যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পর এবার ‘আরও উন্নত প্রযুক্তির’ ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
রোববার আগারগাঁওয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরও নতুন প্রযুক্তি এসে গেছে। ইলেকট্রনিক পাসপোর্টও আমরা ইনশায়াল্লাহ তৈরি করব, এ পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি।”
তিনি বলেন, “প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে। এই অধিদপ্তরকে ডিজিটাল ডিপার্টমেন্ট হিসেবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
শেখ হাসিনা এ সময় সারাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা এবং সেখান থেকে মানুষের সেবা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে সেবা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানান।
“সারা বাংলাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। কাজেই ওই ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই মানুষ তার পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবে, সেইভাবে সমস্ত দেশে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করে.. এই ডিজিটাল ব্যবস্থাটার মধ্যেই মানুষ তার সেবাটা যেন পেতে পারে সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এটা আরও দ্রুত কার্যকর হবে।”
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) প্রবর্তনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ২০১০ সাল থেকে এমআরপি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় এবং ‘পর্যায়ক্রমিকভাবে’ তা বাস্তবায়ন করা হয়।
ইতোমধ্যে এক কোটি ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং তিন লাখ ২৬ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার; এটার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় তারা এরকম পদক্ষেপই নেয়নি। আমরা ক্ষমতায় এসেই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেই,” বলেন তিনি।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬৫টি মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এমআরপি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এখন যে আমরা সব করে ফেললাম এটা নিয়ে আবার খুব বেশি লেখালেখি করতে দেখি না। যখন একটু খুঁত পায় তখন খুব বড় করে লেখে। কিন্তু ওইটে যখন সংশোধন বা কাজ করে ফেলি তখন লেখায় একটু কার্পণ্য থাকে।”
শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর যারা রাষ্ট্রক্ষমতা ‘দখল’ করেছিলেন তাদের সমালোচনা করেন।
“১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তে যতটা ব্যস্ত ছিল, মানুষের ভাগ্য গড়তে ততটা পদক্ষেপ নেয়নি।”
দেশের বিভিন্ন স্থানে পাসপোর্ট অফিস স্থাপন ও জনবল বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যখন থেকেই ক্ষমতায় এসেছি তখন থেকেই সব এলাকায় পাসপোর্ট অফিস তৈরির কাজ করে যাচ্ছি।”
পাকিস্তান আমলে পাসপোর্ট পাওয়ার ‘ভোগান্তি’ ও ‘বঞ্চনার’ কথাও তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তব্য দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগর আদর্শ মহিলা কলেজের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।