে তাকে আসলে ক্ষতিপূরণ বলা যাবে না। শ্রমিকরা যে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়েছেন তাতে তাদের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা জরুরি।
কারখানা পরিদর্শন ও প্রতিস্থাপন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সাঈদ আহমেদ জানান, রানা প্লাজা ধসের পর কারখানাগুলোর তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ৪ হাজার ৮০৮টি কারখানার তথ্য দেওয়া আছে।
“আমরা কারখানা পরিদর্শন করছি। তবে শুধু পরিদর্শনই সমাধান না, মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে শ্রমিকদের নিরাপত্তায়।”
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসূচি ব্যবস্থাপক টিউমো পটিআইনেন বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও গার্মেন্টস সেক্টরের উন্নতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। দেখা গেল, সরকার, মালিক, ক্রেতারা নানা দিক দিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন যার আইনি বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ভিত্তি নাই। ভবিষ্যতে যাতে রানা প্লাজার মতো ঘটনা না ঘটে সে জন্য যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেছবা রবিন বক্তব্য রাখেন।