বাংলাদেশে গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাক-স্বাধীনতাসহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান বলেই তা সম্ভব হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) জাতিসংঘে কমিটি অন ইনফরমেশনের ৩৮তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি এসব কথা বলেন।
প্রতিনিধি বলেন, বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা অর্জনের এক বছরের মধ্যেই ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের বাক্-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সাল থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। মানহানিকর কিছু লেখা বা বলার দায়ে সাংবাদিক, লেখক বা অন্যান্যের বিরুদ্ধে সরাসরি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান বাতিল করেছে।
বাংলাদেশে এখন মিডিয়াভুক্ত ৪২৮টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৭২টিই প্রকাশিত হচ্ছে ঢাকা থেকে। সব মিলিয়ে সহস্রাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার ৩২টি নতুন বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২৪টি এফএম এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের লাইসেন্স দিয়েছে। দুস্থ সাংবাদিকদের সাহায্যে ২০১৪ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করেছে। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে এবং তথ্য কমিশন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতেও তৎপর রয়েছে।
কমিটি অন ইনফরমেশনের এই বার্ষিক সেশন বুধবার শুরু হয়েছে। ৬ মে পর্যন্ত তা চলবে। এই দুই সপ্তাহে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশ ও পর্যবেক্ষক ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক ইনফরমেশন (ডিপিআই) এর কর্মকাণ্ডের ওপর মহাসচিব বান কি মুনের পেশ করা তিনটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করবে।
ডিপিআইয়ের কৌশলগত যোগাযোগ সেবা, নিউজ সার্ভিস এবং বহুল প্রচার ও জ্ঞান চর্চার ওপর তৈরি এসব রিপোর্টের আলোকে ডিপিআইয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ড আরও উন্নয়ন করাই এর লক্ষ্য। জাতিসংঘ ও বিশ্ববাসীর মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর করা এবং বহুভাষার চর্চা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন সুপারিশ করবে। কমিটি এসব সুপারিশের আলোকে একটি রিজুলুশান গ্রহণ করবে।
বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে ডিপিআইয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রশংসা করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, ডিপিআই সম্প্রতি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন করেছে এবং এখানে বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে বিশেষজ্ঞ প্যানেলিস্ট হিসেবে আমন্ত্রণ করেছে।
প্রতিনিধি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে প্রতিবন্ধী বিশেষ করে অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার নিশ্চিতে ‘বাংলাদেশ মডেল’ বাস্তবায়ন করছে। এই মডেল এখন দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরেও বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, ডিপিআই জাতিসংঘে উদ্ভূত প্রতিদিনের তথ্য ইন্টারনেট ও অন্যান্য গতানুগতিক গণমাধ্যমের সাহায্যে বিশ্বের ৭২০ কোটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এই তথ্য প্রবাহ আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগোষ্ঠী থেকে ফিডব্যাক নেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ ৬৩টি দেশে পরিচালিত জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুপারিশ করেন।
প্রতিনিধি বলেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০১১ সালে ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনায় স্বল্পোন্নত বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে ২০২০ সালের মধ্যে ইন্টারনেট সেবা সাশ্রয়ী মূল্যে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করে। এ প্রতিশ্রুতি পূরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি তিনি আহবান জানান।
প্রতিনিধি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত এবং তার নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল বিশ্বের গড় অবস্থানে পৌঁছেছে। দেশের ৩৭ শতাংশ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, এলডিসিগুলোকে দেয়া ইন্টারনেট সেবাসহ সকল প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমেই গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ অনুমোদিত টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডায় “কেউই বাদ যাবে না” লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে।
বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের প্রধান ভাষা বাংলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিনিধি বলেন, ভাষার জন্য বাঙালির আত্মদান জাতিসংঘে স্বীকৃত হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলা এবং বহুভাষিক শিক্ষা প্রসারে তিনি ডিপিআইসহ অন্যান্য এজেন্সিকে দিবসটি জাতিসংঘ সদর দফতরে পালনের আহ্বান জানান।
বিশ্বের বিভিন্ন মাতৃভাষা সংরক্ষণে বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে বিভিন্ন ভাষার আর্কাইভ গড়ে তোলা হবে। ভাষা নিয়ে গবেষণা করা হবে। এই মহতী উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য তিনি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ইউএন রেডিও বাংলা চ্যানেলে বাংলায় দৈনিক সংবাদ প্রচারের জন্যও ডিপিআইয়ের প্রতি আহ্বান জানান।