বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন আটাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ। গত মঙ্গলবার নেতৃবৃন্দ এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ জানান, মূল দোষী বিমান কর্মকর্তা নয়, এর সঙ্গে জড়িত আটাবের বর্তমান সভাপতি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আগামী ১৩ জুলাই তারিখে জেড. ওয়াই. এল- ডি. এ. সি-এল. এইচ. আর. এ. ফ্লাইটে কতিপয় অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি বুকিং অনিয়ম করে সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষের উপর দোষ চাপানো ও বিমানের ক্ষতিসাধন চেষ্টাসহ জাতীয় এয়ারলাইন্স এর সুনাম ক্ষুণ্ণ করার বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই স্মারকলিপি দেন আটাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে আটাব সিলেট অঞ্চলের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জব্বার জলিল, মো. সামছুল আলম, মনসুর আলী খান সহ আরো অনেক আটাব সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ এতে স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে তারা আরো জানান, ‘আটাব সিলেট অঞ্চলের বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত কিছু সদস্যের অনুরোধে এবং যাত্রীদের চাহিদা থাকায় সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে আগামী ১৩ জুলাই তারিখে বিজি-০০১ একটি এ ফ্লাইট প্রদানের ঘোষণা দেয় এবং সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষ ও যথারিথি অপেন ফর অল নীতিতে তা সিস্টেমে প্রদান করে এবং আটাব সিলেটের সভাপতি সম্পাদককেও অবহিত করা হয়, কিন্তু আটাব সভাপতি মোতাহার হোসেন বাবুল ও হাব সচিব জহিরুল কবির শীরু সহ নিজেদের ৭/৮ জন ছাড়া অন্যান্য ট্রাভেল এজেন্টকে অবহিত না করে নিজেরা ভুয়া নাম দিয়ে, উক্ত ফ্লাইটের অধিকাংশ সিট ব্লক করে রাখেন। এবং পরবর্তীতে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে (টিএল) টি.কে.টি ইস্যু না করতে পেরে তারাই নিজেরা ভূয়া নামে ব্লক করা সিট ক্যানসেল করেন।’
স্মারকলিপিতে আরো বলেন, ‘এই দূবৃত্তায়নে জড়িত এজেন্ট বর্তমান আটাব সিলেট অঞ্চলের সভাপতি, সোমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস’র সত্ত্বাধিকারী মোতাহার হোসেন বাবুল’র নিজস্ব ৫৭ টি লিংক টিকেট ইস্যু করার জন্য রয়েছে, যা অন্যান্য সদস্য বা এই ট্রেডের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। তিনি ১৩ তারিখ লন্ডন ফ্লাইটে ৩১টি সিট ভুয়া বুকিং করেন এবং ২৮টি ক্যানসেল করেন এবং পরবর্তীতে আরও ৩৫টি সিট বিভিন্ন লিংক এর মাধ্যমে বুকিং ও ক্যানসেলও করেন।’
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘মোতাহার হোসেন বাবুল নিজে বৈধতার খোলসে অবৈধভাবেও বিভিন্ন দেশে মানব পাচার ও মহিলা প্রেরণ করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজে লিপ্ত রয়েছেন। গত ২০১৯ সালের ২৭ মে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৩ জন ভুয়া ওমরা হজ্জ যাত্রী এনএসআই কর্তৃক ধৃত হয়ে অফলোড করা হয়। যাদের আসার সময় তার্কিশ এয়ারলাইন্সে ইস্তাম্বুল ট্রানজিট ছিল এবং এদের মূল গন্তব্য ছিল ইউরোপ।’
এছাড়া লতিফ ট্রাভেলস গত ৩ জুলাই ১ম দিন ২৮টি বুকিং করে ২০টি ক্যানসেল করেন এবং তৎপরবর্তীতে আরও ২২টি সিট ধরে তাও ক্যানসেল করেন।
তারা আরো উল্লেখ করেন, ‘অতীতে টিকেট কেলেঙ্কারিতে কালো তালিকাভুক্ত ৫৩টি এজেন্সির মধ্যে উক্ত লতিফ ট্রাভেলসও ছিল। এ পর্যন্ত উপরোক্ত ২ জনের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হলেও আরও ৭/৮ টি ট্রাভেল এজেন্সি এই অপকর্মের সাথে সংযুক্ত আছে বলে আমাদের ধারনা! যা সঠিক তদন্ত করলেই আসল রহস্য ও দুর্বৃত্তদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি।
