রাশিয়ার প্রাইভেট জেটের চাহিদা তুঙ্গে

গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে যেসব ধনী রাশিয়ান ভূমধ্যসাগরীয় রিসোর্ট কিংবা লন্ডনের পেন্টহাউজে উড়ে যান, চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাস তাদের সামনে হাজির করেছে একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি। কারণ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জারীকৃত বিধিনিষেধ, বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত এবং বিশ্বজুড়ে গ্রাউন্ডেড ফ্লাইটের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এখন স্বাভাবিকভাবেই দূরবর্তী স্বপ্নের মতো।

কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও রাশিয়ার অতিধনী, যাদের দ্বিতীয় পাসপোর্ট কিংবা অন্য দেশে বসবাসের অনুমতি রয়েছে, তারা সংক্রমণ-প্রতিরোধী এসব পদক্ষেপ এড়িয়ে ভ্রমণের জন্য খুঁজে নিয়েছেন বিলাসী বিকল্প পথ। লন্ডন, সাইপ্রাস, মোনাকো ও ফ্রান্সের নিসের মতো গন্তব্যে যেতে তারা বেছে নিচ্ছেন প্রাইভেট জেট।

এপ্রিল ও মধ্য জুনের মধ্যে মস্কোর বিমানবন্দরগুলোয় পরিচালিত ব্যক্তিগত ফ্লাইটের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দুটি বিমানবন্দরের বরাতে জুনের শেষ দিকে এ তথ্য জানিয়েছে ব্যবসায়িক নিউজ পোর্টাল দি আরবিকে। এ সময়ে প্রতি মাসে ব্যক্তিগত ফ্লাইটের সংখ্যা ৪০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫০-এ  আর এসব ফ্লাইটের অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিল দেশের বাইরে।

তবে যেসব রাশিয়ান করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ এড়িয়ে প্রাইভেট জেটে যাত্রা করতে চাইছেন, তাদেরকে প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে এ ভ্রমণের মূলে রয়েছে অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ কিংবা জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। এর পরই কয়েক ধাপে তাদের ভ্রমণের অনুমতি দিচ্ছে দেশটির বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক্ষেত্রে যাদের ব্যক্তিগত জেট নেই, তাদেরকে নির্ভর করতে হচ্ছে উড়োজাহাজ ভাড়া দেয় এমন হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির ওপর। জেট ভাড়া দেয়ার সংস্থা লিডিং চার্টার টেকনোলজিসের (এলসিটি) মস্কো শাখার পরিচালক লেভ শালায়েভ বেশ উত্ফুল্ল হয়েই বলেন, এখন প্রতিদিন জেট ভাড়ার জন্য ৫০টির বেশি অনুরোধ আসছে।

যারা আগে বিমানে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করতেন, তারা এখন আমাদের নতুন গ্রাহকে পরিণত হয়েছেন। এলসিটির গ্রাহকদের প্রিয় বিলাসবহুল গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে নিস, মালাগা, আলিকান্তি ও বার্সেলোনা। এছাড়া বহু গ্রাহক সাইপ্রাসেও যাচ্ছেন। সাইপ্রাস ব্যবসায়িক কাজের পাশাপাশি অবসর কাটানোর জন্য রাশিয়ানদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। শালায়েভ আরো বলেন, বর্তমানে তাদের গ্রাহকদের অধিকাংশই অবসর কাটাতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ১৩ আসনের একটি উড়োজাহাজে প্রতি টিকিটের জন্য তাদের ব্যয় করতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৫৭৫ ডলার।

রাশিয়ার বিমান খাতবিষয়ক কলামিস্ট অ্যানাস্তাসিয়া দাগায়েভা বলেন, জুন থেকে রাশিয়ানদের চিকিৎসাজনিত বিমান ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশটিতে বর্তমানে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘চিকিৎসা পর্যটন’ যেমন কেউ স্পেনের কোনো ক্লিনিকে চিকিৎসার বুকিং নিয়ে দেশটিতে যেতে পারছে। আর এক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ছে প্রাইভেট জেটের।

রাশিয়ার ধনীদের এ প্রবণতার সত্যতার বিষয়ে ইঙ্গিত মিলেছে দেশটির রিয়েলিটি টিভি তারকা ও একসময়ের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কেসেনিয়া সোবচাকের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে। সোবচাক লিখেছেন, তার বন্ধুরা সমুদ্রতীরবর্তী গন্তব্যের জন্য রাশিয়া ত্যাগ করছে। তিনি বলেন, আমার বন্ধুরা এরই মধ্যে রাশিয়া ছেড়ে গেছে। এদের মধ্যে কারো বিদেশী পাসপোর্ট রয়েছে, কেউবা গেছে ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে’।

এদিকে এলসিটির শালায়েভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ফের সীমান্ত খুলে দিলেও প্রাইভেট জেটের চাহিদায় এ উল্লম্ফন অব্যাহত থাকবে। কারণ তাদের গ্রাহকরা ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে এ সেবা গ্রহণ জারি রাখবেন বলে জানিয়েছেন। তাদের জন্য প্রাইভেট জেটের মূল সুবিধা ও আকর্ষণ হলো অনেক মানুষের ভিড় এড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারা, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে দেয়।

শুধু প্রাইভেট জেটই নয়, সংক্রমণের ভীতি রাশিয়ায় স্বল্প দূরত্বের ভ্রমণের জন্য বৃদ্ধি করেছে হেলিকপ্টারের চাহিদাও। মস্কোর ২০ কিলোমিটার উত্তরে বর্তমানে গ্রাহকদের বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে দ্য হেলিটেক কোম্পানি। হেলিটেকের পরিচালক ভিক্টর মার্টিনভ জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে তাদের বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তিনি জানান, হেলিকপ্টার কভিড-১৯ সংক্রমণ এড়িয়ে ভ্রমণের জন্য হেলিকপ্টার ধনীদের কাছে নির্ভরযোগ্য বাহন হয়ে উঠছে।

তবে ইউরোপে ভিলা থাকুক বা না থাকুক, চলমান করোনা সংক্রমণকালে অধিকাংশ রাশিয়ানই বর্তমানে দেশে নিজ ঘরে অবস্থান করছেন। যেমন স্পেনে অবকাশ যাপনের জন্য বাড়ি থাকলেও সেখানে যেতে পারছেন না শৌখিন শিল্পী লিনা চাইকোভস্কায়া। তিনি বলেন, আমি প্রাইভেট জেটে ভ্রমণের সুযোগের কথা শুনেছি। কিন্তু বিষয়টি বেশ ব্যয়বহুল। তাছাড়া এখন অন্য কোথাও যাওয়া আমার জন্য খুব জরুরি নয়।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.