সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার আহ্বান খালেদার

Khaleda_Zia_011462020891সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে সংকট নিরসনে আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘সরকার কাউকে নিরাপত্তা দিয়ে পারছে না। তবুও দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অথচ দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন খুন হচ্ছে। গুপ্তহত্যা ও অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।’

সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘এইভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। সেজন্য দেশের অভ্যন্তরে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করুন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে।’

শনিবার বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় কনভেনশনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

‘পথের বাধা সরিয়ে দাও’- শিরোনামে এই কনভেনশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জাগপার কাউন্সিলররা ও নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

দেশে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়েছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লাখ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাস কর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরনের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে।

‘আতংকের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠির নামে এই সব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এইসব ঘটনায় প্রতিটি নাগরিক আজ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত ও উদ্বিগ্ন। সরকার এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা তারা অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের উপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে প্রথম জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছিল দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সে সময়, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব, যশোরে উদীচীর সাংস্কৃতিক আয়োজন, ঢাকার পল্টনে সিপিবির জনসভায়, বানিয়াচংয়ের গির্জায়, খুলনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে বোমা হামলার ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছিল। তখনও প্রকৃত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের আড়াল করে আওয়ামী লীগ দায় চাপিয়েছে বিএনপি ও বিরোধী দলের উপর।’

বিএনপি তার শাসনামলে জঙ্গিবাদী তৎপরতাকে কঠোর হাতে দমন করেছিল বলেও এ সময় দাবি করেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখন আবার সেই জঙ্গিবাদের উত্থানের আলামত দেখে দেশবাসী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারাই জঙ্গিবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো স্বাভাবিকভাবে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না দাবি করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘তাদের রাখা হয়েছে শুধু গণবিচ্ছিন্ন ও অবৈধ সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য।

‘তারা সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচার বহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে। যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশের সন্ধানও মিলছে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানিত নাগরিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে একটি মামলার রায় নিয়ে এখন আমাদের দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কি সে মামলা? এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের একটি একাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশত মিলিয়ন ডলার জমা আছে।

‘এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? এভাবে তাদের আরো কত টাকা আছে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়? বাংলাদেশের মানুষ মনে করে এই টাকা বাংলাদেশের জনগণের টাকা। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু এ টাকার ব্যাপারে সরকার নীরব।’

এই টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তারা তাদের অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়।’

বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুবিচার ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শান্তি ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য যে সেখানে আছেন, সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিবেশীসহ সকল দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও মৈত্রীর সম্পর্ক চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব দেশের সঙ্গে সকল সমস্যা নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আমরা সবকিছুই করব সমমর্যাদার ভিত্তিতে। আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না।’

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির সভাপতি খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির সৈয়দ মুজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.