কাদা মাটি সরিয়ে হেমারের চাপে বালি ঢুকিয়ে কমপ্যাক্ট করে জায়গা প্রস্তুতির মাধ্যমেই শুরু হবে মেট্রোরেল নির্মাণের প্রথম কাজ। শিগগিরই যে কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের কাজটি এভাবেই শুরু হবে। এরপর সেখানে গড়ে উঠবে ডিপোর বিল্ডিং। পুরো প্রক্রিয়াটি হলো ‘ডিপো ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক’ অর্থাৎ ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন।
আর মাত্র ক’দিন পরেই এ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে মাতবে রাজধানীর উত্তরার তৃতীয় ফেজের ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের উত্তরপ্রান্ত। যেখানে গড়ে উঠবে মেট্রোরেল ডিপো।
এখন সেখানে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ১৩২ বৈদ্যুতিক কেভি লাইন সরিয়ে দিয়ে ভূগর্ভে নেওয়া হচ্ছে। আর ডিপোর জন্য মাটি কমপ্যাক্ট বা সয়েল ট্রিটমেন্ট যন্ত্রপাতি শিপমেন্টে রয়েছে। বাকি এসকেবেটার ড্রামট্রাকসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত রয়েছে।
জাপানের টোকিও কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ডিপোল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ বছরের শুরুতেই ডিপোর জন্য রাজউক থেকে প্রাপ্ত ৫৮ দশমিক ৯১ একর জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়।
ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন সূত্র জানায়, যেখানে ডিপো হবে সে জায়গাটি ভরাট মাটি। এজন্য নিচের মাটিগুলো খুব নরম। বড় কোনো কাঠামো নির্মাণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে বুয়েটের পরামর্শে ভূমির উন্নয়ন কাজ করা হবে। এ ডিপোতেই থাকবে মেট্রোরেলের ৪৭টি কোচ।
এ কাজে জড়িত প্রকৌশলীরা জানান, বুয়েটের পরামর্শ হলো পুরো জায়গাটি পাইলিং করা অথবা উপরের মাটি সরিয়ে তাতে বালি ঢুকিয়ে দেওয়া, যাকে বলে ‘সয়েল ট্রিটমেন্ট’। এক্ষেত্রে পাইলিংয়ের ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় সয়েল ট্রিটমেন্ট করা হবে।
এ প্রক্রিয়ায় নরম কাদা মাটি সরিয়ে মেশিন দিয়ে ভেতরে বালি ঢুকিয়ে হেমারের চাপে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা হবে। মাটির বর্তমান লেয়ার থেকে এটি ৩ মিটার উঁচু করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মেট্রোরেলের ডিপো উন্নয়নের কাজ দিয়েই মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্য সরকারের। এসময় উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে। পরের ধাপে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলপথ নির্মাণ শেষ হবে ২০২১ সালে। পুরো প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
ঢাকার প্রথম এ মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন ৬) হবে উড়ালপথে। যার দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী পর্যন্ত বাড়িঘর কম এবং সেবা সংস্থার লাইনও নেই। কিন্তু পল্লবী থেকে মিরপুর ১০, রোকেয়া সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি ১৫ কিলোমিটারের বেশি পথ ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম। বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস গ্যাস, টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি, ঢাকা ওয়াসা, বেসরকারি ইন্টারনেট সেবা ও টিভিক্যাবলসহ ১২টি সেবা ও অন্য সংস্থার লাইন ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মেট্রোরেল প্রকল্পকে বরাবরই তরুণ প্রজন্মের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কিছুটা যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হবে নগরবাসীকে।
এটাকে মন্ত্রী শিশুর জন্মকালের যন্ত্রণার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, শিশু জন্মের সময় কান্না করে কষ্ট পায়। তাই নগরবাসীকে মেট্রোরেলের বাস্তবায়নের সময় একটু দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী সুখের জন্য ক্ষণস্থায়ী কষ্টকে মেনে নিতে ঢাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
চলতি মাসের শেষদিকের যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের কাজ সূচনা করবেন বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।