ভারতের বিমান শিল্প বিপর্যয়ের মুখে

করোনা মহামারিতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ভারতীয় সিভিল এভিয়েশন। সেন্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক এভিয়েশন জানাচ্ছে, ব্যাপক লোকসানের মুখে ভারতের বিমান ও প্রকৌশল শিল্প। এই বিপর্যয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং সংকটকাল দীর্ঘ হবে। এশিয়াটাইমস ডটকমের খবর।

করোনভাইরাস প্রতিরোধে ২৫ মার্চ থেকে ভারত সরকার ফ্লাইট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে । দুই মাস পর আবারও ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়। ২৫ মে যখন ফ্লাইট পরিচালনা আবারও শুরু হয় তখন মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ফ্লাইট উড়ানো সম্ভব হয়। পরে যা ৪৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিমান সংস্থাগুলো এখনও ৩৩ ভাগের নিচে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিটি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা এখনও মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ। ফ্লাইট ফাঁকা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি নানা সিদ্ধান্ত ও নিষেধাজ্ঞায় সিডিউলে খারাপ প্রভাব পড়ছে। বার বার ফ্লাইট বাতিলের ঘটনাও এর জন্য দায়ী।

ভারতের শীর্ষ অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থা ইন্ডিগো ও বিখ্যাত স্পাইসজেটে লোকসান অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে প্রোফিট চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিগোতে লোকসানের ক্ষতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে না। কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ ১.৫০ বিলিয়ন থেকে ১.৭৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। চরম যাত্রী সংকটের কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানি ব্যাপক লোকসানে রয়েছে। বলা যায় শিল্পটি একটি ব্রেকিং পয়েন্টে রয়েছে।

আসল চিত্র হল, করোনাকাল চলতে থাকলে ভারতের অধিকাংশ বিমান সংস্থার টিকে থাকার সক্ষমতা নেই। অনেক কোম্পানি আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় বিমানসংস্থাগুলো মহাামারিতে নানা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কোনো কোম্পানি জনবল ছাটাই করছে, আবার কেউ বেতন কমিয়েছে। ইন্ডিগোর মতো কোম্পানি কর্মীদের বেতনের ১০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও বিমান ফ্লাইটের আগের চেহারা ফিরে আসছে না। অন্যান্য বিমান সংস্থার অবস্থা আরও খারাপ। তারাও বেতন কাটছে টিকে থাকার জন্য। টাটার দুটি বিমান সংস্থা ভিস্তারা ও এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া তাদের কর্মীদের বেতন কাটার ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড় কর্মী ছাটাইও করেছে।

গো এয়ার তাদের ৯০ ভাগ স্টাফকে বেতন ছাড়াই ছুটি দিয়েছে। স্পাইস জেট কোম্পানিটি বিমান চালকদের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার অবস্থাও খারাপ। তারা প্রায় ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রায় ৬শ’ কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। করোনায় দেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত দিল্লী ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোটের যাত্রী পরিবহনে ধস নেমেছে। এ বছরের জুন মাসে বিমানবন্দরটি মাত্র ৯ হাজার ৩৩৫টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। অথচ একই সময়ে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৯৮৫টি। যা আগের তুলনায় ৬৭ ভাগ কমে গেছে। দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর হল মুম্বাইয়ের ছত্রপতি মহারাজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এটির ফ্লাইট কমে ৮৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুনে বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে ১৯ হাজার ৬৮২টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। এবছর একই মাসে মাত্র ২ হাজার ৫৯৪টি ফ্লাইট তারা পরিচালনা করেছে। চেন্নায় বিমানবন্দর ৮০ ভাগ, ব্যাঙ্গালোর ৭৪ ভাগ, হায়দরাবাদ ৭১ ভাগ এবং কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬১ ভাগ ফ্লাইট কমে গেছে।

রেটিং এজেন্সি ক্রিসিল জানাচ্ছে, ভারতীয় বিমান শিল্পে ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১.৩ ট্রিলিয়ন রুপি লোকসানের কথা তারা আগেই জানিয়েছিল। ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন আশঙ্কা করেছিল ভারতীয় বিমানে তিন মিলিয়ন কর্মীর চাকরি যাবে এবং করোনার কারণে এভিয়েশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাণিজ্য ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বে। অবস্থা এখন তেমনই শুরু হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.