‘গুরুত্ব পাবে কানেক্টিভিটি, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতি ক্রয়’

ctg-port-bg20160424185821বন্দরের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কানেক্টিভিটি, জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরে সদ্য নিযুক্ত চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল।

রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থ বজায় রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে যেতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে বন্দরের কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারণ ও গতিশীল করতে স্ট্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। মাস্টার প্ল্যানে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে।

এসব সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনার মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কানেক্টিভিটি, জেটি ও ইয়ার্ড সম্প্রসারণ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে।

কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব আরো বাড়বে। ফলে জাহাজ আগমনের সংখ্যাও বাড়বে। আর এজন্য জেটি ও ইয়ার্ড প্রয়োজন হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব জেটি ও ইয়ার্ড সম্প্রসারণ করবো।

পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকলে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ক্রেন বাড়াতে হবে। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেব।

ভারতের সঙ্গে অভ্যন্তরীন নৌচলাচল শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরেও কোস্টাল শিপ চলাচল বাড়বে। ফলে পানগাঁ ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনালের মতো আরও অনেক টার্মিনাল হবে। এসব জাহাজকে জায়গা দিতে হলে কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষা প্রয়োজন।

বে-টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে উল্লেখ বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ৯৫০ একর জমি অধিগ্রহনের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বন্দরের সদস্য(এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) জাফর আলম সাংবাদিকদের বলেন, একটি বন্দর নির্মাণ করতে হলে ব্যাপক স্টাডি করতে হয়। এটা স্থানীয়ভাবে সম্ভব না। তাই আমরা এটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছি।

পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ করলেই এখানে কাজ শুরু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এরপর ধীরে ধীরে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলবে।

আইন মেনেই পায়রা বন্দর নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের তহবিল থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জাফর আলম বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ টাকা ফেরত দিতে হবে।

লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওবার ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে ফ্লাইওভারের দরকার আছে। তবে বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। বিষয়টি আমরা সরকারকে জানিয়েছি। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ফেনি ও মিরসরাই এলাকাকে সহায়তা দিতে আশপাশে আর কোন বন্দর নির্মাণ করা যায় কিনা সে বিষয়টি যাচাই করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্যতা যাচাই করবে।

কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে জাফর আলম বলেন, এই প্রকল্পে তিনটি অংশ রয়েছে। এরমধ্যে জেটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ব্যাংক প্রটেকশনও প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। বাকি আছে কেবল ড্রেজিং এর কাজ হয়েছে ৬২ শতাংশ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মামলার কারণে এই প্রকল্পের কাজ আটকে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আদায় করা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। শিগগির এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সদস্য (হারবার এন্ড মেরিন) কমডোর শাহীন রহমান, পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সারওয়ার, ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন নাজমুল আলম, সচিব ওমর ফারুক, উপসচিব আজিজুল মাওলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.