তারা নিজেদেরই করা অপকর্ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে প্রকৃত সিলেটের আটাব সদস্যদের এবং জোনাল কমিটির অনেককে না জানিয়ে কিছু সংখ্যক বহিরাগতদের নিয়ে আটাব অফিসে না বসে অন্যত্র একটি গোপন মিটিং করে ফেসবুক সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে মিথ্যা অপপ্রচার করা বাংলাদেশ বিমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি। উপরোক্ত দূর্বৃত্তায়ন ও অপপ্রচারে আমরা সিলেটের অন্যান্য সকল ট্রাভেল এজেন্সি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি একই সাথে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে, অর্থনৈতিক ভাবেও বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এই অপকর্মের কারনে এবং সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানের স্বচ্ছতা প্রকাশে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আটাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দরা আহ্বান জানান। প্রকাশ : সিলেট ভয়েস
আটাব সিলেট অফিসের প্রতিবাদ
প্রতিবাদ লিপিতে আটাব নেতৃবৃন্দ বলেন, সিলেটে বিমান টিকিট নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় আটাবকে জড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের কাছে যে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে আটাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট নামে; এই নামে আটাবের কোন শাখা সিলেটে নেই। এটা নির্বাচনকালীন একটি প্যানেলের নাম ছিল।
এছাড়া তাতে যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারা অনেকেও জানেন না। সুতরাং এধরণের বিভ্রান্তিমূলক ও সংগঠন বিরোধী কাজ থেকে সিলেটের ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের বিরত থাকার আহবান জানান আটাব সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ। তারা অভিযোগ করে বলেন বিগত আটাব নির্বাচনে পরাজিত দু’একজন ব্যক্তি এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।
গত ৭ জুলাই মঙ্গলবার এই স্মারকলিপিতে তারা জানান, মূলদোষী বিমান কর্মকর্তা নয়, আটাবের বর্তমান সভাপতিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে বলা হয়, আগামী ১৩ জুলাই তারিখে জেড. ওয়াই.এল- ডি. এ. সি-এল. এইচ. আর. এ. ফ্লাইটে কতিপয় অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি বুকিং অনিয়ম করে সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষের উপর দোষ চাপানো ও বিমানের ক্ষতিসাধন চেষ্টাসহ জাতীয় এয়ারলাইন্স এর সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
কিন্তু পুরো বিষয়টি এখানে মিথ্যা বর্ণনা করা হয়েছে। বাস্তব সত্য হলো আটাবের অনুরোধে এই বিশেষ ফ্লাইটটির ব্যবস্থা করেছিল বিমান। কিন্তু পরে যখন এর টিকেট আটাব সদস্যরা পাননি বিমানের সিস্টেমের কারণে, তখন তারা এর প্রতিবাদ করেন। এটা বিমানের বিরুদ্ধে নয় বরং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তাতে করে বিমানের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না, বরং আরো উজ্জ্বল হওয়ার কথা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আটাব সিলেট অঞ্চলের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জব্বার জলিল, মো. সামছুল আলম, মনসুর আলী খানসহ আরো অনেক আটাব সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ এতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু বাস্তবে কথা বলা দেখা গেছে দু’একজন ছাড়া কেউই স্বাক্ষর করা দূরের কথা, তারা সে সম্পর্কে জানেনও না। তাদের স্বাক্ষর জাল করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আটাব সিলেট অঞ্চলের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু সদস্যের অনুরোধে এবং যাত্রীদের চাহিদা থাকায় সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে আগামী ১৩ জুলাই তারিখে বিজি-০০১ একটি এ ফ্লাইট প্রদানের ঘোষণা দেয় এবং সিলেট বিমান কর্তৃপক্ষ ও যথারীতি ওপেন ফর অল নীতিতে তা সিস্টেমে প্রদান করে এবং আটাব সিলেটের সভাপতি সম্পাদককেও অবহিত করা হয়।
