ক্যান্টন ফেয়ার হচ্ছে একটি নদীর ধারে। এক কথায় চমৎকার নদী। এই নদীর নাম কী? কয়েকজন চাইনিজকে জিজ্ঞেস করেছি। অবাক ব্যাপার! নাম বলতে পারেননি কেউ। পরে নেট ঘেঁটে জানলাম, এর নাম পার্ল নদী। পার্ল মানে মুক্তা। চীনে নদীর নাম এরকম হবে, বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু এক অর্থে এটি আসলে মুক্তার নদীই। এর তীরে বসছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য মেলা। এক অর্থে যাকে বলা চলে মুক্তার মেলা।
রোরবার ছিল গুয়াংজু শহরের ক্যান্টন ফেয়ারের তৃতীয় দিন। বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। তৃতীয় দিনে বিদেশি ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় ছিল ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে। বাংলাদেশে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যেমন ক্রেতারা একবার অন্তত ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে যান, ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই।
মেলায় ওয়ালটনের মেগা প্যাভিলিয়নে রোববার বিদেশি ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়। মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ওয়ালটন ব্র্যান্ডের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। ওয়ালটন পণ্যের গুণগত উচ্চমান, আকর্ষণীয় ডিজাইন ও কালার এবং মূল্য সাশ্রয়ী হওয়ায় তারা পণ্য আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ক্যান্টন ফেয়ারের আন্তর্জাতিক জোনে আকর্ষণীয় ডিজাইনে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটন মেগা প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া মেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে ওয়ালটনের জায়ান্ট বিলবোর্ড। বড় পর্দায় প্রদর্শিত হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য তৈরির ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র এবং ওয়ালটনের বিজ্ঞাপন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার পাশাপাশি ওয়ালটন পণ্য নিয়ে এবার আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে। ওয়ালটন মেলায় নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রিজ। রপ্তানির জন্য তৈরি বিশেষ ডিজাইনের এই ফ্রিজগুলো দূর থেকে দেখেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আটকে যাচ্ছিল। ওইসব ক্রেতা প্যাভিলিয়নে এসে এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে কথা বলছেন। ওয়ালটন পণ্য আমদানির জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন।
কথা হলো অস্ট্রেলিয়ার এএএ (এফএন) কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তেরান্নাভার সঙ্গে। তিনি জানতে চাইলেন, এটি কোন দেশের প্রোডাক্ট? বাংলাদেশ শুনে ভালো করে দেখলেন। বললেন, ওয়ালটন ফ্রিজের আউটলুক আকর্ষণীয়। কালার মারভেলাস। বড় ফ্রিজগুলো চমৎকার। তবে ৪৬ লিটারের ছোট ফ্রিজটা ভালো চলবে। জানালেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এ ধরনের ফ্রিজের চাহিদা খুব বেশি।
চীনে আসা আন্তর্জাতিক ক্রেতারা প্রধানত দেখছেন কার পণ্যের মান কত ভালো। সেটা কত কম দামে কেনা যায়। এই বিষয়টিই আশা জাগাচ্ছে ওয়ালটনের। বাংলাদেশে শ্রমের মূল্য কম হওয়ায় পণ্যের মাথাপিছু উৎপাদন মূল্যে অনেকটাই এগিয়ে আছে ওয়ালটন। মান নিয়েও সবাই সন্তুষ্ট। আর তাই ওয়ালটন টিভি, হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস, সুইচ-সকেট, বাল্ব এসব নিয়েও বিদেশিদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
স্লোভেনিয়ার লাকা ফ্লেন্ডার, কাজাখস্তানের রাহামানভিওভ, বলিভিয়ার এলিয়ান ডি লা ভেগা, কামেরুনের রাউল সোভেনা, তুরস্কের আয়াক্স, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ব্যবসায়ী এডি লাম- সবাই অনেক সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন ওয়ালটনের প্রায় প্রতিটি পণ্য।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড ডগলার্স, সিঙ্গাপুরের ভেট ঘাট লিমিটেডের ধোনগানা, মরিশাসের আরটিকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্যাট্রিক কো, কোরিয়ার মিরো কোম্পানির জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি মিন কিম, সুরিনামের ব্যবসায়ী হ্যারি সাখারনি, কলম্বিয়ার এজেড ডি কোম্পানির নিকোলাস আরিয়াস, সৌদি আরবের হামাদ বো আলিও ওয়ালটনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন।
তৃতীয় দিনেও অসংখ্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এসেছেন ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে। বিশ্বের বৃহত্তম এই মেলায় ওয়ালটনকে দেখে বাংলাদেশিরা উচ্ছ্বসিত। উল্লেখ্য, ক্যান্টন ফেয়ারে এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশি ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড অংশ নিয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক আবুল হোসেইন বলেন, ‘আমি হঠাৎ করে দেখলাম ওয়ালটন। এতোটা ভালো লাগল, বোঝাতে পারব না। আশা করি, ওয়ালটন একদিন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা চাই, সব বাংলাদেশি ব্র্যান্ড পৃথিবীর সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ুক।’ তিনি অনেক সময় নিয়ে ওয়ালটনের পণ্য দেখেন। কথা বলেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
১১৯তম আন্তর্জাতিক ক্যান্টন ফেয়ার শুরু হয়েছে শুক্রবার। পাঁচ দিনের এই মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে ওয়ালটন কারখানায় তৈরি রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, রিচার্জেবল ফ্যান, ইলেকট্রিক সুইস, সকেট, ইন্ডাকশন কুকার, ব্লেন্ডার, এসিড লেড রিচার্জেবল ব্যাটারি ইত্যাদি।