কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ উন্মোচিত হচ্ছে!

downloadআগামী ৩ মে তিন দিনের ঢাকা সফরে আসছেন বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবেল আল-মুবারাক আল-সাবাহ। মধ্যপ্রাচ্যের এই নেতার ঢাকা সফরের মধ্যদিয়ে কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানি ও সামরিক সহযোগিতার অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাবার সুযোগ উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কুয়েতের সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদি সামরিক চুক্তিসহ মোট ৩টি চুক্তি ও ১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, বিনিয়োগ বাড়ানো ও পারস্পারিক সুরক্ষা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও কুয়েত নিউজ এজেন্সির মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং সামরিক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এই ৩টি চুক্তি ও ১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বাইরেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবেল আল-মুবারাক আল-সাবাহ দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সর্ম্পক ও সহযোগিতার অন্যান্য বিষয় নিয়েও শীর্ষ বৈঠকে আলোকপাত করবেন। এরই মধ্যে রয়েছে কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশের সব পেশার শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত করা, এক্ষেত্রে ২০০০ সালের ‘জনশক্তি সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি’ পুনরুজ্জীবিত করে কুয়েতের সহযোগিতা বাড়ানো। বাণিজ্য সর্ম্পকোন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। কুয়েত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন— কেপিসি’র সহায়তায় বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের রিফাইনারি স্থাপন করা। দেশের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার জন্যে সরকারের বিশেষ কোনো প্রকল্পে তহবিল সরবরাহের বিষয়ে কুয়েত সরকারকে অনুরোধ করা। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে কালিয়াকৈরে স্থাপিত হাইটেক পার্কে সরাসরি অথবা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব— পিপিপি মডেলে কুয়েতকে বড় ধরনের বিনিয়োগে আহ্বান জানাবে সরকার। সামরিক খাতে সহযোগিতার আলোকে খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ শিপইর্য়াডে নৌবাহিনীর তৈরি করা আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ আমদানিতে কুয়েতকে অনুরোধ করা। আগামী ৩১ মে শেষ হতে যাওয়া কুয়েত সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সেনা সদস্যদের নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ নবায়নের বিষয়টি দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে আলোচনা করা। এছাড়াও ঢাকায় কুয়েত দূতাবাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্লটে ভবন নির্মাণের বিষয়টিও আলোচনা হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন—এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্যে দিয়ে আমাদের জনশক্তি রপ্তানির অপার সম্ভাবনা নতুন করে উন্মোচিত হবে বলে আশা করছি। তবে কুয়েত আমাদের বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ ও অর্থ সহায়তা করতে পারে বলেও মনে করেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা। জানা গেছে, কুয়েত প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে সামরিক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, তাতে বাংলাদেশের সামরিকখাতে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে বলে মনে করে সরকার। কুয়েতের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে উভয় দেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মধ্যে চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য বিরোধী কার্যক্রমে পারস্পারিক সহযোগিতা, অভিজ্ঞ সাংস্কৃতিক কর্মি বিনিময় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা করছে সরকার। বাংলাদেশ ও কুয়েত সরকারের মধ্যে প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রস্তাবিত এই খসড়া চুক্তির সারসংক্ষেপ ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠেছিল।

কিন্তু কুয়েত সরকার সম্প্রতি যে খসড়া প্রদান করেছে, তাতে কিছু ধারা নতুন সংযোজন করা হয়েছে। ফলে এটি স্বাক্ষর করার জন্য পুনরায় মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে কুয়েতের নতুন কিছু ধারা সংযোজনকে ইতিবাচক বলে মত দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। এরআগে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ওই সারসংক্ষেপটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেন।

২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বাক্ষরিত মন্ত্রিসভার জন্য তৈরি করা ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়- বাংলাদেশ মিলিটারি কন্টিনজেন্টের চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ৪ হাজার সৈন্য কুয়েতে প্রেষণে নিযুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক সংখ্যক জনবল নিতে চায় কুয়েত। একই সঙ্গে কুয়েতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে বিভিন্ন প্রকারের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে আগ্রহী। চুক্তিটি কার্যকর হলে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আরও অধিক সংখ্যক সদস্যকে কুয়েতে প্রেষণে নিযুক্ত করা যাবে। পাশাপাশি দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক আরও আন্তরিক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.