যুক্তরাজ্যে ঝুলে আছে বহু বাংলাদেশী প্রবাসীর ভাগ্য

ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় শেফের কাজ নিয়ে ব্রিটেন গিয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম। সেখানে পাঁচ বছর থাকার পর

স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন ব্রিটেনের হোম অফিসে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)।

কিন্তু কাগজপত্রের ভুলে তার বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগ তোলে হোম অফিস।

আর তাতেই ফেঁসে যান সাইফুল। এমন অভিযোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১৭ বছর আইনি লড়াই করে অবশেষে নিজেকে

নির্দোষ প্রমাণ করেন তিনি। যদিও সাইফুলের সঙ্গে এমন আচরণের জন্য ক্ষমা চাইলেও তাকে স্থায়ী বসবাসের

অনুমতি দেয়নি হোম অফিস।

সাইফুলের মতো হোম অফিসের ভোগান্তির শিকার ব্রিটেনের অ্যাসেক্স শহরে বসবাসরত বাংলাদেশী শেফ

আফজাল হোসেন। ২০০৭ সালে তিনিও ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গমন করেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে

থাকার অনুমোদন চাওয়াটাই তার জন্য বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়ম মেনে হোম অফিসে কাগজপত্র জমা

দিয়েও আজ অবধি কাগজপত্র পাননি তিনি। বিষয়টি জানতে হোম অফিসে ১২ দফায় চিঠি দিলেও তার উত্তর মেলেনি।

শুধু সাইফুল বা আফজাল নন, অভিবাসন নীতি ও হোম অফিসের বিড়ম্বনায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি চাওয়া

আরো অনেক মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্যে। বিশেষ করে দেশটির হোম অফিসের

খামখেয়ালির খেসারত দিতে হচ্ছে বহু অভিবাসীকে। এ তালিকায় বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। বিশেষ করে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে যারা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করেছিলেন তাদের ভাগ্য বিড়ম্বনা সবচেয়ে বেশি। কাগজপত্রের অসামঞ্জস্য, ত্রুটি, অপরাধপ্রবণতা এমনকি যৌন কেলেঙ্কারির মতো গুরুতর

কারণ দেখিয়ে আবেদনপত্র বাতিল করা হচ্ছে। ঠিক কী কারণে তাদের আবেদন গৃহীত হচ্ছে না তা-ও তারা বছরের

পর বছর জানতে পারছেন না। আবার অনেকে এসব অভিযোগের বিপরীতে চ্যালেঞ্জ করে তার সত্যতাও পেয়েছেন। বাংলাদেশীদের সঙ্গে এমন বৈষম্যমূলক আচরণে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সেদেশের অভিবাসন আইনজীবী থেকে শুরু

করে ব্রিটিশ এমপিরাও।

বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও এমন আচরণের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে এমন

ঘটনা ঘটছে তার চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৬ সালে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য হোম অফিসে আবেদন

করেছিলেন যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টহ্যামে বসবাসরত বাংলাদেশী অধ্যাপক মো. সাদেক। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। কিন্তু হোম

অফিস তার কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকায় ‘অস্বচ্ছ’ বলে বাতিল করে দেয়। পরে সেটি সংশোধন করার পরও

তাকে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়।

হোম অফিসের বিড়ম্বনায় ঠিক কতসংখ্যক বাংলাদেশীর ভাগ্য এমন ঝুলে আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা না

গেলেও সেখানকার বসবাসরত বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশটিতে অন্তত সাড়ে সাত লাখ

বাংলাদেশী অভিবাসীর মধ্যে বড় একটি সংখ্যক বাংলাদেশীর আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে

বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে ওয়ার্ক পারমিট ভিসাধারীরা। যারা দেশটিতে পাঁচ বছর বসবাসের পর শর্তপূরণ

সাপেক্ষে আবেদন করেছিলেন স্থায়ী বসবাসের জন্য।

যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন

করেছে ২৬ হাজার ৩৫০ জন। তাদের মধ্যে ১০ দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করে। যে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম অবস্থানে। তবে আবেদনে এগিয়ে থাকলেও ৫ শতাংশেরও কম আবেদন গৃহীত হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে সিরিয়া, ইরিত্রিরা ও সুদানের নাগরিকদের। শতাংশের বিচারে দেশভেদে যা প্রায় ৮০ ভাগ।

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, ‘ওয়ার্ক পারমিট’ ভিসায় পাঁচ বছর দেশটিতে থাকার পর শর্তপূরণ সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়। সে অনুযায়ী একজন অভিবাসীকে যথাযথ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হয়।

এর বাইরে ভিজিট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, স্পাউস ভিসায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় মূলত দেশটির আইটি, গ্রাফিক্স, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক-ইঞ্জিনিয়ার, নার্স এবং বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এশীয় অঞ্চলের নাগরিকরা স্থায়ী বসবাসের জন্য মূলত ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় দেশটিতে যান। তবে ২০১১ সালে ‘টায়ার ওয়ান’ ভিসা ক্যাটাগরির আওতায় যারা যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন, নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তাদের বাইরে অন্যদের স্থায়ী হওয়ার সুযোগ সীমিত।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, কোনো বাংলাদেশী অভিবাসীর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটলে তাকে বিষয়টি স্পষ্ট করে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে তিনি জানাতে পারেন। আমরা সেটি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়ে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো বাংলাদেশী রয়েছে। এর বাইরে কাগজপত্রহীন ভাবে বসবাস করছে আরো অন্তত আড়াই লাখ বাংলাদেশী। এসব বাংলাদেশী অভিবাসীরা দেশটিতে বিভিন্ন ভিসা নিয়ে নানা সেক্টরে কাজ করছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.