কিন্তু আটাব সভাপতি মোতাহার হোসেন বাবুল ও হাব সচিব জহিরুল কবির শীরুসহ নিজেদের ৭/৮ জন ছাড়া অন্যান্য ট্রাভেল এজেন্টকে অবহিত না করে নিজেরা ভুয়া নাম দিয়ে, উক্ত ফ্লাইটের অধিকাংশ সিট ব্লক করে রাখেন এবং পরবর্তীতে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে (টিএল) টি.কে.টি ইস্যু না করতে পেরে তারাই নিজেরা ভুয়া নামে ব্লক করা সিট ক্যানসেল করেন। এখানেও তারা ভুল তথ্য দিয়েছেন। যেহেতু এটা একটি বিশেষ ফ্লাইট এবং আটাবের অনুরোধ দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং টিকেট কিভাবে ওপেন করা হবে সে ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা ছিলে আটাবের।
কিন্তু এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে নিজের মনগড়া সময়ে ছুটির দিনের রাতের বেলা মেইল দিয়ে নজিরহীন উদ্দেশ্য সফল করতে চান স্থানীয় বিমান ম্যানেজার। যার প্রতিবাদ করেছে আটাব, সবার স্বার্থে। এছাড়া যে দু’জনের নাম আসছে এবং বলা হয়েছে ভুয়া নামে সিট ব্লক করা হয়েছে। একজন ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে আমি বা আমরা সিট ব্লক করতেই পারি। আবার বাতিল করার অধিকারও আমার বা আমাদের আছে।
স্মারকলিপিতে দূর্বৃত্তায়ন ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে বর্তমান আটাব সিলেট অঞ্চলের সভাপতি, সোমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেসের স্বত্ত্বাধিকারী মোতাহার হোসেন বাবুলকে যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে মানহানি করা হয়েছে, এতে সহজেই বোঝা যায় ব্যক্তিগত হিংসাকে কাজে লাগাতে এই কাজটি করেছেন তারা। যা অবশ্যই আটাব এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য মানহানিকর। ভবিষ্যতে এইরকম কাজ করা থেকে বিরত না থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া লতিফ ট্রাভেলসের নামে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে তাও ঠিক নয় উল্লেখ করে আটাব নেতৃবৃন্দ চ্যালেঞ্জ করে বলেন, তারা বলেছেন অতীতে টিকেট কেলেঙ্কারিতে কালো তালিকাভুক্ত ৫৩টি এজেন্সির মধ্যে উক্ত লতিফ ট্রাভেলসও ছিল। যদি এটি প্রমাণ না করতে পারেন তাহলে এই ব্যাপারেও আমরা আইনি পদক্ষেপ নিব। স্মারকলিপিতে তারা বলেছেন, আটাব সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে অন্যত্র মিটিং করে বিমানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যা একেবারে ঢাহা একটি মিথ্যা কথা।
দিনের আলোয় বসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আটাবের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আর বিমানের ব্যাপারে যে মায়াকান্না দেখিয়েছেন, তাতেও আমরা বিস্মিত। কেননা অতীতে তারাই তো বিমানের বিরুদ্ধে একাধিক আন্দোলন করেছেন বিভিন্ন বিষয়ে। তখন বিমানের ভাবমূর্তি কই ছিলে।
চিঠির শেষে লেখা হয়েছে, আমাদেরও একই কথা, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর সাথে জড়িতদের ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে জাতীয় সম্পদ বিমানকে রক্ষায় বিমানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেই সাথে মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ সত্যানুসন্ধান করে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরুন যাতে করে সিলেটবাসী জানতে পারে প্রকৃত অপরাধী কারা। শুধু একপক্ষের বক্তব্যের উপর ভিত্তি না করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করার দাবি আটাব সিলেটের।