নির্ধারিত মেয়াদে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না বলে আবারও দেড় বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০০৯ সালে অনুমোদিত পৌনে তিন বছরের এ প্রকল্পে সাড়ে ১০ বছরে অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ছয়বার। খরচ বেড়েছে সাড়ে ছয়গুণেরও বেশি।
প্রকল্প ব্যয় ৩০২ কোটি টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে হয়েছে ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, যথাযথ পরিকল্পনা না করা, জমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই প্রকল্পের আজ এই দুর্গতি।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে সব দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিমানবন্দরটির উন্নয়নে ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ
টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন
দেওয়া হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিমানবন্দরের সুপরিসর বিমান উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য অপারেশনাল সুবিধা বৃদ্ধি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দুর্যোগকালে উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে দ্রুততম সময়ে
রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপন।
২০০৯ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পরই ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়।
ব্যয় ২৪৭ কোটি টাকা বা ১৮১.৬০ শতাংশ বাড়িয়ে মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
এরপর ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
তাতেও প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন
পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। এতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আবারও ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় সংশোধনীর
নামে ব্যয় এক লাফে ৬৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা বা ৩৯৪.২৯ শতাংশ বাড়িয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন
খরচ ১ হাজার ১৯৩ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়। পাশাপাশি মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৮
সালের জুন পর্যন্ত নেওয়া হয়। এবারও বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রকল্পটি শেষ করতে ব্যর্থ হয়।
তৃতীয় সংশোধনের নামে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়ানো হয়।
এবার ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর খরচ বাড়ে ৮২২ কোটি ৩২ লাখ ২২ হাজার টাকা বা ৬৬৬ শতাংশ, যা বৃদ্ধির রেকর্ড। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকায় উন্নীত হয়।
আর মেয়াদ বেড়ে যায় ২০২০ সালের জুনে। এতে সময় বৃদ্ধির হার হলো ৪০০ শতাংশ।
অর্থাৎ দফায় দফায় আট বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়; কিন্তু ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং খরচ হয় এক হাজার ৪৪৩ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
এই টাকা খরচ করে বাস্তব অগ্রগতি সাড়ে ১০ বছরে ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ ।
তবে এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় আরও দেড় বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি পর্যবেক্ষক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পে সময় মতো ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড মিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে; কিন্তু এই তিন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। ফলে প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি কম।