যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের আচরণবিধি সংস্কারের দাবিতে আবারও রাজপথে সমাবেশ হয়েছে, যাতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন।
নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সামনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সমাবেশ হয়।
‘কমিউনিটিস ইউনাইটেড ফর পুলিশ রিফর্ম’ নামে একটি মোর্চার ব্যানারে এ সমাবেশে শতাধিক নাগরিক ও মানবাধিকার সংস্থা ছাড়াও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
দুই বছর ধরে চলা এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে দাবির পরিপূরক দুটি বিল উঠেছে সিটি কাউন্সিলে।
‘রাইট টু নো অ্যাক্ট’ অর্থাৎ ‘জানার অধিকার’ শীর্ষক এ বিল পাশ হলে চলতি পথে কাউকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অথবা তল্লাশির সময় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের পরিচিতি সংবলিত কার্ড দেখাতে হবে ওই ব্যক্তির কাছে। একই সঙ্গে সবিস্তারে জানাতে হবে জিজ্ঞাসাবাদ বা তল্লাশির কারণ।
একইভাবে কারও বাসায় প্রবেশের সময়েও একই পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পুলিশি আচরণকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার এ প্রক্রিয়া চালু হলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা যাকে খুশি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না। পোশাক পরলেই যেসব পুলিশ নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে, তারও অবসান ঘটবে।
নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ‘রাইট টু নো অ্যাক্ট’ মন্ত্রের মত কাজ করবে বলে তাদের অভিমত।
কমিউনিটিস ইউনাইটেড ফর পুলিশ রিফর্ম’ এর মুখপাত্র মনিফা ব্যান্ডিলে বলেন, “ন্যায় বিচারের জন্যে পুলিশ আচরণ সংস্কার দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে রয়েছি। কিন্তু প্রতীক্ষার প্রহর কাটছে না।
“আমরা আশা করছি, খুব দ্রত সিটি কাউন্সিল ‘রাইট টু নো অ্যাক্ট’ বিলটি পাশ করবে। সিটি কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্যেই এ বিধির পক্ষে, তাই তা পাশ হতে কালক্ষেপণের কোনো অবকাশ থাকতে পারে না।”
নিউ ইয়র্কে টহল পুলিশের অযথা হয়রানি এবং ‘পুলিশি বর্বরতার শিকার হয়ে মারা যাওয়া’ কয়েকজনের স্বজনও এসেছিলেন সমাবেশে।
বছরখানেক আগে দায়িত্ব পালনের সময় দুই পুলিশের কাছে মারধর ও হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন কুইন্সের ডাক পিয়ন গ্লেন গ্রেস।
পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের পোশাক পরা গ্রেস চিঠি বিলির পর নিজ গাড়িতে বসেছিলেন। সে সময় পেছনে পার্ক করা গাড়ি থেকে দুই পুলিশ এসে তার সঙ্গে অকথ্য আচরণ করে এবং এক পর্যায়ে গ্রেসকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান দেয়।
পরে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই রাস্তার পাশের এলাকার সার্ভিলেন্স ভিডিও আদালতে উত্থাপন করা হলে পুলিশের অযথা দুর্ব্যবহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। দুই অফিসারের বিরুদ্ধেই অভিযোপপত্র দেওয়া হয়েছিল এ ঘটনায়।
এ ধরনের বর্বর আচরণের অভিযোগ রয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশের বিরুদ্ধে।
কর্তব্যরত অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের ক্ষেত্রে ‘রাইট টু নো অ্যাক্ট’ বিল পাশের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠক কাজী ফৌজিয়া।
ফৌজিয়া বলেন, “চলতি পথে ইমিগ্র্যান্ট এবং কৃষ্ণাঙ্গদের হরদম হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। এহেন অবস্থার অবসান ঘটাকে প্রস্তাবিত বিধি পাশ করতে হবে। সিটি কাউন্সিলম্যানদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।”
বিলটি সিটি কাউন্সিলে উত্থাপন করেন কাউন্সিলম্যান রিচি টরেস।
তিনি বলেন, “বিলটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে সিটির অধিবাসীরা। একইসাথে পুলিশের বর্বর আচরণও অব্যাহত রয়েছে। এভাবে আইনের শাসনের ক্ষেত্র প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এখন সময় হচ্ছে বিলটি পাশ করার।
“পুলিশি আচরণকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার অর্থ হবে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক অস্থিরতার অবসান ঘটানো। শুধু তাই নয়, দায়িত্ব পালনে নাগরিকেরাও স্বচ্ছন্দে পুলিশের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করবে না।”
বছরখানেক আগে সিটি পুলিশের নির্মম আচরণের শিকার হয়ে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গারনার। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়েই গণমাধ্যমে আলোচিত হয়।
দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ‘পুলিশের বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণের’ অবসান ঘটাতে রাইট টু নো অ্যাক্টের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক ডোনা লিবারম্যান।
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত কৃষ্ণাঙ্গদের পাশাপাশি অভিবাসী নাগরিকরাও পুলিশের হেনস্তা ও নির্মম আচরণের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিটি কাউন্সিলম্যান মার্গারেচ চিন বলেন, “নিজের আশপাশেও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন অভিবাসীরা। টহল পুলিশের বর্ণ ও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক আচরণে সদা সন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে অভিবাসীদের, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে।”
পুলিশি আচরণকে ঢেলে সাজাতে আরও যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে দেন-দরবার চলছে। নিউইয়র্ক সিটির এই বিল পাশ হলে অন্য এলাকার জন্যে তা অনুসরণীয় হবে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।