‘ফিলিপাইন থেকে অর্থ ফেরত আনতে সময় লাগবে’

Mannan1461503487আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ লুটপাট হতো না। একইসঙ্গে রিজার্ভের চুরি হওয়া টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও এত অনিশ্চয়তা দেখা দিত না।

জনগণের করের অর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের কাজে ব্যবহার না করার জন্য বক্তারা জোর দাবি জানান। চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইন থেকে ফিরিয়ে আনতে সময় লাগতে পারে বলে বৈঠকে ইঙ্গিত দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

রোববার সচিবালয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এ আভাস দেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ডেইলি বাংলাদেশ টুডে’র সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, সমকাল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, আমাদের সময়ের প্রতিনিধি গোলাম সরোয়ার, আরটিভি’র প্রতিনিধি সৈয়দ আশিষ জামান, এটিএন-এর প্রতিনিধি মীর মোতাহার হোসেন, বাসস প্রতিনিধি আশিক চৌধুরী।

অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহাবুব আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ইআরডি সচিব মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম হাসানুর রহমান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইন ও অন্যান্য দেশের কর্মকা- এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করানোর সুপারিশ করেন। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুর্নীতির কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ, ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করেন। জনগণের করের অর্থে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পুন:অর্থায়ন করারও বিরোধীতা করেন। বড় বাজেট পেশ করার চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নের উপর বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি হওয়ার বিষয়টি সরকার খতিয়ে দেখছে। সেটা ফিলিপাইনের মত হয়তো নয়। আমরা আমাদের মত করে ফলো-আপ করছি। আমি যতটা জানি, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক ও কলম্বোতে ঘোরাঘুরি করছেন।’

এমএ মান্নান বলেন, ‘ফিলিপাইন একবার বলে টাকা কালকেই দিয়ে দেবে, আবার বলে সময় লাগবে- এটা নিয়ে প্রথম থেকেই আমার মনে সন্দেহ ছিল। এর হয়তো ব্যাখ্যা আছে, এটা হয়তো তাদের ইচ্ছাকৃত নয়, তাদের সিস্টেমটাই হয়তো এ রকম।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বতন্ত্র সত্তা সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র ও অর্থনীতির শৃঙ্খলার প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ধরনের স্বাতন্ত্রবোধ থাকা উচিত। অন্যান্য দেশে তাই হয়। এ জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা থেকে সরকার নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুল সংখ্যক লোক কাজ করছে, এটা এক ধরনের ঐতিহ্যও বলা যায়। এখান থেকে সরকার হঠাৎ করে বেরিয়ে আসতে পারে না।’

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজেট উচ্চাভিলাষী হলেও এটা অন্যায় বাজেট নয়। যে বাজেট দেওয়া হয় তা বাস্তবায়নযোগ্য। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথাও গ্যাপ আছে। সেই গ্যাপটি আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তবে বাস্তবায়নের হার আগের তুলনায় বেড়েছে।’

বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে ‘জাতিগত বৈশিষ্ট ও দীর্ঘদিনের জট পাকানো সরকারি বিধি বিধানকে দায়ী করেন তিনি।

প্রাক বাজেট আলোচনায় গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের জন্য সরকারের সহায়তায় প্রভিডেন্ড ফান্ড চালু, নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণা, সরকারি বিজ্ঞাপনে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন, বিজ্ঞাপন বিল প্রদানে বিশৃঙ্খলা দূর করা, বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেন। এছাড়াও সংবাদপত্র ছাপার কাজে আমদানিকৃত কাগজের উপর থেকে সব ধরনের কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।

প্রবীণ সাংবাদিক ও বাংলাদেশ টুডে’র সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবায়নের হার বাড়ছে না। একই অবস্থা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষেত্রেও। প্রতিবছরই অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বছরের প্রথম দিকে বাস্তবায়নের হার খুবই কম। অথচ অর্থবছরের শেষের দিকে হঠাৎ করে বাস্তবায়ন বেড়ে যায়। এর কারণটা খুঁজে বের করা প্রয়োজন।’

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বিনিয়োগ না বাড়ালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সৃদৃঢ় করা যাবে না। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়াবে, কর্মসংস্থান বাড়লে জীবন মান উন্নয়ন হবে। আর এভাবেই দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.